Inqilab Logo

শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সাতক্ষীরায় নদীর বাঁধ ভেঙে ও উপচে পানি ঢুকছে গ্রামে

সাতক্ষীরা জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০২১, ৬:৩৩ পিএম

ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সাতক্ষীরার বিস্তীর্ণ এলাকার নদীগুলো ফুঁসে উঠেছে। সকাল থেকেই ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এর জেরে সীমান্ত নদী ইছামতি, উপকুলীয় নদী খোলপেটুয়া, চুনা, কপোতাক্ষসহ এলাকার বিভিন্ন নদীর বাঁধ উপচে পানি ঢুকছে গ্রামে।

বুধবার (২৬ মে) দুপুরে পুর্ণিমার ভরাকোটালের জোয়ারের পানিতে শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, মুন্সিগঞ্জ, কেখালি ইউনিয়নের অধিকাংশ পাউবো’র বাঁধ উপচে নোনা পানি লোকালয়ে ঢুকেছে। এছাড়া, দেবহাটা উপজেলার শাখরা কোমরপুর গ্রামের বিজিবি ক্যাম্পের পাশে ইছামতি নদীর বেড়ি বাঁধ উপচে পানি ঢুকে পড়ে গ্রামে। এতে প্লাবিত হয়েছে কয়েকটি চিংড়ি মাছের ঘের। এর কাছাকাছি সদর উপজেলার হাড়দ্দহা গ্রামের পুরনো স্লুইচ গেটের পশ্চিম পাশে বাঁধের একটি অংশ ভেঙ্গে গ্রামে পানি ঢুকছে । হাড়দ্দহা মাঝের ও উত্তর পাড়ায় ইছামতি নদীর পানি উপচে গ্রামে ঢুকেছে। এসব নদীগুলোতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে বুধবার ৫/৬ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার আমিন উদ্দিন, ইয়াকুব আলী, আনিসুজ্জামান সুমনসহ একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, নদীগুলোতে পানি ফুলে ফেঁপে উঠেছে। ঘুর্ণিঝড় ইয়াস আঘাত না হানলেও দূর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙে বড়ো ধরনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব ব্যক্তিরা অভিযোগের সুরে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন টেকসই বাঁধ তৈরি করেন না। এমনকি যখন বাঁধ ভেঙে যায় তখন পর্যন্ত এসব কর্মকর্তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখেন। এলাকার জনপ্রতিনিধি ও গ্রামবাসীরা স্বেচ্ছা শ্রমের মাধ্যমে প্রতিবারই ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামত করে থাকেন। এলাকায় মজবুত টেকসই বাঁধ তৈরির দাবী জানিয়েছেন এসব গ্রামবাসী।

৯নং সোরা গ্রামের বাসিন্দা ফিরোজ ও রব্বানীসহ অনেকেই জানান, এ অঞ্চলে টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় আবহমান কাল ধরে এ অবস্থার সৃষ্টি। পাউবো কর্তৃপক্ষকে বারবার বলার পরেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। যেনতেন ভাবে নির্মিত পাউবো বাঁধ অল্প আঘাতেই নদীর পানিতে বিলীন হয়ে যায়। যখনই দূর্যোগ সৃষ্টি হয় তখনই পাউবো কর্তৃপক্ষ টেকসই বাঁধ বেঁধে দেওয়ার আশ্বাস দেন। শুধু ভোগান্তি জনগণের।

গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জি.এম মাছুদুল আলম জানান, কপোতাক্ষ নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউনিয়নের লেবুবুনিয়া, গাঁগড়ামারি ৩নং এলাকায় পাউবো বাঁধ ভেঙ্গে পানি ভিতরে প্রবেশ করে। এতে ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম তলিয়ে যায়। একাকার হয়ে গেছে এলাকার মাছের ঘের।

পদ্মপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এড. আতাউর রহমান জানান, খোলপেটুয়া নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউনিয়নের অধিকাংশ পাউবো বাঁধ ছাপিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। এসময় ঝাঁপা, সোনাখালী, পূর্ব ও পশ্চিম পাতাখালীসহ কামালকাটির যাবতীয় মাছের ঘের তলিয়ে গেছে।

দেবহাটার নজরুল ইসলাম, ফজলুর রহমানসহ একাধিক চিংড়ি ঘের ব্যবসায়ী জানান, আজ ভরাকোটাল। পুর্ণিমার পাশাপাশি চন্দ্র গ্রহণ হবে সন্ধ্যায়। রাত ১০ টার পর নদীতে আবার জোয়ার শুরু হবে। এই জোয়ার চলবে গভীর রাত পর্যন্ত। যদি দমকা হাওয়ার সাথে নদীর পানি বৃদ্ধি পায় তাহলে জোয়ারের পানি বাঁধ ভেঙে বা উপচে পড়বে বেড়িবাঁধ সংলগ্ন মাছের ঘেরে ও আশপাশের গ্রামগুলোতে।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সাতক্ষীরায় বুধবার বেলা ১২ টা থেকে ৩ টা পর্যন্ত ৪ মিলিমিটার এবং বিকাল ৩ টা থেকে ৬ টা পর্যন্ত ১৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। রাতে আরো বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আর পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত সাতক্ষীরায় ৩ নং স্থাণীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সাতক্ষীরা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ