Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জুমাতুল বিদায় লাখো মুসল্লির আমীন! আমীন! ধ্বনি----

ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ুক ঈদের খুশী জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ান

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ৭ মে, ২০২১, ৫:৪৩ পিএম

লাখো মুসল্লির মুখে মুহুর্মুহু উচ্চারিত হয়েছে আমীন! আমীন! ধ্বনি। ‘হে আল্লাহ আমাদের বিগত দিনের গুনাহসমূহ মাফ করে দিন। সকল প্রকার গুনাহ ও পাপাচার থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন। ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়–ক ঈদের খুশী। আজ পবিত্র জুমাতুল বিদার পুণ্যময় দিনে সারাদেশের মসজিদগুলোতে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ এবং করোনা মহামারি থেকে মুক্তির জন্য নামাজ শেষে মোনাজাতে অগণিত মুসল্লি চোখের পানি ঝরিয়েছেন। দেশ জাতির সুখ-শান্তি উন্নতি এবং মুসলিম উম্মার কল্যাণ সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন সাধারণ মুসল্লিরা। রমজানের শেষ দশকে নাজাত বা জাহান্নাম থেকে মুক্তির সময়ে শেষ শুক্রবারে মুক্তিকামী ধর্মপ্রাণ আপামর জনসাধারণ আশা ও উৎসাহের সঙ্গে মসজিদে যান। রাজধানীসহ সারাদেশের মসজিদগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে উপচেপড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়। মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজম কমপ্লেক্সেও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে। মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিবরা জুমার বয়ানে মুসল্লিদের উদ্দেশে জুমাতুল বিদার গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরেন।

জুমাতুল বিদাসহ মাহে রমজানের প্রত্যেক জুমাবারে ইবাদত-বন্দেগিতে অধিক সওয়াব লাভের সুযোগ থাকে। পবিত্র কোরআনে জুমার নামাজ জামাতে আদায়ের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য আহŸান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা উপলব্ধি কর।’ (সূরা আল-জুমুআ, আয়াত-৯)

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মিজানুর রহমান আজ জুমার বয়ানে বলেছেন, জুমার পুণ্যময় এ দিনে এমন একটি সময় আছে যে সময় বান্দার মোনাজাত ও দোয়া আল্লাহ বিশেষভাবে কবুল করেন। জুমার দিনের শ্রেষ্ঠত্ব ও ফযিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে জুমার দিন সর্বাধিক মর্যাদাবান।

রমজানের সর্বোত্তম দিবস হলো জুমাতুল বিদা। এ দিবসটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যমন্ডিত। রমজানের শেষ দশকে নাজাত বা জাহান্নাম থেকে মুক্তির সময়ে শেষ শুক্রবারে মুক্তিকামী ধর্মপ্রাণ আপামর জনসাধারণ আশা ও উৎসাহের সঙ্গে মসজিদে আসেন। সবাই নামাজ শেষে দুহাত তুলে আল্লাহর কাছে মোনাজাত করে আমীন! আমীন! ধ্বনির সঙ্গে মুহুর্মুহু উচ্চারিত হয়: ‘আল বিদা ইয়া মাহে রমাদান! আল বিদা;’ ‘আল বিদা আয় মাহে রহমাত! আল বিদা;’ ‘আল বিদা হে মাহে মাগফিরাত! আল বিদা;’ ‘আল বিদা মাহে নাজাত! আল বিদা।’

রমজানের রোজার শেষে এই ঈদ আসে বলে এর নাম ‘ঈদুল ফিতর’। সুতরাং ঈদুল ফিতর বিশ্ব মুসলিমের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহা উৎসব। রমজানের বরকত লাভের জন্য ত্যাগ-তিতিক্ষা, কষ্টক্লেশ ও আয়াস সাধ্য সাধনার পর যে মাসটি সাফল্যের বার্তা নিয়ে আসবে, তা অবশ্যই মহান। শাওয়াল মাসের প্রথম দিনই ঈদ উৎসব। এই দিন উপলক্ষে যাকাত বা ‘সদকাতুল ফিতর’ তথা ফিতরা প্রদান করা হয়; যাতে সমাজের নিম্ন শ্রেণির মানুষ ও ঈদের আনন্দে শরিক হতে পারে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমীন!
ঢাকার বাংলা মটরস্থ বাইতুল মোবারক জামে মসজিদের অনারারী খতিব অধ্যাপক মাওলানা ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ আজ জুমার বয়ানে বলেন, নানা কারণে জুমআতুল বিদ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

মহিমান্বিত রমজানের শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম কারণ কদর রজনী। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এ মাসে একটি রাত আছে যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে অবশ্যই প্রত্যেক কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হলো। (নাসায়ী, হাদীস নং-২১০৭) পবিত্র কোরআনেও কদর রজনীকে হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ ঘোষণার মাঝেই এ রাতে নেক আমলকারীর জন্য অত্যাধিক সাওয়াব লাভ ও মহাপুরস্কার প্রাপ্তির কথাও নিহিত রয়েছে। এ রাতের ফযিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় কদর রজনীতে দÐায়মান থাকবে (ইবাদাতে লিপ্ত হয়) তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (বুখারী, হাদীস নং-১৯০১)
উবাই ইবনে কাআব (রা.) বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই সে রাতটিকে (কদর) জানি যে রাতটিতে কিয়াম করার (নফল সালাত) কথা আমাদেরকে রাসুলুল্লাহ (সা.) নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা হলো রমজানের ২৭ তম রাত। (মুসলিম, ২৬৬৮) এই মহাপূণ্যময় কদর রজনী নফল নামায আদায়, কোরআন তিলাওয়াত, দরুদ শরীফ পাঠ, তাওবা-ইস্তেগফার, দোয়া-মোনাজাত, মহান আল্লাহর যিকির ও তাসবীহ পাঠ ইদ্যাদি নেক আমল করার মাধ্যমে অতিবাহিত করা যেতে পারে।
খতিব বলেন, ঈদ মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সিয়াম পালনকারী মুসলিমের জন্য এক বিশেষ নিয়ামত। ঈদের সালাত আদায়ের পূর্বে আবশ্যক কর্তব্য হচ্ছে সাদকাতুল ফিতর আদায়। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে স্বাধীন, গোলাম, নারী, পুরুষ, ছোট-বড় সকল মুসলিমের ওপর সাদকাতুল ফিতর ফরয করা হয়েছে। (বুখারী, হাদীস নং-১৫০৩)
আমাদের লক্ষ রাখতে হবে যাতে সমাজের প্রতিটি মানুষের কাছেই ঈদের খুশী পৌঁছে যায়। পথশিশু, দিনমজুর, গরীব, দুঃখী, অসহায় কেউ যাতে ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়। এ ব্যপারে আমাদের সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন কেউ যদি অভাবে থাকে, তার অভাব পূরণের আমাদের চেষ্টা করতে হবে। ঈদের দিনে সবাই যাতে আনন্দচিত্তে এ দিনটি উদযাপন করতে পারে সে ব্যপারে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুণ, যাবতীয় বিপদাপদ থেকে রক্ষা করুণ। আমীন!
দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা রেজাউল করিম জুমার বয়ানে বলেন, আল্লাহ তায়ালা রমজান দিয়েছিলেন গুনাহ মাফের জন্য, জান্নাত অর্জনের জন্য, জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য। আমাদের সামনে সবথেকে বড় আমল লাইলাতুল কদর তালাশ করা। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি শবে কদরে আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে সওয়াবের আশায় ইবাদত করে, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয় । আরেকটি আমল সদকাতুল ফিতর আদায় করা। রাসুল (সা.) বলেছেন, রমজানের পরে শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখা উত্তম। যারা রমজানের রোজা রাখে এরপরে শাওয়াল মাসের ৬ রোজা রাখে। তাদের সারা বৎসর রোজা রাখার সওয়াব হয়।
ঢাকার মিরপুরের বাইতুল আমান সেন্ট্রাল জামে মসজিদের খতীব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, আজ রমজান মাসের সর্বোত্তম দিন পবিত্র জুমাতুল বিদা ও ঐতিহাসিক আল-কুদস দিবস। এদিনে এমন একটি সময় আছে যে সময় মুমিন বান্দার মোনাজাত ও ইবাদত আল্লাহ বিশেষভাবে কবুল করেন। রমজানের শেষ শুক্রবার তথা জুমাতুল বিদার বিশেষ একটি তাৎপর্য এই যে, এদিনে আল্লাহর নবী হযরত সুলায়মান (আ.) জেরুজালেম নগর প্রতিষ্ঠা করে আল্লাহর মহিমা তুলে ধরতে সেখানে মুসলমানদের প্রথম কিবলা "মসজিদুল আকসা" পুননির্মাণ করেন। মক্কার মসজিদুল হারাম ও মদিনার মসজিদে নববির পর তৃতীয় পবিত্রতম স্থান হচ্ছে মসজিদুল আকসা বা বায়তুল মোকাদ্দাস। রাসুলুল্লাহ (সা.) যে তিনটি মসজিদের উদ্দেশ্যে সফরকে বিশেষভাবে সওয়াবের কাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, এর অন্যতম হচ্ছে বায়তুল মোকাদ্দাস। ইসলামের ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে এর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ১৯৭৯ সাল থেকে প্র্রতিবছর এদিনে সারাবিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বায়তুল মোকাদ্দাসে ইহুদিদের অবৈধ দখল দারিত্বের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রকাশ করেন এবং ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের কবল থেকে পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ও বাইতুল মোকাদ্দাসকে মুক্ত করার জন্য নতুন শপথ গ্রহণ করে থাকেন। তাই মাহে রমজানের ‘জুমাতুল বিদা’ তথা শেষ শুক্রবারকে আল-কুদস দিবসও বলা হয়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সামনে লাইলাতুল কদরের সম্ভাবনাময় মাত্র তিন রাত বাকি আছে। পঁচিশ, সাতাশ ও উনত্রিশতম রাত। এ রাতগুলো বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগীতে কাটানো দরকার। লাইলাতুল কদরের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল, এ গৌরবময় রজনীতে মানবজাতির পথপ্রদর্শক ও মুক্তির ঐশীগ্রন্থ ‘আল-কোরআন’ অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং কদরের সম্ভাবনাময় রাতে তারাবি-তাহাজ্জুদসহ অধিক পরিমাণে নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, একাগ্রচিত্তে দোয়া-দুরুদ, তাসবিহ-তাহলিল এবং আল্লাহ তায়ালার নিকট অতীত পাপমোচনে বিনীতভাবে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য পরিবার-পরিজনসহ সবার উদ্বুদ্ধ হওয়া উচিত। আল্লাহ সবাইকে কবুর করুন। আমীন!

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পেশ ইমাম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ