বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
এশার নামাজের পর ভাববেন যে আরো একটু ইবাদত করি। কিন্তু তা অসম্ভব, কারণ তারা মসজিদে তালা লাগিয়ে দেবে। রাত সাড়ে নয়টার মধ্যে আপনাকে বের হয়ে যেতে হবে। ইসরাইলিরাই সবশেষে মসজিদ পরিদর্শন করবে।
তারা কি মসজিদকে সম্মান করে খালি পায়ে প্রবেশ করবে? না মোটেই না। আর সবকিছু আপনার সামনে ঘটলেও আপনি কিছু বলতে পারবেন না। ফিলিস্তিনিদের যদি আপনি প্রশ্ন করেন মুসলিমরা কোথায়? এখানে এত কম মুসলিম কেন? তারা বলবে, মসজিদে আসতে গেলে কমপক্ষে ৫ বার আইডি কার্ড আর পাসপোর্ট দেখাতে হয়। একজন স্থানীয় লোকের মসজিদে প্রবেশ করতে ৫ বার আইডি, পাসপোর্ট দেখাতে হয়। আর যদি সে পাসপোর্ট আনতে ভুলে যায় তার ক্ষতি হতে পারে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে।
৭ কি.মি যেতে তাদের দুইবার থামতে হয়। গাড়ি থেকে নেমে দুইবার আইডি দেখাতে হয়। স্ত্রী সাথে থাকলে তাকেও নামতে হয়। পুরো গাড়ি সার্চ করে তারা। প্রতিদিন এটা চলতে থাকে। আর কাউকে যদি সেই পথে ২-৪ বার চলতে হয় তাকেও সেই একই পরিচিত গার্ড আগের মতো চেক করে। এমন সময় আপনার কেমন লাগবে? এত বাজে ব্যাপার।
তো আমরা হাইওয়ে দিয়ে চলতে চলতে ফিলিস্তিনের পবিত্র ভ‚মি দেখছিলাম। আর হঠাৎ এমন কিছু অদ্ভুত জিনিস দেখছিলাম যেগুলো সেখানে থাকার কথা ছিল না। দেখলাম ঝোপের মাঝে একটা কন্টেইনার পড়ে আছে। জানেন সেগুলো কেন আছে? ফিলিস্তিনের জমিতে কোনো এক ইসরাইলি তার কন্টেইনার রেখে দিয়েছে।
সে এসে এখানে বসে থাকে। কিছু করে না। এভাবে মাস, বছর দেখে আপনি অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। যখন কোনো ফিলিস্তিনি আর প্রশ্ন করে না এই কন্টেইনার সম্পর্কে, তখন সেই ইসরাইলি এখানে বাড়ি তৈরি করে। সে জমি তার হয়ে গেল! সব যায়গায় এমন ছোট ছোট কন্টেইনার দেখতে পাবেন।
সময় শেষ। আরো কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করি, যখন আমরা মসজিদে খলিলে প্রবেশ করি যেখানে ইবরাহিম (আ.)-কে কবরস্থ করা হয়। আমি বাড়িয়ে বলছি না। ইতিহাস ঘেটে দেখেন মসজিদে খলিল মুসলিমদের অধিকারে ছিল। ১৯৯৪ সালে যখন মুসলিমরা এখানে ফজরের সালাত আদায় করছিল এক ইহুদি ডাক্তার সেখানে গিয়ে সিজদারত মুসলিমদের গুলিবর্ষণ করে। ৩০ জনকে হত্যা করে ১২৫ জনকে আহত করে।
এরপর কি হয়েছিল জানেন? ইসরাইলিরা মসজিদটি বন্ধ করে দেয় এবং তদন্ত শুরু করে দেয়। সেই তদন্ত শেষে তারা মসজিদের অর্ধেক দখলে নিয়ে ইহুদি উপাসনাগার বানায়। আর সেই অমানুষ (ডাক্তার) তাকে কি বলব আমি জানি না, তার কবরটি মন্দিরে পরিণত হয় এবং কট্টর ইহুদিরা সেখানে গিয়ে তার কবরের কাছে প্রার্থনা করে। তাকে হিরো বলে।
শপথ আল্লাহর, আপনি ফিলিস্তিনে গিয়ে দেখবেন যা টিভিতে দেখেন তার চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। আল্লাহর কসম সেখানকার অত্যাচার একজন মুসলমি এর চোখের দিকে তাকালে দেখতে পারবেন। তাদের চোখ দেখলে বুঝতে পারবেন তারা অন্য মুসলিম ভাইদের আশা করে আছে। সময় কম তাই আরো অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারলাম না।
ইসরাইলিরা চায় আপনি ফিলস্তিনকে ভুলে যান। এটাই সত্যি। তারা টাকা, ট্যুরিজম কিছুই চায় নাঅ। তারা চায় আপনি (মুসলিম) আর ফিলিস্তিনিরা যাতে ধ্বংস হয়ে যায়। যখন সেই জায়গার নাম মুসলিমদের হৃদয় থেকে মুছে যাবে তখন তারা সার্থক।
কখনো ভেবে দেখেছেন আমরা ফিলিস্তিন সম্পর্কে এত কম জানি কেন? মসজিদ আল কুদসের ইমামের একটা অনুরোধ পেশ করে শেষ করছি। তিনি আমাকে বলেন, ‘দয়া করে ফিরে যান। আর মুসলিম যুবকদের বলেন তারা যেন এখানে আসে। এবং তারা বুঝতে পারবে ফিলিস্তিনে যা ঘটছে তা পুরোপুরি বাস্তব।’ -অস্ট্রেলিয়ান শায়খ মুহাম্মাদ হাবলোসের ইংরেজি লেকচার থেকে অনূদিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।