পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনার ধাক্কায় মেট্রোরেল প্রকল্পের গতি কমেছে। এ পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্পের ৬৬১জন কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে গত মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২১৯জন। এ কারণে ২৫ জনের কর্মীদের গ্রুপকে ১০ জনে নামিয়ে আনা হয়েছে। শুধু মেট্রোরেল নয়, করোনার কারণে চলতি অর্থ বছরের ১৭২৪টি উন্নয়ন প্রকল্প সঙ্কটে পড়েছে। এসব প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হচ্ছে না। চলতি অর্থবছরের শুরুতে জিডিপির যে প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা অর্জন করতে পারা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) জানিয়ে দিয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে তারা জিডিপির যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল, তা অর্জন হবে না। এডিবি বলেছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চললেও পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। আমরা যখন পূর্বাভাস দিয়েছিলাম, তখন এই দ্বিতীয় ঢেউয়ের কথা বিবেচনায় নেয়া হয়নি।
অন্যদিকে, চলমান বিধি-নিষেধে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট স্থগিত করায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ ও অন্যান্য মেগা প্রকল্পে। বিষয়গুলো উল্লেখ করে গত ১৭ এপ্রিল পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীন সরকারের চায়না রেলওয়ে গ্রæপ লিমিটেড (সিআরইসি) একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়। তাতে বলা হয়, ফ্লাইট বন্ধ থাকায় প্রকল্পের কাজের গতি কমে গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনার প্রকোপ ঠেকাতে গত বছর প্রথম বিধিনিষেধ আরোপ করা হলে অন্যান্য খাতের মতো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প। বিভিন্ন প্রকল্পের বিদেশি পরামর্শক-প্রকৌশলী-কর্মীদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া, মালামাল আমদানি করতে না পারা, কর্মীদের করোনায় আক্রান্ত হওয়া, রিসোর্স স্থানান্তর করতে না পারাসহ নানা জটিলতায় পড়ে প্রকল্পগুলো। এতে করে প্রকল্পের গতি মুখ থুবড়ে পড়ে। এবারও তাই হয়েছে।
সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে পদ্মা সেতুর পরেই গুরুত্বপূর্ণ মেট্রোরেল প্রকল্প। রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে প্রায় ৬৪ শতাংশ। এই প্রকল্পের ট্রেনও ইতোমধ্যে জাপান থেকে ডিপো এলাকা দিয়াবাড়িতে এসেছে। পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালানোর জন্য ১৯ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। তবে প্রকল্পের কাজে বাধার সৃষ্টি করেছে করোনার সংক্রমণ। প্রকল্পের এপ্রিল মাসের অগ্রগতি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, করোনার সংক্রমণ শুরুর পর এ যাবত প্রকল্পের কাজে যুক্ত থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে ৬৬১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে গত এপ্রিল মাসেই করোনায় আক্রান্ত হন ২১৯ ব্যক্তি। মেট্রোরেলের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংক্রমণ প্রতিরোধে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে মেট্রোরেল নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষ ডিএমটিসিএল। এর মধ্যে ২৫ জনের কর্মীদের গ্রæপকে ১০ জনে নামিয়ে আনা হয়েছে। আর মেট্রোরেলের কর্মীদের জন্য নির্মিত ফিল্ড হাসপাতাল দুটিতে শয্যা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রকল্প সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রকল্পটিতে প্রায় সাত হাজার দেশি-বিদেশি কর্মী রয়েছেন। তাই সে অনুপাতে সংক্রমণকে খুব বেশি বলে মনে করছেন প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা। করোনা আক্রান্তের প্রভাবে মেট্রোরেল বাস্তবায়নে গতি অনেকটাই কমে গেছে। যার প্রভাব দেখা গেছে রাজধানীর মতিঝিল থেকে প্রেসক্লাব হয়ে দোয়েল চত্ত¡র পর্যন্ত। মতিঝিলে পিলারগুলো আগের মতো ফাঁকা পড়ে আছে। শাপলা চত্ত¡রে স্টেশন নির্মাণের কাজ চলছে খুবই ঢিমেতালে।
সূত্রমতে, গত বছর মার্চে প্রথম দেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পরে। এরপর মেট্রোরেলের মাঠ পর্যায়ের কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। দেশ ত্যাগ করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জাপান ও ইতালির প্রকৌশলীরা। তবে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে গত আগস্টে তারা আবার ফিরতে শুরু করেন। আর গত অক্টোবর পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্পে করোনা আক্রান্ত কর্মীর সংখ্যা ছিল ২৯৭ জন। এর পরের দুই মাসে (নভেম্বর ও ডিসেম্বর) কভিডে আক্রান্ত হন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট যথাক্রমে ২৫ ও ১৫ জন। এতে ডিসেম্বর শেষে মেট্রোরেল প্রকল্পের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩২১ জন। চলতি বছর জানুয়ারি মাসে মেট্রোরেলের আরও ২১ কর্মী আক্রান্ত হন। ফেব্রæয়ারিতে না কমে দাঁড়ায় মাত্র দুজন। তবে মার্চে আক্রান্ত বেড়ে যায়। ওই মাসে ৮৭ জন করোনায় আক্রান্ত হন। আর এপ্রিল মাসে রেকর্ড ২১৯ জন করোনা আক্রান্ত হন মেট্রোরেল প্রকল্পে। এতে সব মিলিয়ে এপ্রিল পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬৬১ জন। যদিও প্রকল্পটির কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাননি। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনার প্রভাবে মেট্রোরেলের বাস্তবায়নে গতি কিছুটা কমেছে। এপ্রিল শেষে প্রকল্পটির অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৫৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চ শেষে এ হার ছিল ৫৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসে অগ্রগতি দুই দশমিক ১০ শতাংশ। যদিও এর আগের দুই মাসে প্রকল্পটির কাজ হয় তিন শতাংশেরও বেশি হারে।
এ প্রসঙ্গে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক বলেন, এবারের করোনার ব্যাপকতা বুঝতে বুঝতে কিছু কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। একটি গ্রæপের প্রায় সব কর্মী আক্রান্ত হওয়ার পর দ্রæত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আগে একটি গ্রæপে ২৫ জন করে কাজ করলেও বর্তমানে তা ১০ জনে নামিয়ে আনা হয়েছে, যাতে বেশি সংখ্যক কর্মী আক্রান্ত না হন। পাশাপাশি আরও কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া মেট্রোরেলের প্রথম সেট (ছয় কোচ) দেশে এসে পৌঁছেছে। বর্তমানে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা (কমিশনিং) করা হচ্ছে। এরপর ট্রায়াল রান হবে। তবে মেট্রোরেল ঠিক কবে নাগাদ উদ্বোধন করা হবে তা চূড়ান্ত হয়নি। এ প্যাকেজের অগ্রগতি ৪২ দশমিক ৬০ শতাংশ। আর ডিপো ইক্যুইপমেন্ট এবং অন্যান্য ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম স্থাপনের অগ্রগতি ৬৯ দশমিক ২৩ শতাংশ।
উল্লেখ্য, মেট্রোরেল প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয় ২০১২ সালে। তবে নকশা প্রণয়ন শেষে মূল কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের জুনে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের। তবে প্রাথমিকভাবে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণের কথা থাকলেও পরবর্তী সময়ে তা কমলাপুর পর্যন্ত স¤প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।