Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সউদী প্রবাসীদের চাপা কান্না

সাউদিয়ার টিকিট কাউন্টারে দীর্ঘ লাইন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম

বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংক্রমণরোধে সউদী সরকার ঘোষিত নিজ খরচে ৭ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকার নতুন নিয়মের কারণে চারদিন ধরে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন শত শত সউদী প্রবাসী বাংলাদেশি। নতুন নিয়মের কারণে গত ২০ মে থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সউদী আরবে ফ্লাইট চলাচল স্থগিত করেছে।
গতকাল সারাদিন সউদী এয়ারলাইন্স (সাউদিয়া) যাত্রী পরিবহন করছে। এ কারণে গত ২০ মে থেকে প্রতিদিন শত শত সউদী প্রবাসী রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাঁচ তারকা হোটেল সোনারগাঁওয়ের ভেতরে অবস্থিত সউদীয়ার কার্যালয়ে সউদী নির্দেশনা অনুসারে ৭ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য হোটেল বুকিং দিয়ে টিকিট কনফার্ম করার জন্য ধরনা দেন।
গতকাল সরেজমিনে হোটেল সোনারগাঁওয়ের সউদী এয়ারলাইন্স টিকিট কার্যালয়ে গিয়ে এবং উপস্থিত প্রবাসীকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, দিনভর প্রচণ্ড গরমে লাইনে দাঁড়িয়ে কেউ টিকিট পাচ্ছেন আবার কেউ বিফল হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। সউদী সরকারের নতুন নিয়মের কারণে সউদী প্রবাসী বাংলাদেশিদের হোটেলে কোয়ারেন্টিন বাবদ অতিরিক্ত ৬৫ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে।

যারা আগে থেকে ফিরতি টিকিট কনফার্ম করে আসছেন না তাদের অতিরিক্ত দামে টিকিট কিনতে হচ্ছে। আগে থেকে ফিরতি টিকিট কাটা রয়েছে এমন যাত্রীদের অনেকেই না বুঝে সউদী সরকার নির্ধারিত আবাসিক হোটেলের বাইরে নিজ উদ্যোগে কিংবা সউদীতে যে কোম্পানিতে চাকরি করেন তাদের মাধ্যমে হোটেল বুকিং দিয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাচ্ছেন। কিন্তু সউদী সরকারের নির্ধারিত হোটেল বুকিং না থাকায় তাদের বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। নতুন করে টিকিট সংগ্রহে তাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও সঠিক তথ্য পাচ্ছেন না কেউ কেউ। সউদী সরকারের আকস্মিক সাতদিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনের নির্দেশনায় যারা স্বল্প বেতনে চাকরি করেন তারা বিপদে পড়েছেন। অনেকেই জমিবন্ধক রেখে কিংবা ঋণ নিয়ে কোয়ারেন্টিন হোটেলের টাকা জোগাড় করছেন।

সউদী প্রবাসী একাধিক কর্মী জানান, বিদেশ বিভূঁইয়ে দুই-তিন বছর চাকরি করে ছুটিতে এসেছিলেন তারা। ফিরতি ফ্লাইটের দিনক্ষণও পূর্বনির্ধারিত ছিল। সেভাবেই সবাই সউদী আরবের বিভিন্ন শহরে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। টাকা-পয়সা সঙ্গে করে যা নিয়ে এসেছিলেন, তার প্রায় সবই খরচ করে ফেলেছেন। ফিরে গিয়ে কাজে যোগদান করবেন এমন চিন্তা থেকেই টাকা-পয়সা হাতে রাখেননি। কিন্তু গত সপ্তাহে সউদী সরকার এই মর্মে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে যে, প্রবাসী কাউকে সউদী আরবে আসতে হলে সরকার নির্ধারিত হোটেলে ৭ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে টিকিট কনফার্ম থাকার পরও তাদের কমপক্ষে ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা নতুন করে জোগাড় করতে হচ্ছে।

সউদী সরকারের নতুন এই নির্দেশনা জানার পর থেকে অনেক প্রবাসী কর্মীর রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। অনেকে কষ্ট করে টাকা জোগাড় করতে পারলেও নির্ধারিত ফ্লাইটে যেতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন। কেউবা ফ্লাইটের ৭২ ঘণ্টা আগে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে রাখলেও নির্ধারিত ফ্লাইটে যেতে না পারায় আবার কবে ফ্লাইট হবে তা নিশ্চিত হতে না পারায় করোনা পরীক্ষাও করাচ্ছেন না। ফলে প্রতি ক্ষেত্রে তাদের ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।

অনেক যাত্রী আলাপকালে সউদী ও বাংলাদেশ সরকার আলাপ-আলোচনা করে হোটেল কোয়ারেন্টিনের খরচ সরকারিভাবে বহন করার দাবি জানান। তাদের বক্তব্য বিদেশে আমরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আয় করে রেমিট্যান্স দেশে পাঠাই। সে রেমিট্যান্সে দেশের রিজার্ভ বাড়ছে। অথচ বিদেশ যেতে আমাদের নানাভাবে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সরকার এ ব্যাপারে সউদী সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রবাসী শ্রমিকদের কিছু ছাড় আদায় করে নিয়ে সুবিধা দিতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সউদী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ