পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চুরি ও অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনে করা মামলায় দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার সকালে তাকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফুর রহমান সরদার। অপরদিকে তার আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার তার জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তার রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে জামিন শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেন। এরপর তাকে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর প্রিজন ভ্যানে করে তাকে গাজিপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। রোজিনার মুক্তির দাবিতে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবসহ রাজধানীর কয়েকটি জায়গায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন সাংবাদিকরা।
ঢাকা সিএমএম আদালতের হাজতখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই শহিদুল ইসলাম বলেন, রিমান্ড শুনানি নামঞ্জুর হওয়ার পর তাকে আদালত থেকে হাজতখানায় আনা হয়। এরপর প্রিজন ভ্যানে করে তাকে গাজীপুর জেলার কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে পাঠানো হয়।
আদালতে রোজিনা ইসলামের পক্ষে শুনানি করেন, প্রথম আলোর নিয়োজিত আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী, আশরাফ উল আলম, প্রশান্ত কুমার কর্মকার। এ ছাড়া আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পক্ষে আইনজীবী আব্দুর রশীদ, ব্লাস্টের পক্ষে আইনজীবী মশিউর রহমান এবং আইনজীবী সুমন কুমার রায়। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু।
সকাল আটটার দিকে রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানা থেকে আদালতে নেয়া হয়। রোজিনা ইসলামের স্বামী মনিরুল ইসলাম সে সময় জানান, তাকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য গত সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে সেখানে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত সাড়ে আটটার দিকে পুলিশ তাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। রাত পৌনে ১২টার দিকে পুলিশ জানায়, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা হয়েছে। তাকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে সাংবাদিকেরা বিকেলে সচিবালয়ে এবং রাতে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভ করেন। এর নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে), অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংগঠন।
মামলায় যা বলা হয়েছে : ডিএমপি রমনা জোনের এডিসি হারুন অর রশীদ বলেন, দণ্ডবিধির ৩৭৯ ও ৪১১ ধারা এবং অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্টের ৩ ও ৫ ধারা অনুযায়ী রোজিনা ইসলামের নামে মামলা করেছেন উপসচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মহোদয়ের একান্ত সচিবের দফতরে প্রবেশ করেন রোজিনা ইসলাম। এ সময় একান্ত সচিব দাফতরিক কাজে সচিব মহোদয়ের কক্ষে অবস্থান করছিলেন। রোজিনা ইসলাম দাফতরিক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র শরীরের বিভিন্ন স্থানে লুকান এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছবি তোলেন। এ সময় সচিব মহোদয়ের দফতরে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য মো. মিজানুর রহমান খান বিষয়টি দেখতে পেয়ে তাকে বাধা দেন এবং তিনি নির্ধারিত কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে কক্ষে কী করছেন, তা জানতে চান।
অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, এসময় রোজিনা ইসলাম নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন। পরবর্তী সময়ে অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম, উপসচিব জাকিয়া পারভীন, সিনিয়র সহকারী সচিব শারমীন সুলতানা, সচিবের একান্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম ভূঁঞা, সিনিয়র সহকারী সচিব মোসাদ্দেক মেহদী ইমাম, অফিস সহায়ক মাহফুজুল ইসলাম, সোহরাব হোসেনসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও স্টাফরা ঘটনাস্থলে আসেন এবং অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম তল্লাশি করে রোজিনা ইসলামের কাছ থেকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র এবং ডকুমেন্টসের ছবি সম্বলিত মোবাইল উদ্ধার করেন।
এজাহারে বলা হয়, বর্ণিত ঘটনায় প্রতীয়মান হয় যে ডকুমেন্টসগুলো রোজিনা ইসলাম চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে শাহবাগ থানার মহিলা পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাকে জিম্মায় নেন।
অভিযোগে আরো বলা হয়, বর্তমানে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ভ্যাকসিন কেনা সংক্রান্ত আলোচনা চলছে। এ সংক্রান্ত খসড়া সমঝোতা স্মারক ও নন-ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট প্রণয়ন কাজও চলছে। সমঝোতা স্মারক নিয়ে প্রতিনিয়ত চিঠি ও ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ হচ্ছে, যেখানে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সন্নিবেশিত রয়েছে। রোজিনা ইসলাম এ ধরনের রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রের ছবি তুলছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে মামলায়।
মামলা করবে রোজিনার পরিবার : রাষ্ট্রীয় গোপন নথি চুরির অভিযোগে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা করবে তার পরিবার। গতকাল মঙ্গলবার সকালে আদালত চত্বরে রোজিনার স্বামী মনিরুল ইসলাম মিঠু মামলা করার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেসা বেগম, সহকারী সচিব জাকিয়া পারভীন, পুলিশ কনস্টেবল মিজানসহ যারা জড়িত ছিলেন তাদের নামে মামলা করব। আমরা আমাদের উকিলের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আসার পর তার সঙ্গে আলোচনা করে মামলা করব।
রোজিনাকে নির্যাতন করা হয়েছে জানিয়ে মিঠু বলেন, তাকে নির্যাতন করা হয়েছে, অ্যাসল্ট করা হয়েছে, গলা টিপে ধরা হয়েছে। জোর করে তার মোবাইল নিয়ে নেয়া হয়েছে। সোমবার পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। সেখানে ৫ ঘণ্টার বেশি সময় তাকে আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত ৯টার দিকে তাকে সচিবালয় থেকে শাহবাগ থানায় আনা হয়। রাতে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
তীব্র নিন্দা ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া : দৈনিক প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘ সময় আটকে রেখে নির্যাতন ও মধ্য রাতে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে নথি চুরির অভিযোগে মামলা দেয়ায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ)। একই সঙ্গে অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার করে রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করে। এদিকে এই ঘটনাকে ‘দুর্নীতিবাজদের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জন্য একটি হুঁশিয়ারি বার্তা’ হিসেবে দেখছে টিআইবি। তারাও ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। একই সাথে মামলা প্রত্যাহার করে অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিও জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিএসআরএফ : গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে জরুরি সভায় বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম এ সিদ্ধান্ত নেয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএসআরএফের সভাপতি তপন বিশ্বাস। সভাটি সঞ্চালনা করেন বিএসআরএফের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ। এসময় বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় রোজিনা ইসলামকে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের একান্ত সচিবের (পিএস) কক্ষে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন ও পুলিশের কাছে সোপর্দের পর মামলা দেয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানানো হয়। অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার করে রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ারও দাবি জানানো হয় সভায়।
সভার সিদ্ধান্তগুলো হলোÑ রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার ও লাঞ্ছিত করা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে আজ বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন। রোজিনা ইসলামের জামিন না হওয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সব ধরনের ব্রিফিং বর্জন করা, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও হেনস্তার প্রতিবাদে নিন্দা জানিয়ে বিবৃতির সিদ্ধান্ত হয়।
সাংবাদিকদের মূল সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি দেয়া হবে। এছাড়া রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে তথ্যমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেয়া হবে বলেও জানানো হয়।
টিআইবি : সংস্থাটি গতকাল এক বিবৃতিতে বলছে, করোনাকালে স্বাস্থ্য খাতের ক্রয় থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে দুর্নীতির যে ভয়াল ও অমানবিক চিত্র জাতির সামনে এসেছে, তার অনেকটাই সম্ভব হয়েছে রোজিনা ইসলামের মতো অকুতোভয় সাংবাদিকদের নিরন্তর প্রচেষ্টা ও নিষ্ঠার কারণে। এই সময়ে এমন ঘটনা মুক্ত সাংবাদিকতার টুঁটি চেপে ধরারই নামান্তর।
সাংবাদিক রোজিনার প্রতি ক্ষোভ থেকেই তাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আটকে রেখে নিপীড়ন করা হয়েছে কিনা প্রশ্ন রেখে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন সময়ে হওয়া অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং করোনা সঙ্কট মোকাবিলায় প্রতিষ্ঠানটির সমন্বয়হীনতা, পেশাদারিত্বের যে ঘাটতি ও স্বরূপ রোজিনা ইসলামের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এটাকে তারই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করাই স্বাভাবিক। এ ঘটনায় যেভাবে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার বিষয়কে টেনে এনে ঔপনিবেশিক আমলের ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট-১৯২৩’ এর ৩ ও ৫ ধারা এবং পেনাল কোডের ৩৭৯ ও ৪১১ ধারায় যেভাবে মামলা দায়ের করা হয়েছে তাতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, গ্রেফতার ও মামলার সময় রোজিনা ইসলামের সাংবাদিক পরিচয়কে কোনোভাবেই বিবেচনা করা হয়নি। বরং তাকে ফাঁদে ফেলে শিক্ষা দেয়ার মাধ্যমে পুরো গণমাধ্যমকেই একহাত নেয়ার অপচেষ্টা করেছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল।
ড. জামান আরও বলেন, তথ্য অধিকার আইন পাশ হওয়ার ফলে বাক ও মত প্রকাশের যে আশার আলোটুকু আমরা দেখতে শুরু করেছিলাম অচিরেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে নিবর্তনমূলক ৩২ ধারায় ঔপনিবেশিক আমলের ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট-১৯২৩’ সন্নিবেশনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল রোজিনা ইসলামের ঘটনার মধ্য দিয়ে তার নগ্ন পরিণতি পেয়েছে। আমরা কি সামনের দিকে এগোচ্ছি নাকি উল্টো যাত্রা শুরু করেছি? এর শেষ কোথায়?
১১ বিশিষ্ট নাগরিকের ক্ষোভ : রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশের ১১ বিশিষ্ট নাগরিক। তারা তার বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করে অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে রোজিনা ইসলামের আক্রান্ত হওয়ার কারণ তলিয়ে দেখা ও হামলাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের কর্মকাণ্ডের তদন্ত করার দাবি জানান।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিকেরা এ দাবি জানান। বিবৃতিদাতারা হলেনÑ আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, হাসান আজিজুল হক, অনুপম সেন, রামেন্দু মজুমদার, সারোয়ার আলী, মফিদুল হক, মামুনুর রশীদ, মুনতাসীর মামুন, শাহরিয়ার কবীর, আবদুস সেলিম ও নাসির উদ্দীন ইউসুফ। তারা বলেন, আমরা মনে করি, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করে অবিলম্বে তার মুক্তিলাভে সরকার বিবেচকের ভূমিকা পালন করবেন। তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার এবং দুর্নীতির প্রতি শূন্য সহনশীলতা, সরকারের ঘোষিত এই দুই নীতির সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
কান্নায় ভেঙে পড়লেন আনিসুল ঘশ : সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও সাহিত্যিক আনিসুল হক। তার কান্নার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার রিমান্ড শুনানি শেষে রোজিনাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আনিসুল হক ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের একটি ভবনের সিঁড়িতে বসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, আনিসুল হক ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন।
রোজিনা আক্রোশের শিকার : প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বলেছেন, স্বাস্থ্য বিভাগ নিয়ে রোজিনা ইসলামের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের কারণেই তিনি আক্রোশের শিকার হয়েছেন। আমরা এর সঠিক বিচারের সঙ্গে সঙ্গে রোজিনাকে নির্যাতনকারীদের যথাযথ শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ের সামনে রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও মামলা দিয়ে হয়রানির প্রতিবাদে এবং তার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিষয়টি এখন যেহেতু আইনের দিকে গেছে, আমরা আইনিভাবে এটাকে মোকাবিলা করব। আমরা আদালতের ওপর ভরসা রাখি। আশা করি, আমরা ন্যায়বিচার পাব।
প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও লেখক আনিসুল হক বলেন, স্বাধীন সাংবাদিকতা বজায় রাখতে এ মামলা প্রত্যাহার এবং রোজিনার হেনস্তাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ওপর শারীরিক ও মানসিক হেনস্তা করা হয়েছে। রোজিনাকে হেনস্তা করে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা অনেক বেশি ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। এটা কোনো রাষ্ট্রবিরোধী, সরকারবিরোধী বা গণবিরোধী তৎপরতা নয়। সংবাদমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। এর ওপর তো আস্থা রাখতে হবে।
অংশগ্রহণকারী প্রথম আলোর অন্য সাংবাদিকরা বলেন, রাতে তাকে রাজধানীর শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়। সেখানে তাকে ছেড়ে দিতে পারত পুলিশ। কিন্তু তা না করে মধ্যরাতে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে করা মামলায় রোজিনা ইসলামকে আসামি করে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও হয়রানির প্রতিবাদে সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বিক্ষোভ, প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো অব্যাহত রেখেছেন। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংগঠন বিবৃতি দিয়ে তার মুক্তি দাবি করেছে।
বৃহস্পতিবার জামিন হয়ে যাবে রোজিনার, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাস
বৃহস্পতিবার জামিন হয়ে যাবে রোজিনার, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাস দিয়েছেন। গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন। এ সময় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক, রোজিনা ইসলামের বড় ভাই মো. সেলিমসহ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেছি। আমরা যেটা তাকে জানিয়েছি, সোমবার যে ঘটনাটি ঘটেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে রোজিনাকে ছয় ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছে। তাকে নানা ধরনের হেনস্তা করা হয়েছে। আমরা এর বিচার চেয়েছি, এ ধরনের হেনস্তা করার অধিকার কারও নেই। এরা কারা, কী জন্য করেছে সেটার তদন্ত করে বিচার করতে হবে। ওনার জামিনের বিষয়ে বলেছি যেন জামিন হয়। সবচেয়ে বড় যেটা তিনি অসুস্থ, তাকে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার বিষয়ে বলেছি। যেহেতু কারাগারে পাঠানো হয়েছে, আমরা জানি কারাগারের কী অবস্থা। তাকে যেন ভালো পরিবেশে রাখা হয়। তাকে যেন সেখানে নতুন করে কোনোভাবে হেনস্তা না করা হয়, সেটা যাতে নিশ্চিত করা হয়। উনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) বলেছেন, ওনার সাধ্যমতো সেটি তিনি দেখবেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, বৃহস্পতিবার যে জামিন শুনানি হবে তার জামিন হয়ে যাবে। তিনি এটাও বলেছেন, আমরা চাই না সাংবাদিকদের সঙ্গে সরকারের কোনো ভুল বোঝাবুঝি হোক। সুন্দর ও সুষ্ঠু সমাধান আমরাও চাই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।