পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশে হেফাজতে ইসলামকে এবার রাজনীতিমুক্ত করার কথা বলে জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বেই এর নতুন কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে সংগঠনটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন।
তারা বলেছেন, মামুনুল হকসহ যারা রাজনীতির সাথে জড়িত, এমন নেতাদের নতুন কমিটিতে কোন পদে রাখা হচ্ছে না।
দু'একদিনের মধ্যেই আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে।
এদিকে, হেফাজতেরই অনেক নেতা বলেছেন, গত মার্চ মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন ঘটনায় সংগঠনটির নেতাদের গ্রেপ্তার অভিযান যখন চলছে, সেই পটভূমিতে কারো চাপে, নাকি সমঝোতার ভিত্তিতে রাজনীতি সংশ্লিষ্টদের বাদ দিয়ে নতুন কমিটি করা হচ্ছে - এ নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আমীর আহমদ শফীর মৃত্যুর পর গত বছরের ২৬শে ডিসেম্বর জুনায়েদ বাবুনগরীকে সংগঠনটির আমীর করে ১৫১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
কিন্তু এর চার মাস পরই গত এপ্রিল মাসে সেই কমিটি বিলুপ্ত করে মাওলানা বাবুনগরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয় ।
এই আহবায়ক কমিটি এমন এক সময় গঠিত হয়েছিল, যখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সহ বিভিন্ন জায়গায় সংগঠিত ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় হেফাজতে অনেক নেতাকে।
সেই গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এখন আবার সংগঠনটির নতুন কমিটি গঠন করা হচ্ছে।
হেফাজতে ইসলামের সদস্য সচিব নুরুল ইসলাম জেহাদী বলেন, তারা আহবায়ক কমিটির বদলে পূণাঙ্গ কমিটি গঠন করছেন।
"আমরা এডহক কমিটির সদস্যরা পরামর্শ করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা পুরোনো মুরব্বী এবং বড় বড় আলেম যারা আছেন, তাদেরকে নিয়ে এই কমিটি করা হবে," জানান মাওলানা জেহাদী।
গত মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের সময় হেফাজতের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঢাকা এবং হাটহাজারী এলাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
সংকট সামলাতে হেফাজতের নেতৃত্বকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করতে দেখা গেছে।
সে সময়ই আকস্মিকভাবে যে আহবায়ক কমিটি তৈরি করা হয়েছিল, তখনও সংগঠনটিকে রাজনীতির বাইরে রাখার কথাই বলা হয়েছিল।
তা নিয়ে হেফাজতের অনেক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছিলেন।
হেফাজতের কর্মকাণ্ড ঘনিষ্টভাবে পর্যবেক্ষণ করেন লেখক শরীফ মোহাম্মদ। তিনি জানান, এখন রাজনীতিকদের বাদ দিয়ে হেফাজতের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সরকারের সাথে যোগাযোগ এবং চাপের বিষয় অন্যতম কারণ হতে পারে।
"কিছুদিন আগে যখন হেফাজতে ইসলামের কমিটি ভেঙে দেয়া হয় এবং কয়েক ঘন্টার মধ্যে আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়, তখনই এটা বোঝা যাচ্ছিল য হেফাজত একটা ভাল চাপে আছে। এর আগেও গ্রেপ্তার ইত্যাদির পর যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে একাধিকবার হেফাজতের নেতৃবৃন্দের বৈঠকের খবর আসছিল, তখনও এটা মনে হয়েছিল," বলে মন্তব্য করেন শরীফ মোহাম্মদ।
তিনি আরও বলেন, "এখন যে হেফাজতের একটা কমিটি গঠনের কথা উঠেছে এবং সেখানে রাজনৈতিক নেতাদের বাদ দেয়া হবে। আমার কাছে মনে হয়েছে যে আগের যোগাযোগ, সরকারি চাপ, প্রত্যাশা এবং বাস্তবতা-এই সবগুলোকে সামনে নিয়েই হয়তো কিছু একটা হবে।"
হেফাজত কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হলেও এর শুরু থেকেই কমিটিতে আমীর এবং মহাসচিব ছাড়া অন্য পদ এবং সদস্যদের বেশিরভাগই ছিলেন ইসলামপন্থী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও বিভিন্ন সময় হেফাজতের কর্মসূচির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার অভিযোগ করেছে।
যদিও ২০১৩ সালে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতের অবস্থান কর্মসূচির পর আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে সে সময় আহমদ শফীর নেতৃত্বাধীন হেফাজতের একটা সখ্যতা তৈরি হয়েছিল।
হেফাজত বলেছে, মার্চের ঘটনায় অব্যাহত গ্রেপ্তার অভিযানে মামুনুল হক এবং আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ তাদের ৫০ জনের বেশি কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেপ্তার হয়েছে।
হেফাজতের নতুন কমিটি সর্বোচ্চ ৪০ সদস্যের হতে পারে। জুনায়েদ বাবুনগরীই আমীর এবং নুরুল ইসলাম জেহাদী মহাসচিব হচ্ছেন। অন্য পদগুলোতে এবং সদস্যদের তালিকাও চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
হেফাজতের সদস্য সচিব নুরুল ইসলাম জেহাদী দাবি করেছেন, তাদের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সরকারের কোন চাপ নেই।
"সরকার এটার মধ্যে কোন ইন্টারফেয়ার করছে না। আমরাই হেফাজতে ইসলামের চরিত্র এবং লক্ষ্য উদ্দেশ্যকে সমুন্নত রাখার জন্যই করছি।"
মাওলানা জেহাদী আরও বলেন, "হেফাজতে ইসলাম যখন গঠন করা হয়েছিল, তখন থেকেই এটা একটা অরাজনৈতিক সংগঠন। এবং মূল দায়িত্বে অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা ছিলেন, অরাজনৈতিক ব্যক্তিরাই থাকবেন। এর মূল দায়িত্বে কোন রাজনৈতিক ব্যক্তি আসবে না।"
একইসাথে তিনি বলেছেন, রাজনীতিতে জড়িতরা পদে থাবেন না। কিন্তু সংগঠনে থাকবেন। তারা সংগঠন থেকে কাউকে বাদ দিচ্ছেন না।
"রাজনৈতিক কোন কর্মসূচি বা কর্মকাণ্ড হেফাজতের প্রোগ্রামে থাকবে না।"
তবে অরাজনৈতিক চরিত্র বলতে কী বোঝানো হচ্ছে, সে ব্যাপারে তিনি বলেন, "অরাজনৈতিক কর্মসূচি বলতে, যারা ইসলাম বিদ্বেষী বা ইসলামের বিরুদ্ধে লেখে, মহানবী (সা:) এর বিরুদ্ধে লেখে বা কর্মকাণ্ড করে, তাদের প্রতিবাদের জন্যই এই সংগঠন। সেটাই থাকবে।"
আহমদ শফীর মৃত্যুর পর তার ছোট ছেলে আনাস মাদানীর নেতৃত্বে একটি অংশ হেফাজতের নেতৃত্বে জুনায়েদ বাবুনগরীকে মেনে নিতে পারেননি।
তাদের দিক থেকে এখন পাল্টা কমিটি করার হুমকি দেয়া হয়েছে।
তবে এই অংশের সাথে কোন আলোচনায় না গিয়ে নতুন কমিটিতে আহমদ শফীর বড় ছেলে মো: ইউসুফকে রাখা হতে পারে, হেফাজতের এখন নেতৃত্ব থেকে এমন ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে।
শরীফ মোহাম্মদ বলেছেন, সরকারের চাপ বা হেফাজতের অভ্যন্তরীণ সংকট রয়েছে, তবে কওমী মাদ্রাসাগুলো খোলার বিষয়টি বড় চাপ তৈরি করেছে। সেজন্য রাজনীতিকদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠনের বিষয় একটা কৌশল হতে পারে বলেও তিনি মনে করেন।
"এখন কওমী মাদ্রাসার নতুন শিক্ষাবর্ষের সূচনা হয়েছে। অথচ মাদ্রাসাগুলো বন্ধ। তাদের অনেকে মনে করছেন যে সরকারের কঠোরতা হেফাজত কেন্দ্রিক, অথবা মাদ্রাসার ছাত্র ক্যাম্পাসে চলে আসলে কোন জটিলতা হতে পারে কিনা-এগুলো বিবেচনায় নিয়েও সরকার হেফাজতে ইসলাম এবং মাদ্রাসা খোলার ব্যাপারে নেতিবাচক কোন অবস্থানে থাকতে পারেন।"
"এজন্য মাদ্রাসা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা মহলগুলো-তারাও চাচ্ছেন, পরিস্থিতি যাতে এমন না হয় যে সরকারের সাথে দূরত্ব বা জটিলতা বৃদ্ধি পায় এবং শিক্ষাবর্ষ বাধাগ্রস্ত হয়। এজন্যে হেফাজতের নতুন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে শিক্ষা বিষয়ক চাপটাও একটা বড় চাপ এবং বাস্তবতা হিসাবে থাকতে পারে," বলে মনে করেন শরীফ মোহাম্মদ।
তবে হেফাজত নেতা নুরুল ইসলাম জেহাদী বলেন, নতুন কমিটি হলে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে তাদের সংগঠনের কাজে গতি আসবে।
এদিকে কয়েকদিন আগে হেফাজতের ৫০ জনের বেশি নেতার সম্পদের ব্যাপারে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। বিবিসি বাংলা
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।