Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিপর্যস্ত পারকি সৈকতের ঝাউবন

নুরুল আবছার তালুকদার, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) থেকে | প্রকাশের সময় : ৭ জুন, ২০২১, ১২:০৪ এএম

দীর্ঘ ৪ বছর ধরে সৈকতের বুকে বিশালাকৃতির জাহাজ ক্রিস্টাল গোল্ড গিলে খাচ্ছে দেশের দ্বিতীয় দীর্ঘতম সৈকত চট্টগ্রামের আনোয়ারার পারকি সমুদ্র সৈকতকে। জাহাজের সাথে সাগরের ঢেউয়ে সৈকতের বালি সরে গিয়ে সৈকত এলাকা কাদায় পরিণত হয়েছে। একই সাথে বিলুপ্ত হচ্ছে আর্কিটেকচারাল পদ্ধতিতে লাগানো সারি-সারি ঝাউগাছগুলো। এতে করে সৈকত যেমন সৌন্দর্য্য হারাচ্ছে তেমনি বিপর্যস্ত হচ্ছে পরিবেশ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, স্থায়ী বেড়িবাঁধের কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত কিছু সমস্যা হবে, বেড়িবাঁধের কাজ শেষে সৈকতে নতুন করে ১৭ হাজার গাছ লাগানো হবে।
বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, আনোয়ারার উপক‚লকে রক্ষা করার জন্য পারকি সৈকত ও আশপাশের এলাকায় বনবিভাগ ১৯৯৩-৯৪ এবং ২০০২ সালে পর্যায়ক্রমে প্রায় ৮০ হেক্টর জায়গায় ঝাউগাছ রোপন করেন। গাছগুলো বড় হতে থাকলে স্থানীয়দের কাছে এটি ঝাউবাগান বলে পরিচিতি পেতে শুরু করে। আর্কিটেকচারাল পদ্ধতিতে লাগানো এ গাছ বড় হয়ে উঠলে পরবর্তীতে পারকি পর্যটন এলাকা হিসাবে রূপ লাভ করে। বর্তমানে দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে এ সৈকত। পারকির ঝাউবনে বসে একসাথে বহিনোঙরের জাহাজ সারির আসা যাওয়া ও সৈকতের লাল কাঁকড়ার নাচন উপভোগ করা যায়। চট্টগ্রাম শহর থেকে দিনে এসে দিনে ফিরে যেতে পারায় পারকি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বর্তমানে এটি আধুনিকায়নে সরকার ৩৮.০২ একর জমি অধিগ্রহণ করে ৬৫ কোটি টাকার বরাদ্ধের কাজ চলছে। কিন্তু ২০১৭ সালের ৩০ মে ঘূর্ণিঝড় মোরার প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়ায় সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের কারণে ১৬৮ মিটার দৈর্ঘের ক্রিস্টাল গোল্ড নামে বিশালাকৃতির জাহাজ পারকি সৈকতে আটকে পড়ে। এরপর থেকে সাগরের ঢেউয়ে সৈকতের বালি সরে গিয়ে কাঁদায় পরিণত হয় এবং সৈকতের ঝাউগাছগুলো বিলুপ্ত হতে শুরু করে। তবে সৈকত ও ঝাউগাছ রক্ষায় বনবিভাগ কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন তৎপরতা চোখে পড়েনি।
রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জানে আলম জানান, সৈকতে আটকে পড়া জাহাজ দ্রুত সরাতে না পারলে পারকির সৌন্দর্য নষ্ট হবে। ভূমিমন্ত্রীর প্রচেষ্ঠায় পারকি থেকে বারআউলিয়া পর্যন্ত সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকার পাথর বসানোর কাজ চলছে। এটি সম্পন্ন হলে সৈকত এলাকা রক্ষা পাবে।
চট্টগ্রাম উপক‚লীয় বনবিভাগের বন্দর বিটকর্মকর্তা মো. হান্নানুজ্জামান জানান, সাগরের ঢেউয়ে ও ক্রিস্টাল গোল্ড জাহাজের কারণে সৈকত সংলগ্ন এলাকায় অবকাঠামো উন্নয়ন করা যাচ্ছে না। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে উপড়েপড়া গাছগুলো চিহ্নিত করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তালিকা পাঠানো হয়েছে। অনুমতি পেলেই এসব গাছ নিলামে বিক্রি করা হবে।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পারকি সমুদ্র সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, পারকি সৈকতে রক্ষা করতে জাহাজটি অবশ্যই সরাতে হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে চিঠিও দেয়া হয়েছে। সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙনরোধে অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য পর্যটন করপোরেশনকে জানানো হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে দ্রুত একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ভাঙনরোধ ও পর্যটন বান্ধব পরিবেশ তৈরিতে পদক্ষেপ নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ