Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে মাদকাসক্তি জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ান

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২৫ জুন, ২০২১, ৩:৪৩ পিএম

বিশ্বব্যাপী মাদকাসক্তি মহামারির আকার ধারণ করেছে। মাদকাসক্তি পুরো সমাজব্যবস্থাকেই হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। মাদক থেকে উৎপন্ন হচ্ছে অর্থনৈতিক, পারিবারিক ও সামাজিক নানা অপরাধ, ভাঙ্গনের মুখে পড়ছে পরিবার ও সমাজ। ইসলাম ধর্মে মাদক সেবনকে হারাম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।কেউ যখন মদপান করে তখন সে মু’মিন থাকে না। মাদকের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে আইনের আওতায় আনতে হবে। আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে খতিব এসব কথা বলেন। স্বাস্থবিধি মেনে বিভিন্ন মসজিদে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে। বায়তুল মুকাররাম জাতীয় মাসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান আজ জুমার বয়ানে বলেন, করোনা মহামারির এ পরিস্থিতিতে আমাদের পরিপূর্ণরূপে আল্লাহর প্রতি সমর্পিত হতে হবে । দান-সাদাকা বৃদ্ধি করতে হবে । হাদিসে নির্দেশিত আমলগুলো আমাাদের পালন করতে হবে যেমন, ‘যখন তোমরা কোনো এলাকায় প্লেগের প্রাদুর্ভাবের সংবাদ শোনো, তখন সেই এলাকায় প্রবেশ কোরো না। আর তোমরা যেখানে অবস্থান করো, তথায় প্লেগের প্রাদুর্ভাব ঘটলে সেখান থেকে বেরিয়ে যেয়ো না।’ (বুখারি হাদিস : ৫৩১৭ )।

পেশ ইমাম বলেন, আমরা নিজের ক্ষতি করবো না অন্যের ক্ষতিও করবো না। বরং আমার পরস্পরের প্রতি ইহসানের আচরণ করবো। সাবান দিয়ে বারবার হাত ধুতে হবে, হাঁচি-কাঁশি দেয়ার সময় টিস্যু বা রুমাল দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে ফেলতে হবে, হাঁচি-কাঁশি দেয়ার পরপরই হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে এবং শারীরিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তার বিধি-বিধান সঠিকভাবে পালনের পাশাপাশি এ সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তৌফিক দান করুন। আমাদের দেশ ও জাতিকে এ ধরণের সমস্ত রোগ-বালা-মুসিবত থেকে আল্লাহ তায়ালা রক্ষা করুন। আমীন।

ঢাকার বাংলা মটরস্থ বাইতুল মোবারক জামে মসজিদের অনারারী খতিব অধ্যাপক মাওলানা ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, বিশ^ব্যাপী মাদকাসক্তি মহামারির আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশের পরিস্থিতিও অত্যন্ত নাজুক। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হিসাব মতে দেশ বর্তমান মাদকাসক্তের সংখ্য প্রায় কোটি। মাদকাসক্তি পুরো সমাজব্যবস্থাকেই হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। মাদক থেকে উৎপন্ন হচ্ছে অর্থনৈতিক, পারিবারিক ও সামাজিক নানা অপরাধ, ভাঙ্গনের মুখে পড়ছে পরিবার ও সমাজ। মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা লুপ্ত করা, সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা নষ্ট করা, লিভার সমস্যা, ফুসফুসে সংক্রমণ, কিডনি রোগ, হার্ট ও ত্বকে সমস্যা, হেপাটাইটিস, নারীদের সন্তান জন্মদানে অক্ষমতা, গর্ভপাত ইত্যাদিসহ নানা রকম দৈহিক ও মানসিক রোগের ও রোগ সৃষ্টির অন্যতম কারণ এই মাদক।
বেকারত্বসহ ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে হতাশাও তরুণ প্রজন্মকে এ পথে ঠেলে দিচ্ছে। মাদকের সহজলভ্যতাও এর ব্যাপক বিস্তারের অন্যতম কারণ। খতিব বলেন, ইসলাম ধর্মে মাদক সেবনকে হারাম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, হে বিশ্বাসীগণ! মদ, জুয়া আর মূর্তি ও ভাগ্য নির্ধারক তীর ঘৃণিত শয়তানী কাজ, তোমরা তা বর্জন কর, যাতে তোমরা সাফল্যমন্ডিত হতে পার। (সূরা মায়েদাহ- ৯০)।

মহানবী (সা.)-এর পবিত্র হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী কোনো ব্যক্তি যখন মাদক সেবন করে তখন ঐ ব্যক্তি আর মুমিন হিসেবে বিবেচিত হয় না। মহানবী (সা.) বলেন, যিনাকার যখন যিনায় লিপ্ত হয় তখন সে মু’মিন থাকে না। কেউ যখন মদপান করে তখন সে মু’মিন থাকে না। যে চুরি করে চুরি করার সময় মু’মিন থাকে না এবং কোন ছিনতাইকারী এমনভাবে ছিনতাই করে যে, মানুষ তার দিকে অসহায় হয়ে তাকিয়ে থাকে; তখন সে মু’মিন থাকে না। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং ৬৭৭২) ইসলামের দৃষ্টিতে মাদক সেবন শুধু নিন্দনীয়ই নয় বরং শাস্তিযোগ্য অপরাধও বটে। মাদকসেবীকে দুনিয়াতে চল্লিশটি মতান্তরে আশিটি বেত্রাঘাত করার নির্দেশ হাদীসে প্রদান করা হয়েছে। (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং ৪৩০৩)। দুনিয়ায় শাস্তিভোগের পাশাপাশি মৃত্যু পরবর্তী জীবনেও মাদকসেবীকে শাস্তি ভোগ করতে হবে।
বর্তমান সময়ে এমন অনেক মাদক পাওয়া যায় যা মহানবী (সা.)-এর সময়ে ছিলো না। যেমন ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল ইত্যাদি। ইসলামের দৃষ্টিতে এসব নব আবিষ্কৃত মাদকও হারাম হিসেবেই বিবেচিত হবে। কারণ নেশা উদ্রেককারী সকল বস্তুই মাদক এবং হারাম। এ সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, নেশা উদ্রেককারী প্রতিটি বস্তু মদের অন্তর্ভুক্ত এবং নেশা উদ্রেককারী প্রতিটি বস্তুই হারাম। (আবূ দাউদ শরীফ, হাদীস নং ৩৬৭৯)।

ইসলামে সৎ বন্ধু গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও।’ (সুরা তাওবা : ১১৯)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ তার বন্ধুর ধর্ম (স্বভাব-চরিত্র) দ্বারা প্রভাবিত হয়। সুতরাং সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে তা যেন অবশ্যই যাচাই করে নেয়।’ (তিরমিজি : ২৩৪৭)। মাদকের ছোবলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তরুণ ও যুব সমাজ। তরুণ প্রজন্মকে মাদকের ছোবল থেকে রক্ষা করতে সবচেয়ে বড় ভ‚মিকা পালন করতে পারে পরিবার। পরিবারের কর্তব্য সন্তানকে সুশিক্ষা ও নৈতিক আদর্শে বড় করে তোলা। যতো ব্যস্ততাই থাক, সন্তানকে সময় দেয়া, অসৎ সঙ্গ থেকে রক্ষা করা প্রতিটি বাবা-মার আবশ্যক কর্তব্য। এর পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রকেও মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। মাদকের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে আইনের আওতায় আনতে হবে। প্রতি বছর ২৬ জুন বিশ^ব্যপী জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে মাদক দিবস পালন করা হয়ে থাকে। সমাজে জনসচেতনতা সৃস্টি করে মাদক মুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র গড়তে সকলকেই কার্যকর ভ‚মকিা পালন করতে হবে।

মহান আল্লাহ আমাদেরকে মাদক মুক্ত ব্যক্তি,পরিবার,সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করার তৌফিক দান করুন। আমীন!
ঢাকার মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদ এর খতিব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, বিপদ-আপদ, বালা-মুসিবত ও রোগ-ব্যাধি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকেই এসে থাকে। আর তা আসে কখনও বান্দার কৃতর্মের (গুনাহ, পাপ, অন্যায় অবিচার) কারণে, কখনও মানুষকে পরীক্ষা করার জন্যে আবার কখনও দুনিয়া ও আখিরাতে বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে। কাজেই বিপদ, বালা মুসিবত, রোগ ব্যাধি ও মহমারিতে বিচলিত ও দু:শ্চিন্তাগ্রস্থ না হয়ে সর্ব প্রকার অন্যায় অবিচার, নির্যাতন নিপীড়ন, জুলুম অত্যাচার, সুদ ঘুষ দুর্নীতি, যেনা ব্যাভিচার, মারামারি কাটাকাটি, সন্ত্রাসী রাহজানি, খুন গুম হত্যাসহ যাবতীয় গুনাহ ও পাপের কাজ বর্জন পূর্বক ধৈর্য্যধারন করত: মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট একনিষ্ঠভাবে তওবা ইস্তেগফার ও দোয়া করতে থাকুন। আল্লাহ তায়ালা বিপদ, মুসিবত ও মহামারি দূর করে দিবেন।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, জলে-স্থলে যে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে তা মানুষের কৃতকর্মের দরুন। এর দ্বারা আল্লাহ তাদের কিছু কিছু কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা (সরল পথে) ফিরে আসে। (সুরা রূম, আয়াত নং ৪১)।
তিনি আরও বলেন: তোমাদেরকে যেসব বিপদাপদ স্পর্শ করে, সেগুলি তোমাদের কৃতকর্মের ফল। তবে আল্লাহ অনেক পাপ ক্ষমা করে থাকেন। (সূরা শূরা, আয়াত নং ৩০) । আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র ইরশাদ করেন, আর নিশ্চয়ই আমি তোমাদের পরীক্ষা নেব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, জান-মালের ক্ষতি ও ফলফলাদি এবং শস্যাদি বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে (হে রাসুল) সুসংবাদ দিন সেইসব ধৈর্যশীলদের যারা বিপদে বলে, আমরা তো আল্লাহর জন্যেই আর তাঁর কাছেই তো আমরা ফিরে যাব। (সূরা বাক্বারাহ, আয়াত নং ১৫৫-১৫৬)।
হযরত রাসুল (স. ) বিপদ থেকে রক্ষা পেতে তিনটি উপদেশ দিয়েছেন। রাসুল (সা.) বলেন, তিনটি কাজ করলে, বিপদ থেকে নিস্কৃতি পাওয়া যাবে। তা হলো অপ্রয়োজনীয় কথা (বাক্যালাপ) থেকে নিজকে সংযত রাখা। যথা সম্ভব ঘরে অবস্থান করা (লোকালয় অবস্থান থেকে বেঁচে থাকা) । অতীতের অন্যায়ের জন্য অনুতপ্ত হওয়া এবং ক্ষমার জন্য আল্লাহ তায়ালার দরবারে কান্নাকাটি করা। ( তিরমিজী শরীফ)। আল্লাহ তায়ালা সকলের বিপদ আপদ, বালা মসিবত ও রোগব্যাধি দূর করে দিন। আমীন!

দিনাজপুরের গোর-এ-শহীদ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা রেজাউল করিম আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে উলামায়ে কেরাম তাকে সব চেয়ে বেশি ভয় করে। (সূরা ফাতির আয়াত ২৮)। আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার এবং এলেম প্রাপ্ত আল্লাহ তাদের মর্যাদা সুউচ্চ করে দিবেন। (সূরা মুজাদালা আয়াত ১১)। রা সুল (সা.) ইরশাদ করেন কিয়ামতের আলামত সমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এলেম উঠে যাবে। অর্থাৎ আলেম দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে। মূর্খ লোকেরা সমাজের নেতৃত্ব দান করবে। তাদের কাছে মাসআলা জিজ্ঞেস করবে । মূর্খদের এলেম না থাকার পরেও ফতোয়া দিবে। এতে করে সে নিজেও পথভ্রষ্ট হবে ও জাতিকে পথ ভ্রষ্ট করবে। যিনা ভ্যাবিচার মদ্যপান বেড়ে যাবে। খতিব বলেন, হক্কানি আলেমরাই হলো জাতির বিবেক 'পথপ্রদর্শক, তাদের সম্মান করতে হবে। আল্লাহ সবাইকে সহি বুঝ দান করুন। আমীন!

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পেশ ইমাম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ