পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গ্রীষ্মের এ দাবাদাহে সূর্যের সবটুকু উত্তাপ কেড়ে নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাস সেজেঁছে মন মাতানো রূপে। গাছে গাছে হরেক রকমের ফুল ফসরা সাজিঁয়ে রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক দিয়ে পা রাখলেই মনে হবে এ যেন এক স্বর্গরাজ্য। মনের অজান্তে চোখ দুটা চলে যাবে রাস্তার দুধারে দাড়িয়ে থাকা গাছ গুলোর দিকে। কারন সে গাছেই ঝাঁকে ঝাঁকে, লাখে লাখে, স্তবকে স্তবকে, ফুটে আছে হরেক রকমের ফুল। কোন ফুল শ্বেত, কোনটা যেন রক্তমাখা, আবার কোনটা হলুদ। কোথাও মৌমাছি, কোথাও ভ্রমর বাসা বেধেঁছে। আবার সেখানে কুকিল মন মাতানো ‘কুহু কুহু’ সুর ধরেছে। বাতাসের সঙ্গে মন মাতানো ফুলের সুরভীতে ছন্দময় হয়ে ওঠেছে জাবির আকাশ-বাতাস। তার মাঝে আবার বৃক্ষের কচিপাতার সবুজ রং। উঁচু-নিচু লাল মাটি। কোথাও সমতল ভূমি। চারদিকে সবুজের সমারোহ। যেন গ্রীষ্মের এ গরমে সবুজ তারুণ্যে জেগে উঠেছে জাবির প্রতিটি অঙ্গন। যেন খুজেঁ পেয়েছে নতুন বউয়ের রূপ। প্রাণ জুড়ানো এ দৃশ্য দেখে যে কেউ থমকে দাড়াতে বাধ্য হয়।
গ্রীষ্মের আগমন যে প্রকৃতিতে ঘটেছে তা বেশ ভালো ভাবেই বুজা যায় এ ক্যাম্পাসে। প্রকৃতি যেন তার সব সম্ভার দিয়ে জাবিকে সাজিঁয়ে তুলেছে। গাছে গাছে কৃষ্ণচূড়া, সোনালু, রাধাচূড়া, ক্যাসিয়া রেনিজারাসহ নানা ফুল। বাহারি এ ফুলের সৌন্দর্যে আর মিষ্টি সুবাস লালন করছে এখন লাল মৃত্তিকার প্রকৃতিতে। তার সাথে মৌসুমী ফল আম-কাঠাল, নানা জাতের পাখি, বিভিন্ন রকমের প্রজাপতি এবং মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা শহীদদের স্মৃতির অমলিন ভাস্কর্য আর নান্দনিক অট্টালিকাসমৃদ্ধ এ ক্যাম্পাসে যেন প্রকৃতি তার সব সৌন্দর্যই উজাড় করে দিয়েছে। গাছের জীর্ণতা ভেঙ্গে নতুন কুড়িতে ছেয়ে গেছে গাছগুলো। জীবননান্দ দাশ হয়তো প্রকৃতির এ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েই রচনা করেছেন তার অমর কীর্তি ‘রূপসি বাংলা’ কাব্য।
গ্রীষ্মের অতি পরিচিত কৃষ্ণচূড়া ফুল আগুন রাঙা রূপের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে ফুটে আছে এ ক্যাম্পাসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলাভবন থেকে শুরু করে বিশমাইল গেট পর্যন্ত প্রতিটি রাস্তায় অসংখ্য গাছে এ ফুলের রক্তিম আভায় ছেয়ে গেছে পুরো ক্যাম্পাস। আকাঁবাকাঁ পথে ঝাঁকবাঁধা লাল কৃষ্ণচূড়ার মিতালি দেখে মনে হয় যেন গাছের পাতাগুলোতে আগুন লেগেছে। গন্ধহীন এ ফুলে পাপড়ি থাকে পাঁচটি। নমনীয় কোমল, মাঝে লম্বা পরাগ। ফুটন্ত কৃষ্ণচূড়া ফুলের মনোরম দৃশ্য দেখে যে কেউ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। এ গাছের পাতা ক্ষুদ্র, যৌগিক ও চিরুনির মতো সাজাঁনো। এই সময় ‘ক্যাসিয়া রেনিজেরা ফুল’ লালন করছে অন্য রকম সৌন্দর্য। এ ফুলে ছেয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃক্ষরাজি। শ্বেতশুভ্র ভিনদেশি এ প্রজাতির ফুলগাছের আদি নিবাস জাপান। এর স্নিগ্ধ রূপ ও রং বৈচিত্র থেকে চোখ সরিয়ে নেওয়া কঠিন। ফুলটির বৈজ্ঞানিক নাম ‘বার্মিজ পিংক ক্যাসিয়া’। মধ্যম আকারের এ বৃক্ষের উচ্চতা সাধারণত ৮ থেকে ১০ মিটার লম্বা। চিকন ডালগুলো ঝুলে থাকে। রোপণের চার-পাঁচ বছরের মধ্যে বৃক্ষে নয়নাভিরাম শ্বেতশুভ্র গোলাপি ফুল আসে। এই বৃক্ষ আমাদের সহজাত বৃক্ষ নয় বলে এটি তুলনামূলকভাবে কম পরিচিত। বর্ষা ছাড়া মোটামুটি বছরের বেশির ভাগ সময়ই বৃক্ষটি পত্রহীন অবস্থায় থাকে। আর পত্রহীন এ বৃক্ষটিতে ফেব্রুয়ারির শেষদিক থেকে শুরু করে এপ্রিল, মে মাস পর্যন্ত দৃষ্টিনন্দন ফুলের দেখা মেলে। এরপর ক্রমে নতুন পাতা গজায় আর গোলাপি ফুলগুলো ক্রমে সাদা হতে থাকে। ক্যাসিয়া রেনিজেরা বাংলাদেশে খুব স্বল্প পরিচিত এবং অদ্ভুত সুন্দর ফুল হিসেবে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে।
প্রকৃতির এই এমন অবস্থায় জাবির এই অপরূপ আঙ্গিনায় নেই শিক্ষার্থীদের পদচারণা। মাহামারি করোনার কারণে ক্যাম্পাস থেকে বহু দূরে আছেন শিক্ষার্থীরা। যারকারণে জাবির এই প্রকৃতি যেন নিস্তব্ধ নিশ্চুপ হয়ে আছে।
তবে লকডাউন সত্ত্বেও এই ক্যাম্পাসের রূপে আকৃষ্ট হয়ে ছুটে আসছেন নানা মহলের মানুষ। ঢাকার ইট-পাথরের মাঝে বাস করতে করতে যারা যারা হাঁপিয়ে উঠেন, তারাই ছুটে আসেন ঢাকা থেকে খানিকটা দূরে এই সবুজে মাখা ক্যাম্পাসটিতে। কারণ এখানেই আছে এক অনাবিল আনন্দ ও উপভোগের স্বর্গরাজ্য। প্রকৃতি তার রস, রূপ, সুবাস দিয়ে প্রবলভাবে মোহিত করে রেখেছে এ স্থানটিকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।