পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মধুমাস শুরু। প্রশাসন নির্ধারিত আমপঞ্জি অনুযায়ী আজ (২০ মে) থেকে গোপালভোগ দিয়ে আম পাড়া শুরু হচ্ছে। তবে ভালোমানের পরিপক্ব বিষমুক্ত আম পেতে আরো কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে। তীব্র দাবদাহ এবং কাক্সিক্ষত বৃষ্টিপাতের অভাবে এবার আশানুরূপ ফলন যেমন হয়নি তেমনি আমের আকারও অন্য বছরের তুলনায় ছোট হয়েছে। এতে বাজারে আমের দাম কম। এ ছাড়া লকডাউনের কারণে দূরপাল্লার বাস, ট্রেন, লঞ্চ এসব বন্ধ রয়েছে। তাই সারাদেশে আম বাজারজাত করা নিয়েও চিন্তিত চাষিরা। সঠিকভাবে বাজারজাত করতে না পারলে কোটি কোটি টাকা লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা।
গত বছর করোনার কারণে দেশের বাজারে আম বাজারজাত করতে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। অনলাইনের মাধ্যমে আম সারাদেশে বিক্রি হলেও তাতে চাষিরা নয়, মধ্যস্বত্বভোগীরাই লাভবান হয়েছে। করোনার কারণে গত বছর সাতক্ষীরার আম বিদেশে রফতানি করা সম্ভব হয়নি। তবে এবার সাতক্ষীরার আম আবার ইউরোপে রফতানি হচ্ছে। এবার আমের আকার ছোট হওয়ায় এবং করোনা মহামারির বিধিনিষেধের কারণে রফতানির পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী হচ্ছে না। এবার ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সাতক্ষীরার ৫শ’ কেজি আম যাচ্ছে। আমের আকার ভালো হলে এবং করোনামহামারির বিধিনিষেধ না থাকলে ৩ হাজার কেজি আম রফতানির আশা ছিল চাষিদের।
গত বছর আম্ফান ঝড়ে আমচাষিরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এবার বৃষ্টি না হওয়ায় দীর্ঘ খরার কারণে আমের গুটি ঝরে পড়েছে। এতে কাক্সিক্ষত ফলন হয়নি। আমের গুটি রক্ষা করতে বাগানে প্রচুর সেচ দিতে হয়েছে। খরায় আম ঝরে পড়া থেকে বাঁচাতে ব্যবহার করতে হয়েছে ওষুধ। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি হয়েছে। তাই সঠিকভাবে বাজারজাত নিয়ে চাষিরা চিন্তিত। সারাদেশে চলছে লকডাউন। দূরপাল্লার বাস, ট্রেন, লঞ্চ এসব বন্ধ রয়েছে। এতে পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে যাবে। সরকার যদি আম বাজারজাতের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ না করে তাহলে এবারও চাষিরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হবে।
সাতক্ষীরা সদরের কুখরালি গ্রামের আমচাষি মোকছেদ মোড়ল জানান, ৩২ বছর ধরে আমের ব্যবসা করি। আমার বাগানের অনেক আম বিদেশে গিয়েছে। গত বছর ঝড়ে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ২০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় আমের গুটি ঝরে পড়েছে। সেচ ও ওষুধ দিয়ে আম রক্ষা করতে অনেক খরচ করতে হয়েছে। এবার আমের আকার ছোট হয়েছে। খুব গরম পড়ায় গাছেই পেকে যাচ্ছে আম। আকার ছোট হওয়ায় বাজারে আমের দাম অন্য বছরের তুলনায় কম। এ অবস্থায় ভালোভাবে বাজারজাত করতে না পারলে এবারও লাভ তো দূরের কথা লোকসান গুনতে হবে।
প্রশাসন নির্ধারিত আমপঞ্জি অনুযায়ী আজ (২০ মে) থেকে গোপালভোগ আম দিয়ে বাজারজাত শুরু হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে লক্ষণভোগ, খিরসাপাতি, ল্যাংড়া, আম্রপালি, বারী-৪, ফজলি এবং সবশেষে বাজারে আসবে আশ্বিনা। ২০ মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত চলবে কর্মকাণ্ড। এতে হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হবে।
বিশিষ্ট আম বিজ্ঞানী ড. শরফ উদ্দিন বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের আমের চাহিদা রয়েছে। ঐ সব দেশে এখন আম রফতানির একটা বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। রফতানির ব্যাপারে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলে এ অঞ্চলের আমচাষিরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি সরকারও আম রফতানি করে কোটি কোটি টাকা আয় করতে পারবে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ লক্ষ করা যাচ্ছে না।
রাজশাহী থেকে রেজাউল করিম রাজু জানান, আমের রাজধানী রাজশাহী অঞ্চলের গাছে গাছে এখন রসালো শাসালো ডাঁসা আমের নজরকাড়া দুলনী। আর সপ্তাহখানেক পর আমরসিকদের রসনা মেটাতে পর্যায়ক্রমে হাজির হবে নানা নামের আর স্বাদের আম। প্রশাসনও বেঁধে দিয়েছে কোন আম কখন আসবে বাজারে তার দিনপঞ্জি। ২০ মে থেকে গোপালভোগ আম দিয়ে আম বাজারে আসছে। এরপর লক্ষণভোগ, খিরসাপাতি, ল্যাংড়া, আম্রপালি, বারী-৪, ফজলি আর সবশেষে আসবে আশ্বিনা। ২০ মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত চলবে কর্মকাণ্ড। এতে হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হবে। এবার রাজশাহী অঞ্চলের (রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর) ৮৩ হাজার ৬৭৩ হেক্টরের বেশি জমিতে আম বাগানে ঝুলছে কোটি কোটি আম। এর মধ্যে রাজশাহীতে প্রায় আঠারো হাজার হেক্টর জমিতে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ত্রিশ হাজার হেক্টর, নওগাঁয় পঁচিশ হাজার হেক্টর, আর নাটোরে পাঁচ হাজার হেক্টরে। আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে রাজশাহীতে দুই লাখ চৌদ্দ হাজার চারশত তিরাশি মেট্রিক টন। নওগাঁয় তিন লাখ দশ হাজার দুইশত মেট্রিক টন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুই লাখ সাতান্ন হাজার সাতশত ছাপান্ন মেট্রিক টন। নাটোরে সাত হাজার মেট্রিক টন। সব মিলিয়ে সাড়ে আট লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি আম উৎপাদন হবে।
এবার শুরুতে আবহাওয়া অনুকূল হওয়ায় মুকুলে ছেয়ে যায় বাগানগুলো। পঁচানব্বই ভাগ গাছেই মুকুল হয়। মুকুল ফুটে গাছ ভরে যায় গুটিতে। কিন্তু দীর্ঘ খরার কারণে আর বৃষ্টি না হওয়ায় আমের গুটি ঝরে যায়। বাগানে প্রচুর সেচ দিতে হয়েছে। খরায় আম ঝরা থেকে বাঁচাতে ব্যবহার করতে হয়েছে ওষুধ। তবে এবার ঝড়-ঝাপটার ধকল খুব একটা সইতে হয়নি। ফলে সার্বিকভাবে আমের ভালো ফলন হয়েছে। তারপরও বাজারজাত ও ভালো দামের ব্যাপারে চিন্তিত চাষিরা।
গত রোববার আমের অবস্থা দেখার জন্য বিশিষ্ট আম গবেষক ও আম বইয়ের লেখক মাহবুব সিদ্দিকীসহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক’জন অধ্যাপককে নিয়ে রাজশাহীর আম উৎপাদনকারী এলাকা চারঘাট, বাঘায় সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায় গাছে গাছে প্রচুর আম। কোথাও বাঁশ দিয়ে ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে। মাহবুব সিদ্দিকী গাছের আম দেখে বর্ণনা দিচ্ছিলেন আমের। এ সময় আমচাষিদের সাথে আলাপকালে তারাও বলেন, খরার মাঝেও ফলন ভালো হয়েছে। এখন আর ঝড়-ঝাপটা না হলে তারা লাভবান হবেন।
আড়তগুলোয় চলছে আম বিক্রির প্রস্তুতি। তবে মহামারি করোনার কারণে চলমান লকডাউন তাদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। গতবারের অভিজ্ঞতা সুখময় নয়। পরিবহন বন্ধ থাকা ও রমজানের কারণে আম নিয়ে তাদের বিড়ন্বনায় পড়তে হয়। যদিও শেষদিকে ম্যাঙ্গো স্পেশাল নামে একটি ট্রেন দিয়ে আম পরিবহনের জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করা হয়। তবে শেষদিকে হওয়ায় তাতে খুব একটা সুফল পাওয়া যায়নি। তবে অনলাইনে বেচাকেনা করেছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। এবারো গতবারের অভিজ্ঞতায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বনেদি আম পাড়ার দিন ২৫ মে থেকেই চালু করছে ম্যাঙ্গো স্পেশাল নামে একটি ট্রেন। যাতে থাকবে পাঁচটি ওয়াগন। ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি এক টাকা সতের পয়সা। শ্রমিকের বিষয়গুলো এবার নজরে আনা হয়েছে। প্রতিদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বিকেল ৪টায় রওনা দিয়ে রাত ২টার মধ্যে আম পৌঁছে যাবে ঢাকায়, যা ট্রাকের চেয়ে সাশ্রয়ী। আম পরিবহনের জন্য ট্রাক ও কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো যাতে নির্বিঘ্নে চলতে পারে সেজন্য স্থানীয় প্রশাসন দেখভাল করবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট, রাজশাহীর বানেশ্বর আমের সবচেয়ে বড় বাজার। সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে নওগাঁর পোরসা সাপাহার আমের বাজার। সেখানে আড়তগুলোয় চলছে প্রস্তুতি। ব্যবসায়ীদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। তাদের থাকা-খাওয়া, আমপাড়া ও পরিবহন শ্রমিক, প্যাকিং কর্মীরা তাদের প্রস্তুতি শেষ করেছে। আর ক’দিন পর থেকে আমের রাজ্যে শুরু হয়ে যাবে আম নিয়ে হুলুস্থুল কর্মকাণ্ড। তারপরও মহামারি করোনার শঙ্কা কাজ করছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকল কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে।
দিনাজপুর থেকে মাহফুজুল হক আনার জানান, দিনাজপুরে এবার লিচুর ফলন একেবারেই কম হলেও আমের ফলন কিছুটা ভালো। আমের খ্যাতি না থাকলেও দিনাজপুরে উৎপাদিত গোপালভোগ, মিশ্রিভোগ আমের কদর রয়েছে। এবার সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় অনেক গাছেই মুকুলই আসেনি। যেসব গাছে মুকুল এসেছিল অব্যাহত তাপদাহে মুকুল জ্বলে যাওয়ায় এবার ফলন গত বছরের চেয়ে অনেক কম হবে।
এদিকে আমের জন্য বিখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম পাড়া শুরু হলেও দিনাজপুর অঞ্চলে এখনও আম পরিপক্ব হয়নি। তাই আম পাড়াও শুরু হয়নি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের মতো দিনাজপুরে আম বা লিচু পাড়ার ক্ষেত্রে কোনো দিনক্ষণ বেঁধে দেয়নি দিনাজপুর কৃষি বিভাগ। দিনাজপুরে সাড়ে ৭ হাজার হেক্টরে আমের আবাদ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এবার ৪ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আম আবাদ তথা ফলনের মধ্যে আসেনি। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক জমি বা গাছে ফলন হয়নি। দাম এবার ভালো পাওয়ার আশা করছে কৃষক ও খামারীরা। দিনাজপুর থেকে মূলত কুরিয়ার ও ট্রাকে করেই মৌসুমি ফল ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় যায়। দিনাজপুর সদর, বিরল, বিরামপুর, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ, রানীশংকৈল উপজেলায় আম উৎপাদন হয়।
সাতক্ষীরা থেকে আক্তারুজ্জামান বাচ্চু জানান, সাতক্ষীরায় এবার আমের বাম্পার ফলন হলেও তীব্র তাপদাহে আগাম পেকে যাচ্ছে আম। কাক্সিক্ষত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আমের আকারও অন্য বছরের তুলনায় ছোট হয়েছে। এতে আমের দাম অনেক কম হওয়ায় লোকসানের আশঙ্কা করছেন আমচাষিরা।
করোনরা কারণে গত বছর আম রফতানি বন্ধ থাকার পর এবার আবারো দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ইউরোপে যাচ্ছে সাতক্ষীরার আম। বিদেশে আম পাঠাতে পেরে খুশি আমচাষিরা। দু’বছর আগে যে পরিমাণ আম রফতানি হয়েছিল এবার তার চেয়ে দ্বিগুণ আম বিদেশের বাজারে যাচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও এফএও এর যৌথ কারিগরি সহায়তায় সাতক্ষীরা থেকে ৫০০ কেজি গোবিন্দভোগ জাতের আম রফতানি হয়েছে। তবে এবার চাষিদের ৩ হাজার কেজি আম রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।