নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
এ যেন নব্বইয়ের দশকের মোহামেডান ও আবাহনীর লড়াই। মাঠের বাইরে উত্তেজনাটা আগের মতো না থাকলেও ঠিকই মাঠের উত্তাপ টের পাওয়া গেল গতকাল। আর এর সবকিছুই এলো দেশের সেরা তারকা সাকিব আল হাসানকে ঘিরে। মাঠে আম্পায়ারের এক ভুল সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করতে গিয়ে লিপ্ত হলেন তর্কে। স্বল্প সংখ্যক দর্শকের সঙ্গেও চলল উত্তেজনা। আর এমন ম্যাচে চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী আবাহনীর বিপক্ষে ৫ বছর পর জয় পেল মোহামেডান। ২০১৫-১৬ মৌসুমের পর এই প্রথম জয় পেল ঐতিহ্যবাহী দলটি।
তবে ম্যাচের জয়-পরাজয় ছাপিয়ে মোটা দাগে চোখে পড়েছে আম্পায়ারদের নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্ব। মর্যাদার এই লড়াইয়ে যেন আবাহনীকে জেতাতেই মাঠে নেমেছিলেন তারাও। সেটি করতে গিয়েই আরেকটি কলঙ্কিত অধ্যায়ের রচনা করলেন আম্পায়াররা। বিগত কয়েক বছর ধরেই ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে বরাবরই আম্পায়ারদের পক্ষপাতিত্বের সুবিধা নেয় প্রভাবশালী ক্লাব আবাহনী। একটি মহল এই ইস্যুটিকে রাজনৈতিকভাবেও ব্যাবহার করার চেষ্টা করছে। কথিত আছে, আবাহনী বর্তমান সরকারের মদদপুষ্ট ক্লাব, তাদের জেতাতে পারলেই সরকারের উপর মহলের শুভদৃষ্টিও পাওয়া যায়। আর সে কারণেই ফুটবল কিংবা ক্রিকেটে রেফারি কিংবা আম্পায়াররাও উঠে-পড়ে লাগেন ম্যাচে তাদের সুবিধা দিতে। অথচ এটি সম্পূর্ণ একটি ভ্রান্ত ধারণা, মিথ্যা প্রচার। শুধুমাত্র, নিজেদের স্বার্থ আদায়ের উদ্দেশ্যেই আবাহনীর মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দলের ভাবমর্যাদা ববহার করে সরকারের উপরের মহলের বাহবা পেতেই এই অপপ্রচার চালাচ্ছে একটি মহল। শুধু মোহামেডানই নয়, কোনো আসরে শিরোপা জয়ের বাধা হয়ে দাঁড়ালে অন্য যে কোনো ক্লাবের বীপরিতেও চলে আবাহনীর হয়ে নির্লজ্জ পক্ষাপাতিত্ব। ঠিক তখন এমন একটি জোরালো প্রতিবাদ যেন সময়ের দাবীতে পরিণত হয়েছিল।
ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসের ঘটনা। আগে ব্যাটিং করে ১৪৫ রান করে মোহামেডান। সাদামাটা লক্ষ্য নিয়ে বোলিংয়ের শুরুটাও ছিল দারুণ। মাত্র ২১ রানে আবাহনীর ৩টি উইকেটও তুলে নিয়েছিল সাকিবের দল। বৃষ্টির আগে আরেকটি উইকেট পেলে ডি এল পদ্ধতিতে জয়ের ব্যপারে নিশ্চিত থাকতে পারতো মোহামেডান। উল্টোদিকে নিশ্চিত পরাজয় যেনেই কি-না আম্পায়াররাও দেখতে শুরু করলেন আবাহনীর স্বার্থ। আর একটি উইকেটের জন্য যখন মরিয়া হয়েই খেলছিল মাঠের লড়াইয়ে নামা ‘নতুন’ এক মোহামেডান। দায়িত্ব নিয়েই ক্লাবটির চেহারা পাল্টে দিয়েছেন নতুন কমিটির সদস্যরা। আর তার সুফলও পেতে শুরু করেছে ঐতিহ্যবাহী দলটি। আকাশে তখন ঘন কালো মেঘ। দ্রুতই বলগুলো করছিলেন সাকিব। একটি উইকেট পেলেই হয়তো পাঁচ বছর চিরপ্রতিদ্ব›দ্বীদের বিপক্ষে জয়টা পেতে পারে তারা।
পঞ্চম ওভারের শেষ বলটি দারুণ করেছিলেন সাকিব। ওই প্রান্তে ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ঠিকভাবে লাগাতে পারেননি। এলবিডাব্লিউর জোরালো আবেদন করে পুরো দলই। খালি চোখেও মনে হয়েছিল আউটই ছিল। কিন্তু আম্পায়ার সাড়া না দিলে এক মুহ‚র্ত অপেক্ষা না করে ক্ষেপে লাথি মেরে উইকেটই ভেঙে ফেলেন সাকিব। এরপর আম্পায়ার ইমরান পারভেজের সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেন দেশের ক্রিকেটের এই ‘পোস্টারবয়’। পরে সতীর্থরা তাকে শান্ত করে নিয়ে যান। তখন আবাহনীর সংগ্রহ ছিল ৩ উইকেটে ২১ রান। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি মাথায় রেখেই পরের পাঁচ বলে ১০ রান যোগ করতেই নামে বৃষ্টি। এ সময়ে মিডঅফে ফিল্ডিং করছিলেন সাকিব। দৌড়ে এসে তুলে নেন স্ট্যাম্প। এরপর আছাড় মারেন। সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন আরেক আম্পায়ার মাহফুজুর রহমান। কিছু একটা বলতে শুরু করায় তার সঙ্গেও তর্কে লিপ্ত হন মেজাজা হারানো মোহামেডান অধিনায়ক। এক পর্যায়ে সতীর্থরা তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। বৃষ্টির বেগ বাড়তে থাকায় মাঠ ছেড়ে সবাই তখন ফিরছেন ড্রেসিং রুমে। সাকিবের এমন আচরণে আবাহনী ড্রেসিং রুম থেকে তেড়ে এসেছিলেন আবাহনী কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনও। তবে তাকে মোহামেডান ক্রিকেটার শামসুর রহমান শুভ গিয়ে শান্ত করেন।
পরে পসিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ৮১ মিনিট পর মাঠে ফেরে ম্যাচ। জয়ের জন্য আবাহনী পায় ৯ ওভারে দুরূহ ৭৪ রানের লক্ষ্য। তবে মুশফিকের দল থামে ৬ উইকেটে ৪৪ রানে। টানা তিন হারের পর জয়ে ফিরল মোহামেডান। আর তাতে ৫ বছর পর চীরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে হারাল ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি। সময়ের ফেরে আবাহনী-মোহামেডান ক্রিকেট দ্বৈরথ রঙ হারালেও সাকিবের কল্যাণে এদিন যেন অতীতের উত্তেজনাই ফিরল মাঠে। ঠিক যেন নব্বই দশকের একটি ম্যাচেরই পুন:মঞ্চায়ন হলো হোম অব ক্রিকেটে!
সাকিব শুধু দেশেরই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গণেও দেশের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। তার মতো অভিজ্ঞ একজন ক্রিকেটারের সঙ্গে আম্পায়ারের বাক-বিতন্ডা অবশ্যই দৃষ্টিকটু। তবে কোন সময় একজন দেশসেরা ক্রিকেটার আম্পায়ারদের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হন সেটিও যুগিয়েছে ভাবনার খোড়াক। তাইতো নিজের অবস্থান পরিস্কার করে ম্যাচ শেষে এসব ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষমাও চেয়েছেন সাকিব। লিখেছেন, ‘প্রিয় ভক্ত ও অনুসারীরা, মেজাজ হারিয়ে ম্যাচের মুহূর্ত নষ্ট করায় আমি খুবই দুঃখিত। বিশেষ করে যাঁরা বাসা থেকে খেলা দেখছেন। আমার মতো অভিজ্ঞ এক ক্রিকেটারের এভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো ঠিক না, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মাঝে মাঝে অবিশ্বাস্য কিছু ঘটে যায়। যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমি আমার দল, ম্যানেজমেন্ট, টুর্নামেন্টের কর্মকর্তা ও আয়োজক কমিটির কাছে মানবিক এই ভুলের জন্য ক্ষমা চাইছি। আশা করি, ভবিষ্যতে এমন কিছু আর কখনো করব না। ধন্যবাদ, সবাইকে ভালোবাসি।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।