পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম উলামাদের নিয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীকে আমীর ও আল্লামা নূরুল ইসলামকে মহাসচিব ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠাতা আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর (রহ.) বড় ছেলে মো. ইউসুফকেও নতুন কমিটিতে সহকারী মহাসচিব করা হয়েছে। তবে বাদ পড়েছেন আল্লামা শফীর পুত্র বিতর্কিত মাওলানা আনাস মাদানী, মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহী এবং হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব কারাবন্দি মাওলানা মামুনুল হক ও সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ অনেকেই। প্রেস ব্রিফিংয়ে ১৬ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি এবং ৯ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় খাস কমিটিও ঘোষণা করা হয়। উক্ত খাস কমিটি ‘মজলিসে শুরা’ হিসেবে বিবেচিত হবে।
গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর খিলগাঁওস্থ মহাসচিবের অস্থায়ী কার্যালয় জামিয়া ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম মাদরাসা সম্মেলন কক্ষে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ মহাসচিব আল্লামা হাফেজ নূরুল ইসলাম এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করেন। প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, নায়েবে আমীর হযরত মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, হযরত মাওলানা আবদুল হক মোমেন শাহী, হযরত মাওলানা সালাহ উদ্দীন নানুপুরী, প্রিন্সিপাল মীযানুর রহমান চৌধুরী পীর সাহেব দেওনা, হযরত মাওলানা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী সিলেট, হযরত মাওলানা ইয়াহইয়া হাটহাজারী মাদরাসা, যুগ্ম মহাসচিব হযরত মাওলানা সাজেদুর রহমান বি-বাড়িয়া, হযরত মাওলানা আব্দুল আউয়াল নারায়নগঞ্জ, হযরত মাওলানা আনোয়ারুল করীম যশোর, হযরত মাওলানা আইয়ুব বাবু নগরী, সহকারী মহাসচিব হযরত মাওলানা জহুরুল ইসলাম মাখজান, সহ-অর্থসম্পাদক হযরত মাওলানা মুফতী হাবিবুর রহমান কাসেমী নাজিরহাট, প্রচার সম্পাদক হযরত মাওলানা মুহিউদ্দীন রব্বানী সাভার ঢাকা, সহ-প্রচার সম্পাদক হযরত মাওলানা জামাল উদ্দীন কুড়িগ্রাম, দাওয়া বিষয়ক সম্পাদক হযরত মাওলানা আবদুল কাইয়ূম সোবহানী ঢাকা ও সহকারী দাওয়া সম্পাদক হযরত মাওলানা ওমর ফরুক নোয়াখালী।
আল্লামা নূরুল ইসলাম এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বর্তমান কমিটি ঘোষণা করতে পেরে আমরা খুশি। তবে ধর্মীয় দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারব কি-না তা’এখনো বলতে পারছি না। তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত সকল আলেম-উলামাদের মুক্তির দাবি দফায় দফায় করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় বৈঠক করেও কারাবন্দি আলেমদের মুক্তি চাওয়া হয়েছে। মোদি বিরোধী আন্দোলনে ১৭ জন মানুষ মারা গেছে, তাদের বিচার দাবি করবেন কী না? এমন প্রশ্নের জবাবে আল্লামা নূরুল ইসলাম বলেন, অবশ্যই ১৭ জন মজলুমের হত্যার বিচার চাইব। কারাবন্দি সাবেক হেফাজত নেতাদের অপরাধী মনে করেন কী নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রেফতাকৃত কাউকে অপরাধী মনে করার ক্ষমতা আমাদের নেই; অপারাধী মনে করতে পারে একমাত্র আদালত।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ২০১০ সালে হাটহাজারী মাদরাসার তৎকালীন মহাপরিচালক দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.) ঈমান-আক্বিদা রক্ষার উদ্দেশ্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নামে একটি ধর্মীয় আধ্যাত্মিক ও অরাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মৃত্যু আগপর্যন্ত সূচারুরূপে এই সংগঠনের আমীরের দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ২৫ এপ্রিল উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে হেফাজতে ইসলামের আমীর শাইখুল হাদিস আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী সংগঠনের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের পরামর্শক্রমে হেফাজতে ইসলামের ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। একই সাথে সেদিন হেফাজতের প্রধান মুরব্বী মুজাহিদে মিল্লাত আল্লামা শাহ মুহিববুল্লাহ বাবুনগরীকে প্রধান উপদেষ্টা, আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীকে আমীর ও আল্লামা নূরুল ইসলামকে মহাসচিব আল্লামা সালাউদ্দীন ও প্রিন্সিপাল মিজান চৌধুরী পীর সাহেব দেওনাকে সদস্য করে ৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এতে সিদ্ধান্ত হয় যে, এই আহ্বায়ক কমিটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করবে। এরই ধারাবাহিকতায় আলেম-উলামাদের সাথে পরামর্শক্রমে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার ৪৩ দিন পর হেফাজতে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
৩৩ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্যরা হচ্ছেন, আমীর হযরত আল্লামা হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরী, নায়েবে আমীর হযরত মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, হযরত মাওলানা আবদুল হক মোমেন শাহী, হযরত মাওলানা সালাহ উদ্দীন নানুপুরী, প্রিন্সিপাল মীযানুর রহমান চৌধুরী পীর সাহেব দেওনা, হযরত মাওলানা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী সিলেট, হযরত মাওলানা ইয়াহইয়া হাটহাজারী মাদরাসা, হযরত মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস ফরিদাবাদ মাদরাসা, হযরত মাওলানা তাজুল ইসলাম পীর সাহেব ফিরোজশাহ্, হযরত মাওলানা মুফতী জসিমুদ্দীন হাটহাজারী মাদরাসা, মহাসচিব হযরত মাওলানা হাফেজ নূরুল ইসলাম ঢাকা, যুগ্ম মহাসচিব হযরত মাওলানা সাজেদুর রহমান বি-বাড়িয়া, হযরত মাওলানা আব্দুল আউয়াল নারায়ণগঞ্জ, হযরত মাওলানা লোকমান হাকীম চট্টগ্রাম, হযরত মাওলানা আনোয়ারুল করীম যশোর, হযরত মাওলানা আইয়ুব বাবু নগরী, সহকারী মহাসচিব হযরত মাওলানা জহুরুল ইসলাম মাখজান, হযরত মাওলানা ইউসুফ মাদানী (সাহেবজাদা আল্লামা শাহ আহমদ শফি রহ.), সাংগঠনিক সম্পাদক হযরত মাওলানা মীর ইদ্রিস চট্টগ্রাম, অর্থসম্পাদক হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আলী (মেখল), সহ-অর্থসম্পাদক হযরত মাওলানা মুফতী হাবিবুর রহমান কাসেমী নাজিরহাট, প্রচার সম্পাদক হযরত মাওলানা মুহিউদ্দীন রব্বানী সাভার ঢাকা, সহ-প্রচার সম্পাদক হযরত মাওলানা জামাল উদ্দীন কুড়িগ্রাম, দাওয়া বিষয়ক সম্পাদক হযরত মাওলানা আবদুল কাইয়ূম সোবহানী ঢাকা, সহকারী দাওয়া সম্পাদক হযরত মাওলানা ওমর ফরুক নোয়াখালী, সদস্য হযরত মাওলানা মোবারাকুল্লাহ বি-বাড়িয়া, হযরত মাওলানা ফয়জুল্লাহ পীর সাহেব মাদানীনগর, হযরত মাওলানা ফোরকানুল্লাহ খলিল দারুল মায়ারেফ চট্টগ্রাম, হযরত মাওলানা মোশতাক আহমদ খুলনা দারুল উলূম, হযরত মাওলানা রশিদ আহমদ কিশোরগঞ্জ, হযরত মাওলানা আনাস ভোলা, হযরত মাওলানা মাহমুদল হাসান ফতেহপুরী, হযরত মাওলানা মাহমুদুল আলম পঞ্চগড়। এছাড় ভবিষ্যতে প্রত্যেক জেলা কমিটির সভাপতি পদাধিকার বলে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে বিবেচিত হবেন। জেলা কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারি অরাজনৈতিক ব্যক্তি হতে হবে।
৯ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় খাস কমিটিতে যারা আছেন, আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, আল্লামা হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরী, আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, আল্লামা হাফেজ নূরুল ইসলাম, প্রিন্সিপাল মিযানুর রহমান চৌধুরী, আল্লামা সাজেদুর রহমান বি-বাড়িয়া, আল্লামা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী সিলেট, আল্লামা আব্দুল আউয়াল নারায়ণগঞ্জ ও আল্লামা মুহিউদ্দীন রব্বানী সাভার।
হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমীর আহমদ শফী (রহ.) বড় ছেলে ইউসুফ মাদানীকে আপনাদের কমিটি স্থান পেয়েছে। তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে জানিয়েছেন, গতকালের এই কমিটি মানেন না। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আল্লামা নূরুল ইসলাম বলেন, আমাদের সঙ্গে তার যে কথা হয়েছে, তিনি কমিটিতে থাকার কথা জানিয়েছেন। তিনি কমিটি মানেন না বলে যদি কোনও কথা বলে থাকেন, সেটা সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন। আমাদেরকে এই রকম কিছু বলেন নাই। হেফাজতের আল্লাহ আহমদ শফী (রহ.) পন্থীদের সঙ্গে আপনাদের বিভাজন কি দূর হয়েছে কিনা, তারা তো আপনাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল এমন প্রশ্নের জবাবে আল্লামা নূরুল ইসলাম বলেন, হেফাজতে ইসলামের কমিটি একটি। অন্য কোনও হেফাজত নেই। আর বিদ্রোহের কোনও খবর আমাদের কাছে জানা নেই। কমিটি গঠন করে কতটা খুশি জানতে চাইলে আল্লামা নূরুল ইসলাম বলেন, কমিটি গঠন করে আমরা খুশি। তবে, শঙ্কা যে দায়িত্ব আমাদের ওপর তা কতটুকু পালন করতে পারব সেটা নিয়ে।
উল্লেখ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে ঘিরে গত ২৫, ২৬ ও ২৭ মার্চ হেফাজতের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১৭ জনের মারা যায়। এরপর হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতাদের ধারাবাহিক মামলা ও গ্রেফতার করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।