পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কোনো মুমিনের জন্য সমীচীন নয় সে অন্য মুমিনকে হত্যা করবে। আর কেউ স্বেচ্ছায় কোন মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম। সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। সমাজে এখন দাম্পত্য কলহ, পরকীয়া জনিত কারণ এবং অবৈধ সম্পর্কের কারণে হত্যা ও আত্মহত্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। মানবসমাজে কোনো রকম অশান্তি হত্যা, নৈরাজ্য, উগ্রতা, বর্বরতা, কোনো বিবেকবান ও ধর্মপ্রাণ মানুষের কাম্য নয় । আজ বিভিন্ন মসজিদে জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম ও খতিবরা এসব কথা বলেন। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাজধানীর মসজিদগুলোতে উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়। মসজিদে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় মসজিদের বাইরে রাস্তার ওপর মুসল্লিদের নামাজ আদায় করতে হয়েছে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান আজ জুমা খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানবজাতির জীবন-মরণ, মানসম্মান সবকিছুই আল্লাহর পবিত্র আমানত। কোনো ব্যক্তি যদি এ আমানতের খেয়ানত ঘটিয়ে কোনো নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে, তবে এর জন্য তাকে আল্লাহর বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। হত্যার বদলে হত্যার কঠিন শাস্তি পেতে হবে।
পবিত্র কোরআনে হত্যাকান্ড মহাপাপ সাব্যস্ত করে ইচ্ছাকৃতভাবে একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানকে হত্যা করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে জাহান্নামে শাস্তির কঠোর বিধান সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে ‘ কোনো মুমিনের জন্য সমীচীন নয় সে অন্য মুমিনকে হত্যা করবে। আর কেউ স্বেচ্ছায় কোন মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম। সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন ও তাকে অভিশপ্ত করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৯২-৯৩)
পেশ ইমাম বলেন, সমাজে এখন দাম্পত্য কলহ, পরকীয়া জনিত কারণ এবং অবৈধ সম্পর্কের কারণে হত্যা ও আত্মহত্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।
তাকওয়া বা খোদাভীতি মনে থাকলে মানুষ কখনো কাউকে হত্যা করবে না। নরহত্যার শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘নরহত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে হত্যা করল।’ (সূরা আল-মায়দা,আয়াত: ৩২)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যে মোকদ্দমার ফয়সালা হবে, তাহলো রক্তপাত (হত্যা) সম্পর্কিত।’ (বুখারি ও মুসলিম)
তিনি বলেন, মানবসমাজে কোনো রকম অশান্তি হত্যা , নৈরাজ্য, উগ্রতা, বর্বরতা, কোনো বিবেকবান ও ধর্মপ্রাণ মানুষের কাম্য নয় । বিশ্বজনীন শান্তি সম্প্রীতি ও মানবজাতির জন্য কল্যাণকামীতাই হোক চিরশান্তির ধর্ম ইসলামের সকল অনুসারীদের প্রত্যাশা। আল্লাহ সবাইকে কবুল করুন। আমীন!
ঢাকার বাংলা মটরস্থ বায়তুল মোবারক জামে মসজিদের অনারারি খতিব প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ আজ জুমার বয়ানে বলেন, পরিবেশের সবকিছুই মহান আল্লাহ মানুষের কল্যাণে সৃষ্টি করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, তিনি পৃথিবীর সবকিছু তোমাদের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন। (সূরা বাকার, আয়াত নং-২৯) অক্সিজেন, পানি, খাদ্য ইত্যাদি ব্যতীত মানুষের পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়, এর প্রতিটিই পরিবেশের অংশ। পরিবেশের প্রতিটি উপাদানই মানুষের বেঁচে থাকার এবং জীবনযাপনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভ‚মকিা রাখে। যেকারণে নিজেদের প্রয়োজনের তাগিদেই মানুষের উচিত পরিবেশ সংরক্ষণে যতœবান হওয়া। আমরা প্রতিনিয়তই পরিবশ দূষণ করে চলেছি। পরিবেশ দূষণ রোধে মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে ৫ জুন আন্তর্জাতিক ভাবে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপিত হবে।
খতিব বলেন, ইসলামে পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ করা, গাছ লাগানো নেক আমলের অন্তর্ভুক্ত-অনেক সাওয়াবের কাজ। পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে পরিবেশের নানা উপাদান ও এর উপকারিতা সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন বৃক্ষ ও পাহাড় সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে, আমি ভ‚মিকে করেছি বিস্তৃত ও তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং নয়নাভিরাম বিবিধ উদ্ভিদরাজি উৎপাদন করেছি। এটি আল্লাহর অনুরাগী বান্দাদের জন্য জ্ঞান ও উপদেশস্বরূপ। (সূরা কাফ, আয়াত নং-৭-৮)
পরিবেশের ভারসম্য রক্ষা ও পরিবেশকে দূষণ মুক্ত রাখতে কোরআন-হাদীসে প্রদান করা হয়েছে নানা নির্দেশনা।
খতিব বলেন, শ্বাসকষ্ট, প্রাণঘাতি ক্যান্সারসহ নানা রোগ সৃষ্টির বায়ু দূষণ। বায়ুকে দূষণমুক্ত করাসহ পরিবেশ সংরক্ষণের একটি প্রধান মাধ্যম বৃক্ষরোপণ। এর মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পায়, অক্সিজেন উৎপাদন বেড়ে যায়, ঘূর্ণিঝড়-প্লাবন থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। হাদীসেও বৃক্ষ রোপণের ব্যাপারে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যদি নিশ্চিতভাবে জানো যে কিয়মত এসে গেছে, তখন যদি হাতে একটি গাছের চারা থাকে তবে সেই চারাটি রোপণ করবে। (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং-৫৫৬০) অন্য হাদীসে বৃক্ষ রোপণকে সাদকা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো মুসলমান যদি বৃক্ষরোপণ করে অথবা ফসল আবাদ করে এরপর তা থেকে কোনো পাখি, মানুষ বা চতুস্পদ জন্তু কিছু ভক্ষণ করে তবে তা তার জন্য সাদাকা হিসেবে গণ্য হবে। (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং-৫৫৩২)।
তিনি বলেন, বিনা প্রয়োজন গাছ কাটতে ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি বিনা প্রয়োজনে গাছ কাটবে, আল্লহ তার মাথা আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করবেন। (আবূ দাউদ শরীফ, হাদীস নং-৫২৪১)। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকরীদের ভালোবাসেন ও পবিত্রতা অর্জনকারীদেরও ভালোবাসেন। (সূরা বাকারা, আয়াত নং-২২২)। এক হাদীসে রাসুলুল্লাহ (সা.) পবিত্রতাকে ঈমানের অঙ্গ (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং-২২৩) এবং অন্য হাদীসে ঈমানের অর্ধেক হিসেবে ঘোষণা করেছেন। (তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং-৩৫১৯)। অন্য হাদীসে পবিত্রতা অর্জনকে জান্নাত লাভের শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ইসলাম পরিচ্ছন্ন। সুতরাং তোমরা পরিচ্ছন্নতা অর্জন করো। নিশ্চয়ই জান্নাতে কেবল পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিই প্রবেশ করবে। আল্লাহপাক পরিবেশ সংরক্ষণে আমাদের কার্যকর ভ‚মিকা পালন করার তৌফিক দান করুণ। আমীন!
মিরপুরের বাইতুল আমান সেন্ট্রাল জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, ইসলামী অর্থব্যবস্থাই দারিদ্র্য বিমোচনের উত্তমপন্থা। "দারিদ্র” নামক আপদ থেকে মুক্তির আশায় প্রাচীনকাল হতে চলছে মানবজাতির নিরন্তর লড়াই। আজও দারিদ্র বিমোচন প্রত্যেক রাষ্ট্র ও সরকারের মূল প্রতিপাদ্য কর্মসূচি। মদিনায় ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কয়েক যুগের ভেতর ইসলামি খেলাফত অধ্যুষিত বিশাল জনপদ হতে দারিদ্র লেজ গুটিয়ে পালিয়েছিল। যাকাত গ্রহণের জন্য তখন লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি। ইসলামি শাসন বিজয়ী হয়েছিল দারিদ্র বিরোধী লড়াইয়ে। আধুনিক যুগের মানুষের কাছে এ এক বিস্ময়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসমৃদ্ধ বর্তমান যুগের মানুষ যেখানে দারিদ্র দূরীকরণে ব্যর্থ হচ্ছে। কোন নীতি ও পাথেয় গ্রহণের কারণে তারা বিজয়ী হয়েছিল? এর উত্তর হচ্ছে, ইসলামী অর্থব্যবস্থার মাধ্যমেই তারা ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনালি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিল খেলাফত রাষ্ট্রপ্রধানরা।
তিনি বলেন, দারিদ্র বিমোচনেও ইসলাম সুন্দরতম দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। শুধু পরকালীন শান্তি নয়, ইহকালীন জীবনেও সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন পরিচালনার কথা বলে ইসলাম। ইসলাম যেমন নামাজ, রোজা, হজ, যাকাতের কথা বলে, তেমনি অর্থনীতির কথাও বলে। সুদের ভয়াবহ পাপ ও ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মানবসমাজকে রক্ষা করার জন্য ইসলামী অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। ইসলামী অর্থব্যবস্থা ছাড়া পৃথিবীতে যতগুলো অর্থব্যবস্থা রচিত হয়েছে যেমন পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা ও কমিউনিজম অর্থব্যবস্থা, দারিদ্র বিমোচনে এগুলো চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। একমাত্র ইসলামী অর্থব্যবস্থাই দারিদ্র বিমোচনে শতভাগ সফলতার পরিচয় দিয়েছে।
খতীব আরও বলেন, “যাকাত” দরিদ্র ও অভাবী জনগোষ্টীর সামাজিক নিরাপত্তার গ্যারান্টি। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা নামাজ কায়েম কর এবং যাকাত প্রদান কর, (সূরা বাকারা)। সুতরাং দারিদ্রপীড়িত মানুষের অভাব মোচনে যাকাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইসলামী অর্থব্যবস্থাই দারিদ্র বিমোচনের উত্তমপন্থা। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করেন। আমীন!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।