Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শাহজালাল ও শাহপরাণের মাজার

প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আফতাব চৌধুরী

বৃহত্তর সিলেটবাসীর শত বছরের কেন্দ্রবিন্দু সিলেট শহর। এরই মাটিতে শায়িত তাপসকুল শিরোমনি হযরত শাহজালাল (রঃ) এবং তার সঙ্গের ৩৬০ আউলীয়াসহ আরো অনেক মহান ব্যক্তি। সিলেটকে বলা হয় ৩৬০ আউলীয়ার দেশ। সিলেট নামের সঙ্গে এ আউলীয়াদের নাম স¤পৃক্ত।
সাধারণত প্রগাঢ় ব্যক্তিত্বশালী অনুপম চরিত্র মাধুর্যের অধিকারী দরদপ্রবণ প্রাণের নিকট সংসারে অনাসক্ত ধর্মপ্রাণ লোকজন অনাহতভাবেই নতুন কোন স্থানে ভিড় জমায়। তাদের বাড়িঘর আত্মীয়স্বজন ত্যাগ করে মহান সাধকের সান্নিধ্যে থেকে আল্লাহর আরাধনায় রত থেকে তাদের জীবনের সার্থকতা খুঁজে পায়। হযরত শাহজালাল মজররদে এ্যমনি (রঃ)-এর বেলায়ও হয়েছে তাই। তিনি সুদূর ইয়েমেন থেকে ১৩০৩ সালে ৩৬০ জন দরবেশসহ সিলেটে প্রবেশ করেন। ৩০ বছর সিলেটে অবস্থানের পর ৬২ বছর বয়সে ইন্তেÍকাল করেন। তার মৃত্যু সময় ১৩৪০ সালের ১৯ মে বৃহস্পতিবার। পরদিন শুক্রবার তার হুজরাখানার পাশে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। তার এ শূন্য অবস্থান ও সমাধিকে দরগাহ বলা হয়ে থাকে। চতুর্দিকে গাছপালা বেষ্টিত এক মনোরম পরিবেশে শায়িত শাহজালালের দরগাহ এদেশবাসীর নিকট এক আধ্যাত্মিক ও আকর্ষণীয় স্থান। ১৬৫৭ সালে সম্রাট আওরঙ্গজেব শাহজালালের সমাধির পাশে এক মসজিদ নির্মাণ করেন যাতে মুসল্লি ও ভক্তরা এখানে নামাজ পড়তে পারেন।
হযরত শাহজালালের ব্যবহƒত দুটি বড় ডেগ মৃগবর্ম, খড়ম ইত্যাদি দর্শক ও ভক্তদের আজ ও আকৃষ্ট করে থাকে। ডেগ দুটির মধ্যে বড়টির ওজন ৫ মণ ৩ সের ২ পোয়া যা উরস ও অন্যান্য বিশেষ অনুষ্ঠানে ব্যবহƒত হয়ে থাকে। পাশে এক ছোট্ট পুকুর চারদিকে দেয়ালমেরা। এর মধ্যে রয়েছে ছোট বড় অনেক গজার মাছ। এসব ঐতিহাসিক মাছ দেখতে প্রতিদিন ভিড় হয় হাজার হাজার মানুষের। আর এসব মানুষ আসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে। অতি নিকটে মাজার এর পশ্চিম প্রান্তেÍ একটি ছোট্ট কূপ এর মধ্যে রয়েছে সোনালি রংয়ের মাগুর ও কই মাছ যা দর্শকদের আকৃষ্ট করে। এসব মাছকে সোনালি মাছ বলা হয়।
কথিত আছে দিল্লীর নিজাম উদ্দিন নামক এক প্রখ্যাত দরবেশ সিলেটের হযরত হযরত শাহজালালকে সুরমা ঞ্ছরং এর কিছু কবুতর উপহার দিয়েছিলেন। এদের বিশেষ রং ও আকৃতি আকর্ষণীয়। ঝাঁকে ঝাঁকে এসব কবুতর উড়ে বেড়ায় কেউ হাত দেয় না বা বধও কওে না। ঘুরে বেড়ায় এসব কবুতর এদিক ওদিক। রাতে বা দিনে ও কোন কোন সময় কবুতরদের সুরমা নদীর উপর লৌহ নির্মিত কীন ব্রিজে বসে থাকতে দেখা যায়। মনে হয় এরা যেন পাহারাদারের ভূমিকায় সদা জাগ্রত।
শাহজালাল (রঃ)-এর দরগাহ জিয়ারত করতে দেশ বিদেশ হতে আসেন অসংখ্য ভক্ত। ভক্তদের মধ্যে অন্যান্য ধর্মের লোকজনও রয়েছেন। তারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এ দরগাহে এসে। প্রতি বছর আরবী জিলকদ মাসের ১৯ তারিখ শাহজালালের (রঃ) বার্ষিক উরস মোবারক স¤পন্ন হয়। এ উপলক্ষে লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম হয় এ মাজার প্রাঙ্গণে। দেশের বিভিন্ন স্থান হতে ট্রেন, বাস ও বিমানে ভক্তরা আসতে থাকেন সিলেট।
শাহজালাল (রঃ)-এর মাজারে যারা আসেন তাদের প্রায় সবাই শহর হতে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে শাহপরাণের মাজার জিয়ারাত করতে যান। সবুজ ছায়ায় ঘেরা সামান্য উচ্চ টিলার উপর এ মাজার দর্শনীয় স্থান। ওখানে এক বিরাট কারুকার্য খচিত মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। এর নির্মাণের অর্ধেক খরচই বহন করছেন জিয়ারতে আগমণকারী ভক্তরা।
শাহজালাল ও শাহপরাণ এ দু তাপসকুলের মাজার ৭ কিলোমিটারের ব্যবধানে অবস্থিত দুটি ছোট্ট টিলার দর্শনীয় স্থান। সিলেট শহরের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তেÍ অবস্থিত এ টিলা দুটোর গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে এর বুকে শায়িত মনীষীদের জন্য। ভক্তদের আর ভ্রমণকারীদের আগমনে যা থাকে সর্বদাই সরগরম। সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগে স্থান দুটোকে আকর্ষণীয় করা সম্ভব আর তা করা হলে সিলেটে ভ্রমণকারী পর্যটকদের আগমণ ও আকর্ষণ আরো বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শাহজালাল ও শাহপরাণের মাজার

১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
আরও পড়ুন