Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে আবারো অনৈতিক ট্রেডিংয়ের আশঙ্কা

প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ব্রোকারেজ হাউজগুলোর প্রতিদিনকার সম্মিলিত লেনদেন বর্তমানের খরার বাজারেও ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার কম-বেশি হচ্ছে। একসময় ছিল যখন পৃথকভাবে একেকটি হাউজেই লেনদেন ছাড়িয়ে যেত ১০০ কোটি টাকার ওপর। আর তখন অনেক ক্ষেত্রে হাউজে ট্রেডারদের ভুল কিংবা অনৈতিকতার কারণে লেনদেনে বড় ধরনের ঘাপলা হতো। কিছু অসৎ বিনিয়োগকারীর যোগসাজশে ট্রেডারগণ বিএসইসির বিধিবিধান লঙ্ঘন করে অনৈতিক লেনদেনে জড়িয়ে পড়ত, যার খেসারত দিতে হতো ব্রোকারেজ হাউজগুলোর মালিকদের। এসব ঘটনায় অনেক বড় বড় হাউজকেও জরিমানা গুনতে হয়েছে। এর প্রতিবিধান করতে গিয়ে বিএসইসির উদ্যোগে ২০১০ সালের পর হাউজগুলোতে নিয়মিত পরিদর্শনে যেতো সংস্থাটির একটি বিশেষ টিম। এর ফলে হাউসগুলোর কমপ্লায়েন্স পরিপালনের অনেক ঘাটতি কেটে গিয়েছিল। কিন্তু গত এক বছর ধরে ওই টিমের কোনো পরিদর্শন না থাকায় হাউজগুলোতে আবারো নানা ধরনের অনিয়ম সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় হাউজগুলোর মেম্বারগণ তাদের নিজেদের স্বচ্ছতার প্রশ্নেই ওই টিমের আবারো সক্রিয়তা প্রয়োজন বলে মনে করছেন। তবে তাদের অনুরোধ, পরিদর্শনের নামে যাতে বাজারে কোনো আতঙ্ক সৃষ্টি না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রেখে এ কাজটি করতে হবে। আর বিশ্লেষকরা বলছেন, নিজেদের বিধান পরিপালনে বিএসইসি নিয়মিত ব্রোকারেজ হাউজ পরিদর্শন না করে প্রকারন্তরে অনিয়মেই সহায়তা করছে বলে তারা মনে করছেন।
উল্লেখ্য দেশের সিকিউরিটিজ আইনে পুঁজিবাজারে কাজের স্বচ্ছতা যাচাই ও কমপ্লায়েন্স পরিপালন বিষয়ে ব্রোকারেজ হাউজগুলোয় পরিদর্শনের বিধান রয়েছে। সে অনুযায়ী নিয়মিত ও বিশেষ পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে বিএসইসি।
সূত্রে জানা গেছে, ব্রোকারেজ হাউজগুলোর অনুরোধে পরিদর্শন কার্যক্রম প্রায় বছরখানেক যাবৎ বন্ধ রেখেছে বিএসইসি। কারণ হিসেবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ব্রোকারেজ হাউজ পরিদর্শনে গেলে লেনদেনে প্রভাব পড়ে। বর্তমান বাজারের অবস্থা ভাল না, তাই বাজার উন্নয়নের কথা চিন্তা করে পরিদর্শন বন্ধ রাখার জন্য হাউজগুলোর পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। আর এজন্য ব্রোকারেজ হাউজ পরিদর্শন বন্ধ রয়েছে। ব্রোকারেজ হাউজগুলো নিয়মিত পরিদর্শন বন্ধের পক্ষে নয় বাজার বিশ্লেষকরা। রুলস অ্যান্ড রেজুলেশন অনুযায়ী পরিদর্শন নিয়মিত হওয়া উচিত। নিয়মিত পরিদর্শন বন্ধ থাকায় ব্রোকারেজ হাউজগুলোয় সিকিউরিটিজ আইন পরিপালনে ঘাটতি ও গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ ছিদ্দিকী বলেন, ব্রোকারেজ হাউজগুলো নিয়মিত পরিদর্শন করা উচিত। কাজের স্বচ্ছতা যাচাই ও কমপ্লায়েন্স পরিপালনের বিষয় রয়েছে। আর বিএসইসিই’রও এ বিষয়ে দায়বদ্ধতা রয়েছে। এছাড়া বাজারে শেয়ারের দরে কেউ মেনুপুলেট করে কিনা তা তদারকি করা বিএসইসির দায়িত্ব। পরিদর্শন বন্ধ রাখার বিষয়ে অবশ্য অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান উর-রশিদ চৌধুরী বলেন, শুধু বিশেষ পরিদর্শন ও অভিযোগের ভিত্তিতে পরিদর্শন না করে নিয়মিত পরিদর্শন করা উচিৎ। পরিদর্শন না হওয়ায় বিএসইসি অনিয়মে সহায়তা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, বিএসইসির তৎপরতা কম হলে বিনিয়োগকারীদের প্রতারণার শিকার হওয়ার আশংকা রয়েছে। এজন্য নীতি-নৈতিকতার সাথে বিনিয়োগকারীদের পক্ষে বিএসইসির কাজ করা উচিত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছু কিছু হাউজ দেড় বছর আগে পরিদর্শন করেছে বিএসইসি। এর পর আর কোনো পরিদর্শক দল সেসব হাউজে যায়নি। র‌্যাপিড সিকিউরিটিজের জেনারেল ম্যানেজার সৈয়দ ইকবাল হোসেন জামিল বলেন, গত বছর আমাদের হাউজ পরিদর্শন করেছে বিএসইসি। এরপর বিএসইসির কোনো পরিদর্শক দল আর আসেনি। তিনি বলেন, আসলে বাজার পরিস্থিতির কারণে পরিদর্শন হচ্ছে না। কারণ পরিদর্শনে আসলে সেদিন হাউজে লেনদেন কমে যায়। এছাড়া বছরে একটা হাউজ একবারের বেশি পরিদর্শন করাও বিএসইসির পক্ষে সম্ভব না। একটা হাউজ পরিদর্শনে এক সপ্তাহের মত সময় লেগে যায়।
আরেক ব্রোকারেজ হাউজ মিঞা আবদুর রশিদ সিকিউরিটিজের ম্যানেজার শেখ ওয়াহিদুজ্জামান স্বাধীন বলেন, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাদের হাউজ পরিদর্শন করেছে বিএসইসি। প্রায় দেড় বছর হয়ে গেছে আর পরিদর্শনে আসেনি। এপেক্স সিকিউরিটিজের কর্মকর্তা মনির জানান, তাদের হাউজও এক বছর আগে পরিদর্শন হয়েছে। তবেবি এসইসি পরিদর্শনে না গেলেও ডিএসই পরিদর্শনে গিয়েছে।
জানা গেছে, ব্রোকারেজ হাউজগুলোর কমপ্লায়েন্স তদারকিতে দুই ধরনের পরিদর্শন পদ্ধতি রয়েছে বিএসইসির। এর মধ্যে প্রথমটি হলো, কোনো ব্রোকারেজ হাউজ বা স্টক ডিলারের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে বিএসইসির পরিদর্শন, যাকে বিশেষ পরিদর্শন বলা হয়। দ্বিতীয়টি হলো, যেকোনো সময় কারো অভিযোগ ছাড়াই কমিশন কর্তৃক ব্রোকারেজ হাউজ ও স্টক ডিলারের প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন।
নিয়মিত পরিদর্শনের আওতায় সাধারণত হাউজগুলোয় গ্রাহকদের সমন্বিত হিসাবে টাকা আছে কিনা, ব্রোকারেজ হাউজগুলো সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) ব্যাক অফিসের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা হয়। এ পরিদর্শনকালে ব্রোকারেজ হাউজের ওয়ার্ক স্টেশনের নির্ধারিত জায়গা ও অনুমোদিত প্রতিনিধি দ্বারা পরিচালিত হয় কিনা তা যাচাই করা হয়। এর বাইরে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর ক্লায়েন্ট পেমেন্টের তথ্য যাচাই-বাছাই করে নিবন্ধন ছাড়া কোনো হিসাবে লেনদেন হচ্ছে কিনা, কোনো হিসাবে কমিশন নির্ধারিত ৫ লাখ টাকার বেশি নগদে গ্রহণ হচ্ছে কিনা, কিংবা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন হালনাগাদ করা আছে কিনা, তা তদারকি করা হয়। এছাড়া কোনো ব্রোকারেজ হাউজ তাদের পরিচালকদের নিয়মবহির্ভূত মার্জিন ঋণ দিয়েছে কিনা বা মার্জিন ঋণ বিতরণে সিকিউরিটিজ আইন পরিপালন করা হয়েছে কিনা, তা পর্যবেক্ষণ করা হয়। Ñওয়েবসাইট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে আবারো অনৈতিক ট্রেডিংয়ের আশঙ্কা
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ