পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
দেশীয় সব ধরনের টাইলস ও স্যানিটারি পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে আরোপিত শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমইএ)। পাশাপাশি বিদেশে তৈরি টাইলস আমদানি পর্যায়ে ন্যূনতম ট্যারিফ মূল্য হ্রাস না করে আরো বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে তারা।
বৃহষ্পতিবার (১০ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট সিরাজুল ইসলাম মোল্লার সভাপতিত্ত্বে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সাধারন সম্পাদক ইরফান উদ্দিন। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মইনুল ইসলাম, পরিচালক রাশেদ মাইমুনুল ইসলাম, আজিজুল হাকিম সুমন এবং রুসলান নাসির।
বিসিএমইএ সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, যেখানে দেশিয় পণ্যের উপরে উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং বিক্রয়কালীন সময়ে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর আরোপ রয়েছে, সেখানে তৈরি পণ্যের আমদানি পর্যায়ে ট্যারিফ মূল্য হ্রাস করার ফলে দেশিয় পণ্য অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবে। এতে করে এ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ কমে যাবে, ফলে কর্মসংস্থান সুযোগের সম্ভাবনাও ক্ষীণ হবে। বাজার সংকুচিত হলে সিরামিক খাতটি রুগ্ন শিল্পখাত হিসাবেও পরিণত হতে পারে। এতে আর্থিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে। যেখানে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে সিরামিক শিল্প এমনিতেই টিকে থাকতেই হিমসিম খাচ্ছে। আর তাই দেশিয় সিরামিক শিল্প সুরক্ষায় বিদেশে তৈরি টাইলস্ আমদানি পর্যায়ে ন্যূনতম ট্যারিফ মূল্য হ্রাস না করে আরো বাড়ানো জরুরি।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরকার দেশিয় পণ্য উৎপাদনে বেশি নজর দেয়ার কথা বলেন। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশ থেকে তৈরি টাইলস আমদানিতে সর্বনি¤œ ট্যারিফ মূল্য বর্গমিটার প্রতি ১ ডলার পর্যন্ত কমানো হয়েছে। এতে প্রতি বর্গফুটে প্রায় ১২টাকা মূল্য হ্রাস পাবে। যা আমদানিকে আরো উৎসাহিত করবে এবং এটি সরাসরি দেশীয় পণ্যের বিকাশে অন্তরায় হবে। তিনি বলেন, বিগত বছরেও টাইলস আমদানিতে একইভাবে সর্বনি¤œ ট্যারিফ মূল্য বর্গমিটার প্রতি ১ ডলার পর্যন্ত হ্রাস করা হয়েছিল। পর পর দুই বছরে প্রতি বর্গফুটে প্রায় ২৪ টাকা ট্যারিফ মূল্য হ্রাসের ফলে স্থানীয় বাজারে আমদানিকৃত টাইলসের বিক্রয় মূল্য দেশীয় উৎপাদিত পণ্যের চেয়ে কমে যাবে।
একসময় প্রায় শতভাগ আমদানি নির্ভর শিল্পের প্রায় ৮০ ভাগ বর্তমানে দেশেই উপদন হয় জানিয়ে সিরাজুল ইসলাম বলেন, একসময় এ শিল্প পুরোটাই আমদানিনির্ভর ছিল। বর্তমানে ৮০ শতাংশের বেশি টাইলস, ৬৫ শতাংশ স্যানিটারি ও ৭৫ শতাংশ টেবিলওয়্যার খাত দেশেই উৎপাদন হচ্ছে। দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব হচ্ছে। টেবিলওয়্যার খাতে ২০১৯ সালে ৫০০ কোটি টাকার পণ্য রফতানি করা হয়। যদিও করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে তা কিছুটা কম হয় অর্থাৎ ৪২০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে।
বিদেশে তৈরি টাইলস আমদানি পর্যায়ে ন্যূনতম ট্যারিফ মূল্য হ্রাস না করে আরো বাড়ানোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, যেখানে দেশীয় পণ্যে উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং বিক্রয়কালীন সময়ে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর আরোপ রয়েছে, সেখানে তৈরি পণ্যের আমদানি পর্যায়ে ট্যারিফ মূল্য হ্রাস করার ফলে দেশীয় পণ্য অসম প্রতিযােগিতার সম্মুখীন হবে। এর ফলে বাজার সংকুচিত হলে সিরামিক খাতটি রুগ্ন শিল্প খাত হিসেবেও পরিণত হতে পারে। এতে আর্থিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে। সংগঠনটির সভাপতি বলেন, দেশীয় সব টাইলস এবং স্যানিটারি পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে যথাক্রমে ১৫ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপিত রয়েছে। যদিও প্রস্তাবিত বাজেটে শুধুমাত্র দেশীয় স্যানিটারি লং প্যান উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। আমাদের প্রস্তাব দেশীয় সব প্রকারের টাইলস এবং স্যানিটারি পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে আরােপিত সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হোক। এ সময় তিনি সিরামিকের সকল কাঁচামাল আমদানিতে ৩০ শতাংশ অবচয় ধরে আমদানি শুল্ক পরিশোধের দাবি জানান।
বিসিএমইএ সাধারন সম্পাদক ইরফান উদ্দিন বলেন, দেশিয় টাইলস্ এবং স্যানিটারি পণ্য এখন কোন বিলাসী পণ্য হিসাবে বিবেচিত হয় না। স্বাস্থ্যসম্মত গৃহনির্মাণে এসব পণ্য অপরিহার্য গৃহনির্মাণ উপকরণ হিসাবে ব্যবহার হয়। দেশিয় পণ্যের উপরে উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে আরোপিত সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হলে মূল্য হ্রাস পাবে, ফলে ব্যবহারের মাত্রাও বাড়বে। যার ফলে বিক্রয় বাড়ানোর মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আয়ের পরিমানও বাড়বে। আর তাই দেশিয় সব ধরনের টাইলস্ এবং স্যানিটারি পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে আরোপিত সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার জরুরি। প্রস্তাবিত বাজেটে অনেক কর ছাড় দেয়াসহ দেশীয় শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়ায় অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাজেটে সিরামিক শিল্প রক্ষায় আমাদের প্রস্তাব প্রতিফলিত হয় নাই। উপরন্তু সরকারের অগোচরেই স্থানীয় সিরামিক শিল্পের জন্য ক্ষতির সিদ্ধান্ত আরোপ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে উদ্যোক্তাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় রপ্তানি এবং আমদানি-বিকল্প পণ্য হিসেবে দেশে সিরামিক সেক্টরে দেশি-বিদেশি প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৬৮টি সিরামিক টেবিলওয়্যার, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ খাতে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী নিয়াজিত রয়েছেন এবং পরোক্ষভাবে ৫ লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।