নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
স্পোর্টস রিপোর্টার : সাফল্য বদলে দেয় যে কোন মানুষেরই জীবন। বাংলাদেশের ফুটবলে যেখানে পুরুষ দল একের পর এক ব্যর্থতা উপহার দিয়ে জাতিকে হাতাশায় ডুবালো, সেখানে মেয়েরা জ্বালালো আশার আলো। এএফসি অনুর্ধ্ব-১৬ মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্ত পর্বে জায়গা পেয়ে লাল-সবুজের কিশোরীরা যেন দেখা দিলো আধাঁর ঘরের বাতি হয়েই। টুর্নামেন্টের বাছাই পর্বে ঘরের মাঠে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে কৃষ্ণা রানীরা জানান দিলো ‘জেগে উঠেছে বাংলাদেশের মহিলা ফুটবল’। তাদের কন্ঠে এখন একটাই সুর ‘আমরাও পারি, জিততেও পারি’। কিশোরীদের এ সাফল্যে উচ্ছসিত সারাদেশ। তাই তো এখন অভিনন্দন ও সংবর্ধনার জোয়ারে ভাসছেন কৃষ্ণা, মারিয়া, সানজিদা, স্বপ্নারা। লাল-সবুজ কিশোরী দলের সাফল্যে গর্বিত বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। যে কারণে চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের সংবর্ধনায় সিক্ত করলো তারা। গতকাল বিকালে পাঁচ তারকা হোটেল সোঁনারগাওয়ে আয়োজিত জাকজমকপূর্ণ এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের কেউ উপস্থিত না থাকলেও ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নাঈমুর রহমান দুর্জয়, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা, বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, চার সহ-সভাপতি, সদস্য ও জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিরা সহ সর্বস্তরের ক্রীড়া সংগঠক ও পৃষ্ঠপোষকরা। দেশের মাটিতে চ্যাম্পিয়ন কৃষ্ণা রানী বাহিনীকে সংবর্ধনা দিতেই হাজির হয়েছিলেন তারা।
এর আগে বিদেশের মাটিতে দু’বার বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৪ মহিলা দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে; কিন্তু এতটা আলোর ঝলকানি ছিল না তাদের উপর। যা দেখা গেলো অনূর্ধ্ব-১৬ দলকে ঘিরে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের ২৩ জন ফুটবলারকে জেমকন গ্রুপ ও সাইফ গ্লোবাল স্পোর্টস ৫০ হাজার এবং ক্যাল্ডওয়েল ডেভেলপার্স ২৫ হাজার টাকা করে আর্থিক পুরষ্কার দিয়েছে। তবে প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন, গোলরক্ষক কোচ মাহবুবুর রহমান লিটু ও সহকারি কোচ মাহমুদা আক্তার অনন্যা ক্যাল্ডওয়েল ডেভেলপার্সের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে পেয়েছেন। আর এসএস সলিউশনস আগামী এক বছর ক্যাম্পে থাকা মেয়েদের মাসিক ভাতা দেবে। তাছাড়া এক বছর এই ২৩ ফুটবলারের শিক্ষা, চিকিৎসাসহ যাবতীয় দায়-দায়িত্ব ও ব্যয়ভার বাফুফের থাকবে বলেও অভিভাকদের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এছাড়া কিশোরী ফুটবলারদের বাফুফের কেন্দ্রীয় চুক্তির আওতায়ও আনা হয়।
আগে এমন উপলক্ষ্য কখনোই আসেনি বাংলাদেশের নারী ফুটবলে। প্রথমবার এমন আনন্দঘন একটি দিন এনে দেয়ায় অনূর্ধ্ব-১৬ কিশোরী দলের সব ফুটবলার সহ কোচিং স্টাফকে ধন্যবাদ জানান বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আজ আমাদের জন্য গর্বের দিন। এই দিনটি পেয়েছি তোমাদের (ফুটবলার) জন্যই। আমাদের আবার সুযোগ করে দিবে এমনভাবে একত্রিত হওয়ার জন্য। আনন্দ করার জন্য।’ সালাউদ্দিন আরো বলেন, ‘চূড়ান্ত পর্বে ওঠায় এখন তোমাদের দায়িত্ব বেড়ে গেলো। আজ থেকে অন্য এক পর্যায়ে চলে গেছো তোমরা। বলা ভলো- আজ থেকে তোমাদের নতুন দিন শুরু হলো।’ কল্ডওয়েলের প্রতিনিধি খাইরুল মজিদ মাহবুবের কথা, ‘এই মেয়েদের খেলা যারাই দেখেছে, তারাই আবিভুত হয়েছে। ওদের জন্য আমরাও গর্ববোধ করি। আজ আমরাই সম্মানিত বোধ করছি ওদের জন্য।’ সাইফ গ্লোবাল স্পোর্টসের কর্ণধার তরফদার মোঃ রুহুল আমিন বলেন, ‘আমরা পুরুষ ও মহিলা ফুটবলের জন্য কার করে যাচ্ছি। ভবিষ্যতেও কাজ করবো।’ জেমকন গ্রুপের অন্যতম পরিচালক কাজী ইনাম আহমেদের কথা, ‘আগামী দিনগুলোতে ফুটবলের সঙ্গেই থাকবো আমরা।’
এদেশের মহিলা ফুটবল নিয়ে দুই স্বপ্নের একটি পূরন হয়েছে; বাকিটাও হবে বলে মনে করেন বাফুফে মহিলা উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরন। তিনি বলেন, ‘দু’টি স্বপ্ন ছিল আমার। একটি এশিয়ার শীর্ষ দশে বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলকে নিয়ে যাওয়া। যা পূরন হয়েছে। এখন ওয়ার্ল্ডকাপে কোয়ালিফাই করার স্বপ্ন বাকি রয়েছে। চূড়ান্ত পর্বে এক থেকে তিনের মধ্যে থাকলেই সেই স্বপ্ন পূরন হবে আমাদের।’ তিনি যোগ করেন, ‘আমাদের এমন স্বপ্ন পূরন সম্ভব হয়েছে মেয়েরা সব কিছু উজার করে খেলার জন্যই। আমাদের জন্য এই সম্মান বয়ে এনেছে। এজন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।’ মেয়েদের এই আর্থিক পুরস্কারকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানি ছোটন। তার কথা, ‘আর্থিক সুবিধা এভাবে চলতে থাকলে মেয়েদের ফুটবলও দ্রুত পেশাদার কাঠামোতে আসতে থাকবে। এবার যেমন সবার অভিভাবকরা এখানে এলেন; দেখলেন তাদের মেয়েরা কেমন আছে। এখন সব অভিভাবকই মেয়েদের নিয়ে নিরাপদ বোধ করবেন। ফলে, আগামীতে অনেক অভিভাবকও মেয়েদের ফুটবলে পাঠাতে আগ্রহ দেখাবেন।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।