Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আমরা কতটুকু ঈমানদার হতে পেরেছি-২

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০২১, ১২:১৩ এএম

শুধু মুসলমান হওয়ার অপরাধে নিরপরাধ, নিরস্ত্র মুসলমানরা নির্মম নির্যাতন নিপীড়ন ও গণহত্যার শিকার হচ্ছে। কেন মুসলমানরা মজলুম হচ্ছে? তাহলে কি তারা মুমিন নয়? তারা কি কোরআনে কারীমের কৃত ওয়াদার অন্তর্ভুক্ত নয়? আমরা যদি কোরআনে কারীম গভীরভাবে অধ্যায়ন করি তাহলে এ প্রশ্নের উত্তর সহজভাবে পেয়ে যাব। কোরআনে কারীমে আল্লাহতায়ালা প্রকৃত মুমিনদের গুণ-বৈশিষ্টের কথা উল্লেখ করেছেন। সূরা আনফালে ইরশাদ হয়েছে : ‘মুমিন তো তারাই যাদের অন্তর কম্পিত হয় যখন আল্লাহর নাম নেয়া হয়, আর যাদের সামনে আয়াত পাঠ করা হয় তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তারা স্বীয় প্রতিপালকের ওপর ভরসা করে। তারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে আমি যা দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে, তারাই হলো প্রকৃত ঈমানদার।’ সূরা মুমিনে ইরশাদ হয়েছে : ‘মুমিনগণ কামিয়াব হয়ে গেছে, যারা নিজেদের নামাজে বিন¤্র।’ সূরা তওবায় ইরশাদ হয়েছে : ঈমানদার নরনারী একে অপরের বন্ধু, তারা সৎ কাজের আদেশ করে অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখে, নামাজ কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে, তাদের ওপর আল্লাহ কৃপা করবেন।’

সূরা হুজরাতে আছে, মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই, অতএব তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মিমাংসা করে দাও। সূরা হুজরাতে আরো আছে, তারাই ঈমানদার যারা আল্লাহর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং তাদের জীবন সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে তারাই সত্যনিষ্ঠ।’ সূরা নুরে আছে, ঈমানদারদের উক্তি তো এই যে, ‘যখন তাদের মাঝে ফয়লাসা করে দেয়ার জন্য আল্লাহ তার রাসূলের দিকে আহŸান করা হয়, তখন তারা বলে আমরা শুনেছি এবং আদেশ মেনে নিয়েছি, আর তারাই সফল কাম।’

এই আয়াতগুলো সামনে রেখে যদি আমরা চিন্তা করি এবং কোটি কোটি মুসলমানের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করি তাহলে দেখতে পাই, প্রকৃত মুমিনের গুণ বৈশিষ্ট্য যে কোরআনে কারীমে উল্লেখ করা হয়েছে, তার কিঞ্চিত পরিমাণ আমাদের মাঝে নেই। আমরা নামাজ পড়ি নামাজে আমাদের মনোযোগ নেই। অন্তরে আল্লাহর জিকির নেই। আমাদের সমাজে অন্যায় অসৎ কাজ হচ্ছে তার প্রতিবাদ করছি না।

সৎ কাজের আদেশ অসৎ কাজের নিষেধ একেবারে ছেড়ে দিয়েছি। সুতরাং, আমরা কোরআনের পরিভাষায় মুমিন কিনা সেটা এখন বড় প্রশ্ন। ঈমান অর্থ হলো কালিমা পাঠ করা এবং ইসলামের কিছু বিধান মেনে চলা, তাহলে আমরা সবাই মুমিন। কিন্তু মুমিন অর্থ যদি হয় কোরআনের বর্ণিত বিশেষ গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যসমূহ অর্জন করা, তাহলে সে অর্থে আমরা কতটুকু ঈমানদার হতে পেরেছি সেটাই এখন চিন্তার বিষয়।

তবে, এপর্যায়ে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক যে, মুসলমানদের যত দোষ থাকুক তারা মুসলমান। তারপর তারা ইহুদি খ্রীস্টানদের হাতে মার খাচ্ছে কেন? ইহুদি খ্রীস্টানরা বিজয়ী, আর মুসলমানরা পরাজিত কেন? এ প্রশ্নের উত্তর আরো সহজ। ইহুদি খ্রীস্টানরা সৃষ্টির বিষয়ে আল্লাহতায়ালার অনুসৃত রীতিনীতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করছে এবং সে অনুযাযী কাজ করছে। অপর দিকে মুসলমানরা সম্পূর্ণ ভুলে গেছে। ইহুদি খ্রীস্টানরা পুরো জাতির বিজয়ের জন্য ঘাম ঝরাচ্ছে। আর মুসলমানরা অলস ঘুমে বিভোর।

ইহুদি খ্রীস্টানরা শিক্ষা দীক্ষায় নিয়োজিত আর মুসলমানরা মুর্খতার গøানিবহন করে বেড়াচ্ছে। ইহুদি খ্রীস্টানরা আগামীকালের প্রস্তুতি গ্রহণ করে রেখেছে সেখানে মুসলমানরা আজকের করণীয় সম্পর্কে উদাসীন। জয় পরাজয় ও উন্নতি অধোগতির ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান কারো প্রতি অবিচার করে না। কোনো জাতির পক্ষপাতিত্বও করে না। এটা ইসলামেরই শিক্ষা। কিন্তু মুসলমানেরা কেন জানি এই শিক্ষা গ্রহণ করতে বা বুঝতে নারাজ।



 

Show all comments
  • হাবীব ৪ জুন, ২০২১, ২:০০ এএম says : 0
    পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমাদেরকে সৃষ্টিই করা হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য, মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অন্যায় কাজে বাধা প্রদান করবে।’ (সূরা আল ইমরান, আয়াত : ১১০)।
    Total Reply(0) Reply
  • আবদুর রহমান ৪ জুন, ২০২১, ২:০০ এএম says : 0
    সাধ্যমতো অন্যায়ের প্রতিবাদ করা প্রতিটি মানুষের ঈমানি দায়িত্ব। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে যেকোনো অন্যায়কারীকে দমনে সে যেন হাত দিয়ে প্রতিরোধ করে, যদি তা করতে না পারে তবে সে যেন মুখ দিয়ে প্রতিহত করে। যদি সে মুখ দিয়েও না পারে তাহলে যেন অন্তর দিয়ে ঘৃণা পোষণ করে; আর এটাই দুর্বল ঈমানের পরিচয়।’ (বুখারি)
    Total Reply(0) Reply
  • নিয়ামুল ৪ জুন, ২০২১, ২:০১ এএম says : 0
    সত্যি কথা হলো, যত দিন আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দেওয়া নির্দেশনার বাস্তবায়ন হবে না, তত দিন পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন সুদূরপরাহত।
    Total Reply(0) Reply
  • কাওসার আহমেদ ৪ জুন, ২০২১, ২:০২ এএম says : 0
    আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সব অন্যায়-অপরাধে কোরআন হাদিসের নির্দেশনা মেনে চলার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া পরাকলের কল্যাণে পরস্পরকে সহযোগিতা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • হেদায়েতুর রহমান ৪ জুন, ২০২১, ২:০৫ এএম says : 0
    মুসলমানদের রয়েছে সোনালি অতীত। মুসলমানরা শ্রেষ্ঠ জাতি, বীরের জাতি, বিজয়ী জাতি। একসময় বিশ্বের বড় বড় সব পরাশক্তি মুসলমানদের কাছে পরাজিত হয়েছে। কিন্তু বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যায়, মুসলিম উম্মাহ পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে নির্যাতিত, নিপীড়িত, লাঞ্ছিত, বঞ্চিত ও পরাজিত। এর কারণ কী? মুসলিম জাতির এমন অধঃপতন কিভাবে হলো?
    Total Reply(0) Reply
  • জান্নাতুল ফেরদাউস নূরী ৪ জুন, ২০২১, ২:০৬ এএম says : 0
    আজ মুসলমানরা ইসলাম থেকে দূরে সরে গেছে, শরিয়ত বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে না। এমতাবস্থায় এই জাতিকে আল্লাহ কেন সাহায্য করবেন? কিভাবে তাদের বিজয় আসবে?
    Total Reply(0) Reply
  • মাহমুদ ৪ জুন, ২০২১, ২:০৭ এএম says : 0
    মুসলমানরা একে অন্যের ভাই। এমনকি সারা জীবন দেখা না হওয়া বিশ্বের এক প্রান্তের মুসলমানও অন্য প্রান্তের মুসলমানের ভাই। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং তোমরা ভাইদের মধ্যে শান্তি স্থাপন করো আর আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১০) আজ মুসলমানরা একে অন্যের প্রতি ভ্রাতৃত্ববোধ অনুভব করে না, একে অন্যের সাহায্যে এগিয়ে আসে না, একে অন্যের দুর্দিনে কোনো পদক্ষেপ নেয় না। সবাই শুধু নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত। অন্য মুসলিম ভাই-বোনদের নিয়ে ভাবারও যেন ফুরসত নেই! অথচ রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ (প্রকৃত) মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার (মুসলিম) ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করবে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে।’ (বুখারি, হাদিস : ১৩; মুসলিম, হাদিস : ৭৫)
    Total Reply(0) Reply
  • নওরিন ৪ জুন, ২০২১, ২:০৮ এএম says : 0
    ভ্রাতৃপ্রেম না থাকার চূড়ান্ত রূপ হচ্ছে পরস্পরের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত। যুগে যুগে মুসলমানরা কাফিরদের হাতে মার খাওয়ার ও পরাজিত হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত, বিভেদ-বিভাজন। মুসলিম বিশ্বের প্রায় সব দেশই একটি অন্যটির সঙ্গে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে লিপ্ত রয়েছে। মুসলমানরা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়িয়ে পড়ায় তাদের শক্তি হ্রাস পেয়েছে। তাই কাফিররা তাদের ওপর অনায়াসে হামলা করছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘পরস্পর ঝগড়া-বিবাদ কোরো না, তাহলে তোমরা সাহসহারা হয়ে যাবে এবং তোমাদের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে। আর তোমরা ধৈর্য ধারণ করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৪৬)
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুসলমান


আরও
আরও পড়ুন