পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মুসাকে শেল্টারের প্রতিশ্রুতি দেন বাবুল : পান্না আক্তার
বাবুল-মিতুর দুই সন্তানকে ‘খুঁজে পাচ্ছে না’ পিবিআই
মাহমুদা খানম (মিতু) হত্যার পর মামলার অন্যতম আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুসাকে শেল্টার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার। সন্তানদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ভয়ে এত দিন মুখ খোলেননি তার স্ত্রী। এখন জানতে চান মুসা কোথায়? মামলার স্বার্থেই তার স্বামী মুসাকে খুঁজে বের করা জরুরি। মুসার স্ত্রী পান্না আক্তার সাংবাদিকদের এ সব কথা বলেন। অন্যদিকে স্ত্রীর হত্যা মামলায় গ্রেফতার বাবুল আক্তারের দুই সন্তানকে এখনো খুঁজে পায়নি পিবিআই। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাবুল তার বাসার যে ঠিকানা দিয়েছিলেন, সেটি ভুল ছিল। পরে পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে বাবুল বাসার আসল ঠিকানা দেন।
মিতু হত্যায় গত বুধবার পিবিআইয়ের চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল এবং বাবুল আক্তারকে ১ নম্বর আসামি করে নতুন মামলা দায়েরের পর প্রথম যে প্রশ্নটি ওঠে, তা হলো মুসা এখন কোথায়? পিবিআইয়ের প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, মুসাকে মিতু হত্যার ঘটনাস্থলে দেখা গেছে। তিনি বাবুল আক্তারের সোর্স এবং পলাতক।
পুলিশের খাতায় মুসা পলাতক হলেও তার স্ত্রী পান্না আক্তার বলেন, কাঠঘর তিন রাস্তার মোড় থেকে তার চোখের সামনে দিয়ে পুলিশই মুসাকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর থেকে মুসা নিখোঁজ। নতুন মামলায় বাবুল আক্তার ১ নম্বর আসামি, মুসা ২। পান্না আক্তারের প্রশ্ন, মুসাকে বলা হচ্ছিল এই ঘটনার নির্দেশদাতা। আর কেউ নির্দেশ দিলে কেন তিনি একজন পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে হত্যা করবেন? এই প্রশ্নের জবাব পুলিশ খোঁজেনি। পান্না আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, মুসা প্রশাসনের সোর্স ছিলেন। বাবুল আক্তারের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। এমনকি বাবুল আক্তার যখন সুদানে যান, তখনো তিনি মুসার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন। ২০১৬ সালের ৫ জুন যেদিন মিতু খুন হন, সেদিন তিনি তার স্বামীর সঙ্গে চট্টগ্রামের কালামিয়া বাজারের বাসায় ছিলেন। বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি মুসাকে বাসায় রেখে রাঙ্গুনিয়ায় বাবার বাসায় চলে আসেন।
হঠাৎ শুনতে পান তাদের বাড়িতে পুলিশ গেছে। নানা জায়গায় সাদাপোশাকে পুলিশ মুসার খোঁজ করছে। এর মধ্যে মুসা তাদের রাঙ্গুনিয়ার বাসায় চলে আসেন। মুসা একাধিক ফোন ব্যবহার করতেন। একবার একটা ফোন পান্নার কাছে রেখে তিনি বেরিয়েছিলেন। এ সময় টিঅ্যান্ডটি নম্বর থেকে ফোন আসে। ও প্রান্তে কে কথা বলছিলেন তিনি জানেন না। তবে ওই ব্যক্তি তাকে বলেন মুসা যেন সাবধানে থাকে। মুসা বাসায় ফিরলে পান্না জিজ্ঞেস করেন, কেন তাকে পুলিশ খুঁজছে? কেনই-বা ফোন করে তাকে সাবধানে থাকতে বলা হচ্ছে।
পান্না আক্তার বলেন, প্রথমে মুসা বিষয়টি এড়িয়ে যান। এর মধ্যে যে মোটরসাইকেল মিতু হত্যায় ব্যবহার হয়েছিল সেটি খুঁজতে পুলিশ রাউজান পৌঁছায়। এ সময় বাবুল আক্তার ফোন করেন। পান্না তখন মুসার পাশেই বসা। ওই প্রান্তের কথা পরিষ্কার শুনতে না পেলেও, মুসা বলেন, আমার পরিবারের কিছু হলে আমি কিন্তু মুখ খুলব স্যার। পান্নার ধারণা, কথোপকথনটি হয়েছিল ২০১৬ সালের ১৮ বা ১৯ জুন। এবার পান্না সরাসরি মুসাকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি মিতু হত্যায় জড়িত কি না। জবাবে মুসা তাকে বলেন, বাবুল আক্তার তাকে খুন করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি রাজি হননি। তবে লোক দিয়েছিলেন। এই কাজে সহায়তা না করলে বাবুল তাকে ফাঁসিয়ে দেবেন, এমন আশঙ্কা করছিলেন। বাবুল তাকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, তিনি ‘শেল্টার’ দেবেন। মুসার কিছু হবে না। তিনি আরো বলেন, পুলিশ সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছিল। তাদের পরিবারে আর কোনো পুরুষ ছিল না। এ অবস্থায় মুসা ২২ জুন আদালতে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেন। মুসা একাধিক ফোন ব্যবহার করতেন। ওই দিনই পুলিশ তার হাতে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে চলে যায়। তারপর প্রচার করে মুসা পলাতক। পান্নার কথা হলো, যদি মুসা দেশ ছেড়ে পালাতেন, তাহলে পাসপোর্ট নিয়ে যেতেন। পাসপোর্ট এখনো তাদের বাসায়। সন্তানদের খোঁজ নিতেন। নেননি। তার দাবি, মুসা অন্যায় করলে বিচার হোক, তবু যেন তিনি কোথায় আছেন, সে তথ্য প্রকাশ করা হয়।
বাবুল-মিতুর দুই সন্তানকে ‘খুঁজে পাচ্ছে না’ পিবিআই
স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় গ্রেফতার সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের দুই সন্তানকে এখনো খুঁজে পায়নি পিবিআই। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাবুল তার বাসার যে ঠিকানা দিয়েছিলেন, সেটি ভুল ছিল। পরে পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে বাবুল বাসার আসল ঠিকানা দেন। তবে সেই বাসায়ও বাবুলের দুই সন্তানকে পাওয়া যায়নি। বাড়িওয়ালার বরাত দিয়ে পিবিআই জানিয়েছে, বাবুলকে গ্রেফতারের দিনই তার বর্তমান স্ত্রী বাবুল-মিতুর দুই সন্তানকে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে গেছেন। এই অবস্থায় শিশু দুটির নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাদের নানা-নানি।
গতকাল রোববার পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাবুল ভুল ঠিকানা দিয়েছিলেন। পরে আবারও জেরার মুখে আসল ঠিকানা দেন। তবে বাবুল আক্তারের আত্মীয়ের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে বাচ্চাদের মনে কোনো ধরনের প্রভাব না পড়ে সে বিষয়টিও দেখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আগে বাবুল আক্তারের দুই সন্তানকে খুঁজে বের করব। তার (বাবুল আক্তার) কাছে জানতে চাইব দুই সন্তানের অভিভাবকত্বের বিষয়ে তার ইচ্ছার কথা। এরপর আদালতের বিষয় তো আছেই। দু-একদিনের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, বাবুল আক্তার তার সন্তানদের নিয়ে কিছুটা বিচলিত। তবে রিমান্ডের দুদিনে তিনি মামলা সংক্রান্ত ব্যাপারে তেমন কোনো কথা বলেননি। একরকম নিরুত্তর ছিলেন। তার নার্ভ যথেষ্ট শক্ত আছে। এখন পর্যন্ত স্ত্রী হত্যার আসামি হিসেবে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার কোনো ইচ্ছে প্রকাশ তিনি করেননি। কথা বলছেন খুব কম। ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে খুন হন মিতু। কুপিয়ে ও গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়। ওই সময় ঘটনাটি দেশজুড়ে আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। পরে চট্টগ্রামে ফিরে তিনি পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। পিবিআইয়ের তদন্তের একপর্যায়ে সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দুতে আসে স্বামী বাবুল আক্তারের নাম। তদন্তে তার বিরুদ্ধে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পায় পিবিআই। গত ১১ মে তাকে ডেকেনিয়েহেফাজতে নেয় তদন্ত সংস্থা। গত বুধবার ১২ মে দুপুরে বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন মিতুর বাবা। মামলায় আসামি করা হয় আরও সাতজনকে। তারা হলেন- কামরুল ইসলাম মুছা, কালু, ওয়াসিম, শাহজাহান, আনোয়ার, এহতেসামুল হক ভোলা ও সাকি।
বাদী থেকে আসামি
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায় :
স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার বাদী থেকে আসামি করা হয়েছে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে। আলোচিত এ হত্যাকান্ডের পাঁচ বছর পর তাকে প্রধান আসামি করে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন। এ মামলায় বাবুল আক্তারকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন- পিবিআই।
বিগত ২০১৬ সালের ৫ জুন নগরীর ও আর নিজাম রোডে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় মিতুকে। ওই ঘটনায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। দীর্ঘ পাঁচ বছরের তদন্তে পুলিশ রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয়। এরমধ্যে হঠাৎ করে গত বুধবার মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করে পিবিআই।
তাদের দাবি অর্থ দিয়ে স্ত্রী মিতুকে খুন করিয়েছিলেন বাবুল আক্তার। বাবুলের দুই বন্ধুর দেয়া জবানবন্দীর পর মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করে পিবিআই। এরপর মিতুর বাবা বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় পরকীয়ার জেরে বাবুল আক্তার মিতুকে খুন করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়। তবে গতকাল রোববার পর্যন্ত চাঞ্চল্যকর এ খুনের প্রকৃত রহস্য সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু জানাতে পারেননি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বন্ধুদের দেয়া জবানবন্দী এবং মিতুর বাবার অভিযোগ তথা পারিবারিক কলহের সাথে এ হত্যাকারে যোগসূত্র আছে কি না, তা দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। ওই মামলায় বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বাবুলের ‘সোর্স’ কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা, এহতেশামুল হক ভোলা, মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, সাইদুল আলম শিকদার ওরফে সাক্কু, শাহজাহান ও খায়রুল ইসলাম কালু। এদের মধ্যে সাক্কুকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তাকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে আনা হয়েছে। মামলায় মিতুর বাবা অভিযোগ করেন, পরকীয়ার জেরে মিতুকে হত্যা করেছেন বাবুল আক্তার। কক্সবাজারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালনকালে ইউএনএসসিআরের কর্মকর্তা ভারতীয় নাগরিক গায়ত্রী অমর সিংয়ের সাথে বাবুলের ঘনিষ্ঠতা হয়। এরপরে তারা পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। মিতু এসব জেনে যাওয়ায় তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন মামলার বাদী।
তবে বাবুল আক্তারের আইনজীবী ও স্বজনরা বলছেন, এসব অভিযোগ সাজানো। বাবুল আক্তার ষড়যন্ত্রের শিকার। তার ১৬ বছরের সংসার জীবনে পরকীয়ার কোন অভিযোগ কেউ করেনি। মিতু খুন হওয়ার পর দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় ফিরে শ^শুরবাড়িতে উঠেন। কিন্তু তখনও বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করা হয়নি। পাঁচ বছর পর তাকে আসামি করে মামলা করার ঘটনা ষড়যন্ত্রমূলক বলেও মন্তব্য করেন তার স্বজনেরা ।
ওয়াসিম-আনোয়ার গ্রেফতার
মিতু হত্যা মামলায় কারাগারে থাকা আসামি মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম এবং আনোয়ার হোসেনকে নতুন মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। গতকাল তাদের এ মামলায় গ্রেফতার দেখানোর অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিন তাদের গ্রেফতার করার অনুমতি দেন বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা। আগে থেকে কারাগারে থাকা শাহজাহান নামে আরও এক আসামিকে গ্রেফতার দেখানোর অনুমতি চেয়ে আজ সোমবার আদালতে আবেদন করা হবে বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা। নতুন মামলায় বাবুল আক্তারসহ পাঁচজন কারাগার ও পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।