নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের উত্তরসূরি হয়ে এসে চেলসির দায়িত্ব নিয়েছেন গত ২৬ জানুয়ারি। সে হিসেবে লন্ডনের ক্লাবে গতকাল ছিল তার ১০০তম দিন। টমাস টুখেলের কোচিং ক্যারিয়ারের অন্যতম সুন্দর ১০০ দিনই বটে!
যখন চেলসির দায়িত্ব নিয়েছিলেন, ল্যাম্পার্ডের অধীনে পথ হারানো চেলসি তখন মৌসুমে কোনো রকমে মুখ রক্ষার আশায়। কী লিগে, কী চ্যাম্পিয়ন্স লিগে... চেলসিকে ঘিরে যেন তখন আশা আর নেই। টুখেলও তখন কিছুটা অবসন্নতায় কি ভুগছিলেন না? তার মাসখানেক আগে, বড়দিনের কিছু আগে খবর এসেছিল, পিএসজি তাঁকে বরখাস্ত করছে। অথচ নেইমার-এমবাপ্পেদের ক্লাবটাকে আগের মৌসুমেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে তুলেছিলেন তিনি!
১০০ দিন পর এসে দেখা যাচ্ছে, চেলসি লিগে তো একটা বলার মতো অবস্থান করে নিয়েছেই, রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে কাল টুখেলের অধীনে আরেকবার উঠে গেল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালেও! এতে নিশ্চিত হলো, তাঁকে গত ডিসেম্বরে তাড়িয়ে দেওয়া পিএসজি যে টুর্নামেন্টে সেমিফাইনালে বাদ পড়েছে, সেই টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেই টুখেল গড়লেন অনন্য এক রেকর্ড। টানা দুই মৌসুমে দুই ভিন্ন ক্লাবকে ইউরোপের ক্লাব শ্রেষ্ঠত্বস‚চক এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠানোর রেকর্ড আর কারও নেই। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ যুগে তো নেই- টুর্নামেন্টটা ১৯৯২ সালে ছক বদলানোর আগে যে নামে পরিচিত ছিল, সেই ইউরোপিয়ান কাপ যুগেও এমন রেকর্ড কোনো কোচের ছিল না।
দুটি ভিন্ন ক্লাব, ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন ধরনের খেলোয়াড়। অথচ তাদের নিয়ে টানা দুই মৌসুমে দুটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে! অবিশ্বাস্য রেকর্ডটা নিয়ে অবশ্য টুখেলের অত আদিখ্যেতা নেই। পরশু রাতে ম্যাচ শেষে যখন প্রশ্ন হলো, এমন রেকর্ডের পথে টুখেলকে নিশ্চয়ই অনেক কিছুই ঠিকঠাকভাবে করতে হয়েছে, তাতে চেলসি কোচের স্বভাবসুলভ হাসির উত্তর, ‘অথবা করতে হয়নি। কারণ একই ক্লাবকে নিয়ে তো টানা দুই ফাইনালে উঠিনি! ব্যাপারটা আপনি কীভাবে দেখছেন তার ওপর নির্ভর করে।’
অবশ্য চেলসির ফাইনালে ওঠায় তার তৃপ্তি আছে। সেটির কথা জানিয়েছেন এভাবে, ‘আমি খুব খুশি যে আমরা এমন কিছু করতে পেরেছি। ফুটবলে আমরা জীবন যাপন করার এই সুযোগ পেয়ে, এই প্যাশনটাকে পেশা হিসেবে পাওয়ার সুযোগ পেয়ে আমি কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞ এই পর্যায়ের ফুটবলে কিছু করতে পেরে, আরেকটি ফাইনালে উঠতে পেরে।’
এই দারুণ অর্জনের পথ পাড়ি দিতে টুখেলের হাতে খেলোয়াড় ছিল। এই মৌসুমেই কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করে ল্যাম্পার্ডের হাতে কাই হাভার্টজ, টিমো ভের্নার, হাকিম জিয়েশ, বেন চিলওয়েল, এদুয়ার্দ মেন্দিদের এনে দিয়েছে চেলসি। আগে থেকে এনগোলো কান্তে, ম্যাসন মাউন্ট, জর্জিনিও, চেজার আসপিলিকেতারা তো ছিলেনই। ল্যাম্পার্ডের দায়িত্ব ছিল, এত তারকাকে নিয়ে দারুণ সমন্বয়ে একটা দল গড়ে দেওয়া। গত মৌসুমে তরুণদের নিয়ে চমক দেখানো ল্যাম্পার্ড এই মৌসুমে এত দামি খেলোয়াড় পেয়ে আর তালগোল রাখতে পারেননি। সে জায়গায় টুখেলে এসে কত অল্প সময়ে কী দারুণ সফল!
ক্লাবের ইতিহাসে তৃতীয় ফাইনালে দ্বিতীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপার কথাও এখন বেশ জোর নিয়েই বলতে পারছেন চেলসির সমর্থকেরা। ওহ, মাঝে সময় করে এফএ কাপের ফাইনালেও উঠে গেছে চেলসি। মৌসুমে দুই শিরোপার স্বপ্ন তাদের। পাশাপাশি ল্যাম্পার্ড যে চেলসিকে লিগের পয়েন্ট তালিকায় ৯ নম্বরে রেখে গেছেন, সেই চেলসি এখন লিগেরও চার নম্বরে। এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে চেলসি জিতুক বা হারুক, এই অবস্থান ধরে রাখতে পারলে আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলাও নিশ্চিত হবে।
এই ১০০ দিনে এত অর্জনের পালকে টুখেলের আরেকটি দারুণ অর্জন সম্ভবত এই যে, এ পথে সময়ের ফুটবলের সেরা কোচদের প্রায় সবারই মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। সেখানে তার রেকর্ডটা দারুণ জ্বলজ্বলে। পরশু হারালেন রিয়াল মাদ্রিদের জিনেদিন জিদানকে, এর আগে ম্যানচেস্টার সিটির পেপ গার্দিওলা, লিভারপুলের ইয়ুর্গেন ক্লপ, টটেনহামে হোসে মরিনহো (এখন টটেনহাম থেকে বরখাস্ত তিনি), এভারটনের কার্লো আনচেলত্তি, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের দিয়েগো সিমিওনে- চেলসিতে ১০০ দিনে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে ইউরোপিয়ান ফুটবলে সময়ের অন্যতম সেরা এই ছয় কোচের মুখোমুখি হয়েছেন টুখেল আটটি ম্যাচে, হারিয়েছেন সবাইকেই! এর মধ্যে সিমিওনেকে হারিয়েছেন দুই ম্যাচে দুবার! এই আট ম্যাচে কোনো গোলও খায়নি তার দল!
এর মধ্যে পরশুর ম্যাচের প্রতিপক্ষ রিয়াল মাদ্রিদ আর জিদানের বিপক্ষে আরও দুটি দারুণ রেকর্ড হলো তার। ইতিহাসে প্রথম কোচ হিসেবে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে টানা ৬ ম্যাচে অপরাজিত থাকলেন টুখেল। আর জিদানের বিপক্ষে অপরাজিত থাকলেন পাঁচবারের মুখোমুখিতে। জিদানের বিপক্ষে এত ম্যাচ খেলে হারেননি, এমন কোচ এই মুহূর্তে ফুটবলে আর দ্বিতীয়টি নেই। চেলসির টুখেলের মতো আসলেই আর কেউ নেই। আজকের এই নজরকাড়া ফুটবল খেলা চেলসির চার মাস আগের পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক। মৌসুমে দারুণ শুরুর পরও মাঝপথে এসে লিগে আট ম্যাচের পাঁচটিতে হেরে শীর্ষ থেকে নেমে যায় ৯ নম্বরে। ওই অবস্থায় জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেন টুখেল আর পাল্টে যায় চেলসি। নতুন কোচের দেখানো পথে লিগে মাত্র একটিতে হেরেছে তারা, শীর্ষ চারে থেকে লিগ শেষ করার সম্ভাবনাও এখন উজ্জ্বল। গত মৌসুমে পিএসজির হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠেও শিরোপা জেতা হয়নি টুখেলের। এবার সুযোগ সেই ভুল শুধরে নেওয়ার। অধরাকে ছোঁয়ার। সামনে অবশ্য কঠিন চ্যালেঞ্জ, দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ম্যানচেস্টার সিটি। আগামী ২৯ মে তুরস্কের ইস্তানবুলে শিরোপা লড়াইয়ে নামবে দুই ইংলিশ ক্লাব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।