মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বর্তমান শতাব্দীর মাঝামাঝিতে জন্ম হারের চেয়েও বেশি হতে শুরু করেছে মৃত্যু হার। ফলে বিশ্বের দেশগুলো জনসংখ্যার এখন সঙ্কোচনের মুখোমুখি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমনটি চলতে থাকলে বদলে যাবে ইতিহাস। প্রথম জন্মদিনের অনুষ্ঠানগুলো মৃত্যু সংক্রান্ত অনুষ্ঠানগুলোর থেকে বিরল হয়ে উঠবে এবং নিরব ও শূন্য বাসস্থানগুলো একটি সাধারণ দৃশ্যে পরিণত হবে।
জনসংখ্যাবিদরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, এই শতাব্দীর শেষার্ধে বা সম্ভবত এরও আগে বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা প্রথমবারের মতো একটি স্থিতিশীল সঙ্কোচন বলয়ে প্রবেশ করবে। এর ফলে বদলে যেতে পারে তথাকথিত পারিবারিক ব্যবস্থা এবং জীবনধারার ধারণা। ইতোমধ্যে বিশেষত পূর্ব এশিয়া এবং ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছে সঙ্কোচিত জনসংখ্যার প্রতিক্রিয়াগুলো। হাঙ্গেরি থেকে চীন, সুইডেন থেকে জাপান পর্যন্ত সরকার তরুণদের প্রয়োজনের সাথে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর দাবির ভারসাম্য বজায় রাখতে লড়ছে। সন্তান জন্মদানের বিষয়টি ইতিবাচক (মহিলাদের জন্য আরও বেশি কাজের সুযোগ) এবং নেতিবাচক উভয় কারণের মধ্য দিয়ে সবচেয়ে গূরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর (অবিচ্ছিন্ন লিঙ্গ বৈষম্য এবং উচ্চ জীবনযাত্রার ব্যয়) অন্যতম হয়ে উঠেছে।
ইতোমধ্যে, ইতালির মাতৃত্বকালীন ওয়ার্ডগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। উত্তর-পূর্ব চীনে জনশূন্য ভৌতিক শহরগুলোর সংখ্যা বাড়ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী খুঁজে পাচ্ছে না এবং জার্মানিতে উত্তরাধিকারের অভাবে কয়েক হাজার হাজার সম্পত্তি পার্কে পরিণত হয়েছে। কয়েক দশক ধরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ধীরতম হার দেখানো চীন এবং আমেরিকার আদমশুমারিগুলো এ মাসে উভয় দেশের জন্যই একটি কঠিন সময়ের ইঙ্গিত করেছে।
আফ্রিকাতেও উর্বরতার হার প্রায় সর্বত্রই হ্রাস পাচ্ছে। এমনকি দীর্ঘদিন ধরে ভারত ও মেক্সিকোর মতো দ্রুত বর্ধনশীল দেশগুলোতেও প্রতি পরিবারে ২.১ হারে জন্মহার কমছে বা আরও নীচে অবস্থান করছে। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডার জন্মহার মতো ১.৫ থেকে ২ এর মধ্যে হলেও অভিবাসীদের কারণে জনসঙ্কোচনের প্রভাব কমেছে।
২০১৯ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার ফার্টিলিটির রেকর্ড সর্বনিম্ন ০.৯২ এ নেমেছে, যা উন্নত বিশ্বের সর্বনিম্ন হার। সিউলের মতো বড় বড় শহরগুলোর বিস্তার অব্যাহত থাকলেও মফস্বলগুলোর বেশিরভাগ স্কুল বন্ধ ও পরিত্যক্ত এবং খেলার মাঠগুলো আগাছায় ভরা। কারণ পর্যাপ্ত শিশু নেই।
হাজার হাজার মাইল দূরের ইতালিরও একই অবস্থা। সেখানে শিশু জন্মে সহায়তাকারী নার্স এনরিকা সাইলো বর্তমানে বেশিরভাগ বয়স্ক রোগীদের দেখাশোনা করেন। তিনি বলেন, ‘এখন সেখানে নীরবতা ও শূন্যতার অনুভূতি বিরাজ করছে।’ গত শুক্রবার ইতালির জনসংখ্যা সঙ্কট নিয়ে একটি সম্মেলনের বক্তব্যে পোপ ফ্রান্সিস বলেন, ‘জনসংখ্যার শীতকালটি এখনও হীম ও অন্ধকার।’
জাপানে জনসংখ্যা হ্রাস পেতে পেতে যেখানে এখন প্রাপ্তবয়স্কদের ডায়াপার শিশুদের ডায়পারের তুলনায় বেশি বিক্রি হচ্ছে। সুইডেনের কিছু শহরে স্কুলগুলো প্রবীণদের যত্নশালায় রূপান্তরিত করা হয়েছে এবং প্রায় সর্বত্র বয়স্ক ব্যক্তিদের কাজ চালিয়ে যেতে বলা হচ্ছে। জার্মানিতে অবসরের বয়স ৬৭ থেকে উন্নীত করে এখন ৬৯ করার কথা বিবেচিত হচ্ছে।
গত বছর দ্য ল্যানসেটে বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দলের প্রকাশিত অনুমান অনুসারে, ২১০০ সালের মধ্যে বিশে^র ১শ’ ৯৫টির মধ্যে ১শ’ ৮৩টি দেশ ও অঞ্চল প্রজনন উর্বরতা স্তরের নিচে চলে যাবে। তাদের মডেল অনুসারে ২১০০ সাল নাগাদ চীনের ১৪১ কোটি জন্যসংখ্যা তীব্রভাবে হ্রাস পেয়ে ৭৩ কোটিতে নেমে আসবে।
অনেক নারীর কম বাচ্চা হচ্ছে, কারণ এটাই তারা চায়। তারা ছোট জনসংখ্যার ফলে বেশি বেতন, আরও সম-অধিকারের সমাজ, কম পরিবেশ দূষণ এবং কম সংখ্যক বাচ্চার কারণে উচ্চমানের জীবনে আগ্রহী। দেশগুলোও হয়তো একসময় তাদের জনসংখ্যা বাড়াতে অধিক শিশু সম্পন্ন মহিলা বা অভিবাসীদের বাসস্থান, চিকিৎসা, চাকরি ও ভাতাসহ সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধার প্রস্তাব দেবে।
অনেক জনসংখ্যাবিদ বলেছেন যে, ভবিষ্যতের ইতিহাসবিদদের কাছে বর্তমান অবস্থাটি একটি রূপান্তর বা গর্ভকালীন সময়কালের মতো দেখাতে পারে, যেসময় মানব সভ্যতা নিজেদের পছন্দসই পরিবার গড়ে তোলার জন্য বিশ্বের প্রতি আরো আন্তরিক ও অতিথিপরায়ণ হওয়ার জন্য পরিণত হয়ে উঠবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।