পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নিয়োগ দুর্নীতিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিলেন রেলওয়ের তৎকালিন জেনারেল ম্যানাজার (জিএম) ইউসুফ আলী মৃধা। তার বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে ৫ মামলায় হয়েছিল চার্জশিট। টানা তিন বছর কারাভোগের পর এখন তিনি জামিনে মুক্ত। মামলাগুলো এখনো চলমান। ২০১২ সালে তৎকালিন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্তর ব্যক্তিগত সহকারী ওমর ফারুক তালুকদার ৭০ লাখ টাকাসহ ধরাপড়ার সেই ঘটনা মানুষ এখনো বিস্মৃত হয়নি। এখনো তারার মতো জ্বল জ্বল করছে ‘ইউসুফ আলী মৃধা’র নাম। কারণ একটি নিয়োগ দুর্নীতির ঘটনায় এতোগুলো মামলা কারো ক্ষেত্রেই হয়নি।
আলোচিত এই ‘মৃধা’র মতোই আরেকজন হচ্ছেন ‘মৃধা মনিরুজ্জামান’। রেলওয়ের স্থলে এই মৃৃধা এখন আলোচিত পাট শিল্পে। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের হাত করে তিনি অভিনব কায়দায় একের পর এক হাতিয়ে নিচ্ছেন ব্যক্তিমালিকানাধীন পাট কল। ‘জিরো’ থেকে ‘হিরো’ এই মৃধা মনিরুজ্জামান এখন শত শত কোটি টাকার মালিক। মানুষ ঠকিয়ে মালিক হয়েছেন অন্তত ৭টি প্রতিষ্ঠানের একক মালিক। নামে-বেনামে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়।
দুদক তাকে বার বার স্পর্শ করার চেষ্টা করলেও সংস্থাটির দুর্নীতিগ্রস্ত শীর্ষ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় বেঁচে যান প্রতিবারই। একবার তার বিরুদ্ধে শুধু ৯৮ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের মামলা করে বাকি অবৈধ সম্পদের বৈধতা দেন এক দুদক কর্মকর্তা।
নতুন অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে নতুন করে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসতে শুরু করে তার উত্থানের বিস্ময়কর কাহিনী। এছাড়া র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব) এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) পৃথক মামলায় তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। সেসব তদন্তেও বেরিয়ে আসছে মৃধা মনিরুজ্জামানের অজানা অধ্যায়।
দুদকের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য মতে, লাভজনক ব্যবসা’র প্রলোভন দেখিয়ে বিত্তশালীদের নিয়ে প্রথমে একটি কোম্পানি করেন। পরে ওই প্রতিষ্ঠানটিকে অল্পসময়ের মধ্যে ‘অলাভজনক’ দেখাতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে ব্যবসার অন্য অংশীদারদের কাছে নামমাত্র মূল্যে শেয়ার কিনে রাখেন নিজেই। এভাবেই কৌশলে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেন ব্যবসায়িক পার্টনারদের অর্থ। ব্যবসা ‘অলাভজনক’ দেখালেও ব্যক্তিগতভাবে শত শত কোটি টাকার মালিক হন মৃধা মনিরুজ্জামান। ব্যবসায়ের এই বৈরীসময়েও তিনি আঙ্গুল ফুলে বটগাছ হয়ে ওঠেন।
অনুসন্ধান মতে, মনিরুজ্জামান এক সময় সরকারবিরোধী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। রাজনীতির এই বৈরী সময় তার জন্য যেন পোয়াবারো। গত এক যুগে তিনি ৩টি জুট মিলের মালিক হয়েছেন। বেনামে রয়েছে তার আরো ৪টি প্রতিষ্ঠান। অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে যুবলীগের সম্রাটরা ধরা পরলেও সাবেক এই ছাত্র নেতা এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে। দুদকের মামলায় মাঝে একবার কারাগারে যেতে হয়েছিল। কিন্তু বিপুল অর্থ ব্যয়ে তিনি কারামুক্ত হন দ্রুতই। বেরিয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে আত্মনিয়োগ করেন পুরনো প্রতারণা-পেশায়।
সম্প্রতি এক অংশীদার তার বিরুদ্ধে ৪৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও হত্যার হুমকির অভিযোগ এনে রাজধানীর বনানী থানায় মামলা (নং:১১৫৫(৫)/২ করেন। মামলাটি এখন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)তে তদন্তাধীন। বিপুল অর্থ ব্যয়ে এ মামলায় তিনি গ্রেফতার এড়িয়ে চলছেন বলে জানা গেছে।
দুদকের অনুসন্ধান থেকে জানা যায়, মৃধা মনিরুজ্জামানের পিতা আব্দুল হালিম মৃধা ছিলেন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। উত্তরাধিকার সূত্রে তেমন কিছুই পাননি তিনি। ছাত্রজীবনেই একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। সে সময় পদ-পদবি ব্যবহার করে মৃধা কিছু অর্থকড়ির মালিক হন। ওই টাকা দিয়ে আরামবাগে ‘অনিন্দ প্রিন্টার্স’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। কয়েকজন বন্ধুকে ‘পার্টনার’ নেন তিনি। এসেই প্রতিষ্ঠান থেকে নানাভাবে অর্থ তসরুপ শুরু করেন মৃধা মনিরুজ্জামান। এ কারণে তার পার্টনাররা ছাপাখানা ব্যবসা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেন। পরে তিনি ‘প্রাইড প্যাকার্স, দেশ পেপার অ্যান্ড প্যাকেজিং, প্রাইড জুট মিল ইন্ডাস্ট্রিজ ও অ্যাডভান্স সোয়েটার নামে আরো ৪টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। প্রতারণার কৌশল হিসেবে সেসব প্রতিষ্ঠানেও জ্জ জন বিত্তশালীকে পার্টনার নেন।
প্রতারণা ও অনিয়মের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ বাগিয়ে নেন মৃধা মনির। পার্টনারদের কাঁধে ব্যাংকের দায়দেনা রেখে কৌশলে কেটে পড়েন মৃধা মনির। তবে প্রাইড জুট মিলটি রাখেন নিজের কব্জায়। জোট সরকারের পতনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে কিছুদিনের জন্য গা ঢাকা দেন তিনি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে প্রথম দিকে চুপচাপ থাকেন। ক্ষমতাসীন দলের কিছু লোকজনকে ‘বন্ধু’ বানিয়ে শুরু করেন পুরোদমে প্রতারণা।
আবারও ৩/৪ জন পার্টনার নিয়ে গড়ে তোলেন ‘গোল্ডেন জুট মিল’। এবারও পার্টনাররা অন্ধ বিশ্বাসে মিল পরিচালনার দায়িত্ব দেন তার ওপর। প্রথমে ওই জুট মিলে মৃধা মনিরুজ্জামানের মাত্র ১০ শতাংশ শেয়ার থাকলেও চাতুর্যের আশ্রয় নিয়ে বাগিয়ে নেন ‘ব্যবস্থাপনা পরিচালক’র পদ। পদকে কাজে লাগিয়ে তিনি শুরু করেন স্বেচ্ছাচারিতা। নিম্নমানের পাট বেশি দামে কেনেন। নিজেরই বেনামী ৬টি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে এসব পাট ‘ক্রয়’ দেখান। নানাভাবে প্রতারণা ও অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল অংকের অর্থ হাতিয়ে নেন মনির।
কিন্তু প্রতারণার কৌশল হিসেবে দিনের পর দিন জুট মিলকে লোকসান দেখান তিনি। এভাবে পার্টনারদের মধ্যে কৃত্রিম হতাশা সঞ্চার করেন। এই কৌশলে পার্টনারদের কাছ থেকে ৪০ শতাংশ শেয়ার কিনে নেন নামমাত্র নামে। এই শেয়ার নিজের গড়া কাগুজে প্রতিষ্ঠান ‘পিজাইন’র কর্মচারী পুত্র মেহেদী জামান সনেটের নামে কেনেন। এখন প্রাইড ও গোল্ডেন জুট মিলে মনিরুজ্জামান ও সনেটের ৫০ শতাংশ করে মালিকানা। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটির শতভাগ মালিকানা মৃধা মনিরের নিজের হাতেই।
এর মধ্যে ক’বছর আগে জনৈক সউদী প্রবাসী এক ব্যবসায়ীকে জুট মিলে বিনিয়োগে বিশাল সম্ভাবনার কথা বলে তাকে প্রধান অংশীদার করেন। মূলত ওই প্রবাসী ব্যবসায়ীর অর্থেই আরেকটি জুট মিল গড়ে তোলেন তিনি। যা’ আগের দু’টি জুট মিলের চেয়ে ৩/৪ গুণ বেশি উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন। এই জুট মিলে কোনো অর্থ বিনিয়োগ না করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগ দিয়ে কয়েক বছরে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেন মৃৃধা। নিজের নিয়ন্ত্রণ রাখতে সবগুলো জুট মিলই মনিরুজ্জামান নিজ গ্রামের বাড়ির আশপাশে করেছেন। ছোট ভাই বদিউজ্জামান বাবলুও একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাবলু এবং তার আত্মীয়-স্বজনদের এসব কারখানায় চাকরি দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ।
ওই জুট মিল প্রতিষ্ঠাকালে জমি ক্রয় থেকে মেশিনারিজ আমদানি, অবকাঠামো নির্মাণসহ সব ক্ষেত্রেই জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেন মৃধা মনির। শুরুতে বিষয়টি পার্টনাররা টের না পেলেও দুদকের মামলায় কারাগারে গেলে বেরিয়ে আসে সব তথ্য। অন্য পার্টনাররা এ সময় একটি অডিট করান। তাতে বেরিয়ে আসে, জুট মিল থেকে মনিরুজ্জামান ৪৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। এ ঘটনায় করা একটি মামলা সিআইডি তদন্ত করছে। দুদকও অন্তত: ৩০ জন পাট সরবরাহকারীর সাক্ষ্য নিয়েছে। তাদের কাছ থেকে ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া প্রমাণ মেলে।
এদের মধ্যে পাট সরবরাহকারী আশরাফুল ইসলাম জানান, দিনের পর দিন পাট সরবরাহ করলেও তাকে একটি টাকাও পরিশোধ করেননি মৃধা মনির। দুদক অনুসন্ধানে উঠে আসা তথ্য, সিআইডি’র মামলা ইত্যাদি বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে একাধিকবার চেষ্টা করা হয়। প্রতিবারই মৃধা মনিরুজ্জামানের মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে নতুন করে সম্পদ অনুসন্ধান সম্পর্কে জানতে চাইলে সংস্থাটির সচিব ড.মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, কারো বিষয়ে নতুন কোনো তথ্য হাতে এলে পুন:অনুসন্ধান হয়। এ ঘটনাটি হয়তো তেমনই। অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।