গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রাম অঞ্চলে রাজনৈতিক নেতাদের ড্রয়িং রুম এখন বেজায় সরগরম। ঈদ উৎসবে চলছে ব্যাপক ভ‚রিভোজ। নেতারা ব্যস্ত দিন পার করছেন নিজ নিজ এলাকায়। ঈদ শেষ হলেও শেষ হয়নি ঈদের আমেজ। শহর থেকে গ্রাম সর্বত্রই উৎসবের আবহ। এই সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাতে নানা আয়োজন মন্ত্রী, এমপিসহ রাজনৈতিক দলের নেতাদের।
ঈদ পুনর্মিলনীর নামে দলের নেতাকর্মী এবং নির্বাচনী এলাকার লোকজনের জন্য নানা আয়োজন চলছে। তৃণমূলের নেতাকর্মী ও জনগণের কাছাকাছি যেতে নানা কৌশল অবলম্বন করছেন নেতারা। আবার নেতাদের কাছে আসতে পেরে খুশি তৃণমূলের কর্মী, সমর্থক ও ভোটারেরা। ঈদ রাজনীতিকে ঘিরেও নানা মেরূকরণও চলছে বড় দুই দলে।
আন্দোলন-সংগ্রামের মহানগরী বীর চট্টলার রাজপথে নেই কোনো রাজনৈতিক উত্তাপ। দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। জঙ্গিবাদসহ নানা ইস্যুতে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিকেরা মাঝেমধ্যে রাস্তায় নামছে। তবে বিরোধী দলের সামনে ইস্যুর অভাব না থাকলেও তারা রাস্তায় সরব হতে পারছে না।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে মিছিল সমাবেশ করতে চেয়েও অনুমতি মিলছে না। কোনো মতে দলীয় কার্যালয় চত্বর কিংবা দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে পুলিশী পাহারায় মিছিল সমাবেশ করে ঘরে ফিরতে হচ্ছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপিকে। একই অবস্থা বিশ দলের শরিক অন্যদলগুলোরও। ইসলামী দলগুলোরও তেমন তৎপরতা নেই। বাম দলগুলো মাঝেমধ্যে রাজপথে সরব হলেও তাদের কর্মী সমর্থকদের সংখ্যা হাতেগোনা।
ফলে চট্টগ্রামের রাজপথে রাজনীতির উত্তেজনা নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় ঈদুল আযহাকে ঘিরে নেতারা তাদের রাজনৈতিক কর্মী বাহিনীকে কাছে টানার উদ্যোগ নেন। ঈদকে ঘিরে নেতাদের বাসা বাড়িতে আয়োজন করা হয় ভুরিভোজের। ঈদের পর দিন থেকে চলছে নানা আয়োজন। নেতারা প্রতিবারের মতো এবারও একাধিক গরু কোরবানি দিয়েছেন। নিজেদের প্রয়োজন সেরে বাকি গোশত দিয়ে দলীয় কর্মীদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেছেন।
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানের আয়োজন চলছে নেতাদের বাসা-বাড়িতে। সেখানে পেটপুরে খাচ্ছেন দলের নেতাকর্মী, সমর্থক, সহযোগি ও সমমনা পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। শহরের বাসা বাড়ির পাশাপাশি নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায়ও অনুরূপ আয়োজন চলছে। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ বিএনপির শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে এই অঞ্চলের সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী, এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যান থেকে সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধিরা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী নানা আয়োজন করছেন।
এসব আয়োজনের প্রধান টার্গেট দলের নেতাকর্মী সমর্থকেরা। অনেকে ভোটারদের ও এইসব আয়োজনে শরিক করছেন। ধনাঢ্য নেতারা অকাতরে দান খয়রাতও করছেন নিজ নিজ এলাকায়। ঈদের ছুটিতে গ্রামে আসা লোকজনের কাছাকাছি যেতে অনেক নেতা নানা উপলক্ষ্যে গণসংযোগও সেরে নিচ্ছেন। চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে প্রায় অর্ধেক মানুষ ঈদ উদযাপনে গ্রামের বাড়ি গেছেন। তাই শহর এখন ফাঁকা হলেও সরগরম গ্রামীণ জনপদ। এই সুযোগে জনপ্রতিনিধিরাও গ্রামে গ্রামে গিয়ে নানা কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।
বর্তমান সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য চট্টগ্রামে নিজ নিজ এলাকায় ঈদ উদযাপন করছেন। ঈদের নামাজ শেষে তারা পশু কোরবানি দিয়েছেন। নিজেদের বাসা-বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনদের পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীদের জন্যও ছিল নানা আয়োজন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি চট্টগ্রামের রাজনীতিতে দানশীল হিসাবে পরিচিত। গরিব-দুঃখী মানুষের কল্যাণে তিনি অনেক কাজ করেছেন। বিশেষ করে শিক্ষা বিস্তারের তার ভ‚মিকা সবত্রই প্রশংসিত হচ্ছে। এবার ঈদে তিনিও নেতাকর্মীদের জন্য নানা আয়োজন করেন। সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন আন্দরকিল্লার বাড়িতে ঈদ উদযাপন করেছেন। সকাল থেকে তার বাড়িতে ছিল নেতাকর্মীদের ভিড়। সবাইকে আপ্যায়ন করা হয়।
সাবেক সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী হজে গেছেন। তবে তার চশমা হিলের বাসায় নেতাকর্মীদের ভিড় লেগেই আছে, চলছে আপ্যায়নও। ভূমিপ্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী ডা. আফছারুল আমীন, সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফ, দিদারুল আলম, সাবেক সিটি মেয়র এম মনজুর আলমের বাসায়ও ঈদের দিন থেকে ভূরিভোজের আয়োজন চলছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম, নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের বাসায়ও চলে ভূরিভোজ। ঈদের পরদিন নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে মেজবানের আয়োজন করেন আবদুল্লাহ আল নোমান। সেখানে ৬ হাজার মানুষের খাবার আয়োজন করা হয়। অনুরূপ আয়োজন ছিল মীর নাছিরের চট্টেশ্বরী রোডের বাড়িতে।
এই দুুটি আয়োজনে হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক এবং সমমনা সংগঠনের নেতাকর্মী ছাড়াও পেশাজীবী নেতারা শরিক হন। মহানগর বিএনপি ও অংগ সংঠনের প্রায় সব নেতাকর্মী ওই দুই নেতার আয়োজন যোগ দেন। ওয়াহিদুল আলমের বাসায় আয়োজিত মেজবানে যোগ দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তবে তাকে নোমান ও মীর নাছিরের আয়োজনে দেখা যায়নি। মহানগরী বিএনপি নেতাদের বাসাবাড়িতে এখনও দলীয় কর্মীদের ভিড়।
চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনের বর্তমান ও সাবেক এমপিদের পাশাপাশি এসব আসনে বড় দুই দলের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও তৎপর রয়েছেন। দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নিজেদের পক্ষে টানতে তারা নানা আয়োজন করছেন। কে কত বেশি নেতাকর্মীকে পক্ষে টানতে পারেন তার প্রতিযোগিতাও শুরু হয়েছে কোন কোন এলাকায়। বড় দুই দলে রয়েছে কলহ-বিবাদ। এই কলহ-বিবাদকে ঘিরে নানা মেরূকরণ হচ্ছে তৃণমূলের রাজনীতিতে। ঈদ উৎসবে আপ্যায়নের রাজনীতিতেও এর প্রভাব পড়ছে। গেল ইউপি নির্বাচন তার আগের পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে বড় দুই দলেই কোন্দল চরমে উঠে। নির্বাচিত এবং পরাজিত প্রার্থীরা কোন্দল মিঠিয়ে দলের নেতাকর্মীদের নিজ নিজ পক্ষে টানার চেষ্টা করছেন। আর এই জন্য তারা বেছে নিয়েছেন ঈদ উৎসবকে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশের প্রধান দুই দলেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। আর এই কারণেই দুই দলের বাঘা বাঘা নেতারা এলাকামুখী হতে শুরু করেছেন। গেল ৫ জানুয়ারি একতরফা সংসদ নির্বাচনের পর থেকে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি করে আসছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিশ দলীয় জোট। এই দাবিতে গত বছর টানা আন্দোলনও হয়। তবে সরকার বিরোধী দলের এই দাবিকে পাত্তাই দেয়নি। সরকারের মন্ত্রীরা বলে আসছেন নির্ধারিত সময়ের আগে নির্বাচন নয়।
এর মধ্যে গত বাজেট অধিবেশনের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তার দলের সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলার পর থেকে সবত্রই নানা কানাঘুষা শুরু হয়। যদিও সরকারের মন্ত্রীরা এর ব্যাখায় বলেছেন, নির্বাচন মানে আগাম নয়, নির্ধারিত সময়ে যে নির্বাচন হবে প্রধানমন্ত্রী তার প্রস্তুতি নিতে বলেছেন।
মূলত প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পর সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতারা নির্বাচনী এলাকামুখি হতে শুরু করেন। তারা দলের তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সাথে দূরত্ব কমিয়ে সখ্যতা বাড়ানো উদ্যোগ নেন। বসে নেই বিএনপির নেতারাও। দীর্ঘদিন তারা ক্ষমতার বাইরে। এই অবস্থায় তারাও চান একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হোক। আর এমন পরিবেশ হয়তো হবে সেই প্রত্যাশায় তারাও এলাকামুখী হতে শুরু করেন। রাজপথে কোনো কর্মসূচি না থাকলেও বিএনপির নেতারা তাদের নিজ নিজ এলাকায় আসা-যাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে যারা জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন তাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন নেতারা।
বড় দুই দলের সিনিয়র নেতাদের পুত্র-কন্যারাও রাজনীতিতে সরব হয়ে উঠেছেন। ইতোমধ্যে রাজনীতিতে যাদের অভিষেক হয়েছে তারাও এবার ঈদের উৎসবে দলের কর্মীদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন। ঈদের ছুটিকে কাজে লাগিয়ে নেতাকর্মী, সমর্থক ও জনগণের কাছাকাছি যেতে নেতাদের যে প্রচেষ্টা তাতে রাজনীতিতে কিছুটা চাঙ্গাভাব দেখা দিয়েছে।
বড় দুই দলের সাংগঠনিক ভিত্তিতেও এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন দলের নেতারা। অন্যদিকে নেতাদের জনগণের কাছাকাছি যাওয়ার এই আকুলতায় খুশি আমজনতা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।