Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সীমান্তে বাড়ছে করোনা: দেশে তৃতীয় ঢেউ কি আসছে?

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ জুন, ২০২১, ১০:৩৩ এএম

দেশে গত কয়েকদিন ধরে রাজশাহী বিভাগের বেশ কিছু জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে৷ বিভাগের সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে আক্রান্তদের অধিকাংশই ভারতীয় বা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের শিকার বলে জানিয়েছে প্রশাসন৷

রাজশাহী বিভাগে সর্বশেষ ২৪ ঘন্টায় ২৮৮ জন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷ এর মধ্যে রাজশাহী জেলাতেই ১৩৩ জন৷ আর সীমান্ত এলাকায় করোনার হটস্পট চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১০৮ জন৷ এ পর্যন্ত রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৩৭ হাজার ৩২১ জনে৷ গত ২৪ ঘন্টায় ওই বিভাগে মারা গেছেন ১২ জন৷ এর আগের দিন মারা গেছেন ১৬ জন৷

গত ২৪ ঘন্টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছয় জন, রাজশাহীতে চার জন, নওগাঁয় একজন ও বগুড়ায় একজন মারা গেছেন৷ এই বিভাগে এখন পর্যন্ত করোনায় ৫৯২ জনে মারা গেছে৷

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী জানান, জেলায় নমুনা পরীক্ষায় শতকরা ৪০ ভাগ এখনো পজেটিভ আসছে৷ আর হাসপাতালের বেড যত বাড়ানো হয় ততই ভরে যায়৷ প্রথমে করোনা রেগীদের জন্য ২০ বেড, তারপর ৩০ বেড এবং এখন ৫০ বেড করা হয়েছে৷ তাও ভরে গেছে৷

তিনি জানান, পরিস্থিতি সামলাতে তারা তিনটি চ্যালেঞ্জের মুখে আছেন৷ লকডাউনেও বিভিন্ন স্থানে লোক সমাগম কমানো যচ্ছেনা৷ আমের মৌসুম হওয়ায় আম ব্যবসায়ীরা লকডাউন মানছেন না৷ সীমান্তে অবৈধ যাতায়ত বন্ধ করা যাচ্ছেনা৷

এদিকে সারা দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যাও আবার বাড়ছে৷ গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় সারা দেশে আরো ৪৩ জনের মারা গেছে৷ শুক্রবার মারা গেছে ৩৪ জন৷ এ নিয়ে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১২ হাজার ৮০১ জনে৷ ২৪ ঘন্টায় নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৪৪৭ জন৷ ফলে দেশে মোট করোনা রোগী শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮ লাখ ৯ হাজার ৩১৪ জনে৷

২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৪৩ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১২ জন, রাজশাহীতে ১২, চট্টগ্রামে ৮, খুলনায় ৫, সিলেটে ১, রংপুর ৩ ও ময়মনসিংহে ২ জন মারা গেছেন৷

আইইডিসিআর-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে এখন যারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের শতকরা ৮০ভাগই ভারতীয় ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত হচ্ছেন৷ এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি ৫০ টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স পরীক্ষা করে এ তথ্য জানিয়েছে৷

গবেষণাকৃত ৫০টির মধ্যে ৪০টিতে নমুনায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়৷ এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা এবং একটি অজ্ঞাত ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে৷

এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ১৬ নমুনায় ১৫টি, ঢাকার ৪টি নমুনার ২টি ও গোপালগঞ্জ থেকে ৭ নমুনার সবকটিই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে৷ আর চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ আসা সাত জনের দেহে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে৷

এই সব পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করছেন৷ তবে বিএসএমইউ'র সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, ''এখনো দ্বিতীয় ঢেউই তো শেষ হয়নি, চলছে৷ সংক্রমণ এখনো শতকরা ১১ ভাগের বেশি৷ পাঁচ ভাগের নিচে নামার পর আবার বাড়লে তাকে আমরা নতুন ঢেউ বলতে পারি৷ এখনো তো আবার মৃত্যু বাড়ছে৷”

তিনি মনে করেন, এখন বাংলাদেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ছে স্থানীয়ভাবে৷ তবে জিনোম সিকোয়েন্স পরীক্ষা আরো বাড়াতে হবে৷ না হলে পরিস্থিতি পুরোপুরি বোঝা যাবেনা৷

তার মতে,‘‘করোনা তো করোনা৷ সেটা ভারতীয় হোক আর আফ্রিকান হোক৷ এটা নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে এখন সারাদেশে করোনা চিকিৎসা, বিশেষ করে অক্সিজেনের ওপর জোর দিতে হবে৷ আর স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নাই৷ মাস্ক বাধ্যতামূলকভাবে পরতে হবে৷ যত দ্রুত সম্ভব টিকা দিতে হবে৷”

আইইডিসিআর-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর ডয়চে ভেলেকে বলেন, "সারা দেশে যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে তা বলার সময় এখনো আসেনি৷ যে নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করেছি তা সারা দেশের প্রতিনিধিত্ব করে না৷ তবে সীমান্ত এলাকা এবং ঢাকা ও আশপাশের জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে৷”

তিনি বলেন,‘‘তাদেরই জিনোম সিকোয়েন্স আমরা করেছি যারা ২৫মে ও পরবর্তী সময়ে ভারত থেকে এসেছেন বা ভারত থেকে আসা ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছেন৷ ৫০ জনের মধ্যে যে ৪০ জন ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমিত তাদের ১৪ জনের ভারত যাওয়া বা ভারত থেকে আসা লোকজনের সংস্পর্শে আসার তথ্য নেই৷” ডয়চে ভেলে



 

Show all comments
  • ম নাছিরউদ্দীন শাহ ৬ জুন, ২০২১, ১২:৪২ পিএম says : 0
    বাংলাদেশে ভয়াবহ কঠিন অবস্থা সামনে অদৃশ্য শক্তির সাথে যুদ্ধ করা যায় না। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের মানুষের জীবনের নিরাপত্তাব্যবস্থা জন্যে কঠোর সিদ্ধান্ত প্রযোজন ছিল।একদিকে সরকারের বিরুদ্ধে রাজনীতিবিদরা বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ জীবিকার জন‍্যে চাপে রেখেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্টান খুলে দিতে আন্দোলন হচ্ছে।এখন সিমান্তে এলাকায় ভাইরাসের ভয়াবহতা শুরু হয়েছে। বড় বড় শহর ঢাকা চট্টগ্রাম সহ বাংলাদেশের অন‍্য অন‍্য শহর গুলো রক্ষা করার কঠোরভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকার কে। সবাই কে বুঝতে হবে এখন রাজনীতিকরার সময় নয়। এখন জীবন মৃত্যুর বিষয়। সাহসিকতার সাথেই কেও বলছে সরকারের পক্ষে স্কুলই কলেজ শিক্ষা প্রতিষ্টান বন্ধ রাখার কারণে হাজারো ছাত্রছাত্রীদের জীবন বাচিয়েছেন। ইংল‍্যান্ডের শিক্ষা প্রতিষ্টান খুলার পর আমেরিকার শিক্ষা প্রতি ষ্টান খুলার পর হাজার হাজারো আক্রান্ত মৃত্যুর আন্তর্জাতিক সংবাদ পড়ছি। সরকারের সিদ্ধান্ত সময় উপযোগী ছিল।বিভিন্ন প্রতিষ্টান খুলার সাথে শিক্ষা প্রতিষ্টান খুলার হিসাব কিতাব কি কি এক??বিভিন্ন উধাহারণ দিয়ে কোন প্রতিষ্টান কে ছোট করে লিখতে চায় না। ভারতীয় ডেন্টা ভ‍্যারিযেন্ট বাংলাদেশের ডুকে গেছে শুরু হয়েছে ভাইরাসের আক্রান্তের যন্ত্রণা। কঠোর নিরাপত্তা বলয় কঠিন সিদ্ধান্ত মানুষের জীবন বাচাতে নিতেই হবে। এখানে কোন আবেগ অনুভূতি রাজনীতির বিষয় নয়। দেশ ও সমগ্রজাতি বাচানোর বিষয়। ভারতের হাজার মানুষের লাশের মিছিল থেকে শিক্ষা না নিলে আমাদের একি পরিণতি পরিণাম অপেক্ষা করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার যতেষ্ট সময় পেয়েও বাংলাদেশের প্রশাসন উপযুক্ততা উপলব্দি করতে ব‍্যর্থ হয়েছেন। শিরোনাম দেশে তৃতীয় ঢেউ কি আসছে? ঢেউ অলরেডি সিমান্তে শুরু হয়ে গেছে। সারা বাংলাদেশে শুরুর বাকী। ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত জরুরী নিরাপত্তাব্যবস্থার সিদ্ধান্ত এই মূহুর্তে সরকার না নিলে হা হবার হবে। লাশের নগরী হবে লাশ নিয়ে রাজনীতি হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আল্লাহর দরবার প্রার্থনা আমাদের কে হেফাজত করুন। আমিন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ