ময়মনসিংহের গৌরীপুরে আলোচিত সেবচ্ছাসেবক লীগ নেতা মাসুদুর রহমান শুভ্র হত্যা মামলার বাদী নিহতের ছোট ভাই আবিদুর রহমান প্রান্তকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুভ্র হত্যা মামলায় আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়ার পরদিন বৃহস্পতিবার রাতে ওই ওপর হামলা চালানো হয়।
এ ঘটনায় গৌরীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও পৌর মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলামকে প্রধান করে ৩৬ জনের বিরুদ্ধে শুক্রবার গৌরীপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। পরে অভিযান চালিয়ে পৌর যুবলীগ সভাপতি মিথুনসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
উল্লেখ্য গত বছরের ১৭ অক্টোবর রাতে গৌরীপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ
সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান শুভ্রকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হতে এলাকায় প্রচারণায় চালাচ্ছিলেন। পূর্বশত্রুতা ও মেয়র প্রার্থী হওয়াকে কেন্দ্র করে শুভ্রকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই আবিদুর রহমান প্রান্ত বাদী হয়ে গৌরীপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম ও
বিএনপি নেতা রিয়াদসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে ১৯ অক্টোবর গৌরীপুর থানায় একটি মামলা করেন। ২২ অক্টোবর মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় ময়মনসিংহ গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মোহাম্মদ শাহ কামাল আকন্দ।
ঘটনার ৬ মাস ১৯ দিনের মাথায় গত বুধবার (৫ মে) আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। এতে আওয়ামী লীগ নেতা ও পৌর মেয়র রফিক এবং
বিএনপি নেতা রিয়াদসহ এজাহারভুক্ত ১৪ জনের সঙ্গে তদন্তে প্রাপ্ত আরও পাঁচজনের নাম সংযুক্ত করা হয়।
আদালতে বুধবার চার্জশিট দেওয়ার পর ক্ষুব্ধ হয়ে গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে হামলা হয় শুভ্র হত্যা মামলার বাদী নিহতের ছোট ভাই আবিদুর রহমান প্রান্তর ওপর। অসুস্থ্য এক সেচ্ছাসেবক লীগ কর্মীকে দেখে বাসায় ফেরার পথে পৌর এলাকার কালিপুর মধ্যমতরফ এলাকায় সশস্ত্র লোকজন প্রান্ত'র গতিরোধ করে। ওই সময় পিটিয়ে কয়েকজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়। অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান শুভ্র হত্যা মামলার বাদী প্রান্ত।
খবর পেয়ে গৌরীপুর থানা পুলিশ ও ময়মনসিংহ গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে গৌরীপুর পৌর যুবলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান মিথুনসহ পাঁচজনকে আটক করে। আটকৃত অন্যরা হলেন- মো. আনিছ, প্রদীপ বাগচী, শহিদুল ইসলাম শহীদ ও শ্যামল সরকার। এরা সবাই পৌর মেয়র সৈয়দ রফিকের অনুসারী।
এ ঘটনায় আবিদুর রহমান প্রান্ত বাদী হয়ে শুক্রবার বিকেলে গৌরীপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এতে আওয়ামী লীগ নেতা ও পৌরসভার মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলামসহ ২৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরও ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। পৌর মেয়র রফিকের নির্দেশে ওই হামলা হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। আটক হওয়া পৌর যুবলীগ সভাপতি মিথুনসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে শুক্রবার বিকেলে আদালতে সোপর্দ করে।
নিহত শুভ্র'র চাচা সাদিকুর রহমান সেলিম বলেন, তার এক ভাতিজাকে হত্যার পরও ওরা থেমে নেই। প্রান্ত কোনো ধরণের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও তাকেও হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। হত্যা মামলাটির স্বাক্ষীদের অব্যহত হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বুধবার চাজর্শিট দেওয়ায় পৌর মেয়র ও অন্য আসামিরা ক্ষুব্ধ হয়ে তার ভাতিজা ও মামলার বাদীর ওপর হামলা হয়। ওই অবস্থায় তারা পরিবার নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।
পৌর মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, তার কিছু কর্মীর সঙ্গে ওদের বাকবিতণ্ডা হয়। এতে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। নাটক সাজিয়ে তাকে পুনরায় মামলায় আসামি করা হয়েছে।
গৌরীপুর থানার ওসি খান আবদুল হালিম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের জানান, শুভ্র হত্যা মামলার বাদি তার ছোট ভাইয়ের ওপর হামলার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে অন্য আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।