Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাতাস বৃষ্টি না থাকলেও পিরোজপুরে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে কঁচা ও বলেশ্বরের পানি

পিরোজপুর জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০২১, ৪:৫৬ পিএম

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব ও পূর্ণিমার জোগায় পিরোজপুরে দমকা হাওয়া বা বৃষ্টি না থাকলেও নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলার প্রধান নদী কচা ও বলেশ্বরের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জোয়ারের পানিতে জেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত এলাকা গুলোতে ঘুরে ঘুরে ত্রাণ সরবরাহ করছেন জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।

জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড জনপ্রতিনিধিদের সূত্রে জানা গেছে, জোয়ারের সময় জেলার নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে ফসলের মাঠ, বাড়িঘর, হাটবাজার, ফেরিঘাট তলিয়ে গেছে। মঠবাড়িয়া পৌরসভার দক্ষিণ বন্দর এলাকা, থানাপাড়া, উপজেলার বড়মাছুয়া, মিরুখালী, দাউদখালী, তুষখালী, ধানীসাফা, বেতমোর ও টিকিকাটা ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ইন্দুরকানি উপজেলার ১০ গ্রাম, কাউখালী উপজেলার ৩০, ভান্ডারিয়া উপজেলা সদরসহ ১০, নাজিরপুরে ১৫, নেছারাবাদ উপজেলার ১৫ ও পিরোজপুর সদর উপজেলার ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলার চরখালী, আমরাজুড়ি, সোনাকুর, বেকুটিয়া ফেরিঘাট জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যানবাহন ও মানুষের চলাচলে কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

পিরোজপুরের বিভিন্ন এলাকার ক্ষতিগ্রস্থরা জানিয়েছেন, জোয়াড়ে পানি উঠে আবার ভাটায় নেমে যায়। অনেক স্থানে ঘর ডুবে গেছে। হাত পা ধুয়ে বিছানায় উঠলেই হয়। রান্নাঘর ডুবে গেছে, রান্না বন্ধ। না খেয়েই থাকতে হচ্ছে। পানি বাড়ায় নৌকা নিয়ে বের হতে হয়েছে। চারপাশে পানি থৈ থৈ করছে। পানি বাড়ছে বাড়ি না ডুবলেও মাছের ঘের ডুবে গেছে মাছ বের হয়ে যাচ্ছে। বাড়ির সামনের প্রধান সড়কে হাটু সমান পানি উঠছে। বাড়ির অসবাবপত্র সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। না খেয়ে থাকার অবস্থা।ইন্দুরকানী উপজেলা চেয়ারম্যান মতিউর রহমান জানিয়েছেন, ইন্দুরকানী উপজেলার পাড়েরহাট বাজার, কালাইয়া, পূর্ব ইন্দুরকানি, খোলপটুয়া, ট্যাংরাখালী, চন্ডিপুর, সাউদখালী, চরবলেশ্বর, পাড়েরহাট গ্রাম ও চরখালী ফেরিঘাট এলাকাসহ আরো এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সাউথখালীতে খাদ্য সামগ্রী পাঠানো হয়েছে। সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে তাদের জন্য শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিস্থিতি খারাপ হলে সকল নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে খাবার পৌছানো হবে।

কাউখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ মিয়া বলেন, উপজেলার ৩০ গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে সবজিক্ষেতসহ মাছের ঘেরের বেশ ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তবে প্লাবিত এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমান সরকারী খাদ্য সহায়তা পাঠানো হবে। নাজিরপুর উপজেলার দেউলবাড়ির ইউপি চেয়ারম্যান মো. অলিউল্লাহ বলেন, নাজিরপুর উপজেলার মনোহরপুর, পদ্মডুবি, দেউলবাড়ি, সোনাপুর, উত্তর গাওখালী, উত্তর পাকুরিয়াসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন সরকারী সহযোগীতা পৌছাচ্ছে।
পিরোজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বশির আহম্মেদ বলেন, ঘূণিঝড় ও তীব্র জোয়াড়ের কারনে পানি বেড়েছে। যারা ঝুকিতে আছে অর্থাৎ নিচু এলাকা তাদেরকে আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। সার্বক্ষনিক সতর্ক থাকতে বলছি। ঘুর্ণিঝড় উড়িষ্যায় আঘাত হেনেছে যার কারনে আমাদের জোয়াড়ের পানি ছাড়া আর তেমন কোন ঝ‚কি নাই।

পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক আবু আলী মো: সাজ্জাদ হোসেন জানান, প্লাবিত গ্রামগুলোর অসহায় মানুষকে সার্বিক সহযোগিতার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা কাজ করেছেন। কোথাও বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। আমরা প্লাবিত এলাকাগুলো ঘুরে ঘুরে খাদ্য সহায়তা পৌছাচ্ছি। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় জেলার ৭ উপজেলায় ৫৫৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া ৪৪৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২৩৫টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও ৩২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। জেলায় ৬৮টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঘূর্ণিঝড় ইয়াস


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ