পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রশাসনের কঠোর অবস্থানে গ্রেফতার আতঙ্কে দিন পার করছেন সারা দেশের আলেম উলামারা। গ্রেফতারের পাশাপাশি অনেক আলেমের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হচ্ছে পুরাতন মামলায়। সারা দেশের নিরপরাধ আলেমদের বিরুদ্ধে পুলিশের হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। দেশব্যাপী আলেমদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা, আলেমদের তালিকা তৈরি এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেয়ার প্রেক্ষিতে লকডাউনের দরুন অর্থাভাবে অনেক কওমি মাদরাসার লিল্লাহ বোর্ডিং ও এতিমখানায় হাজার হাজার ছাত্র মানবেতর জীবনযাপন করছেন। করোনা মহামারিতে সারা দেশের প্রায় ২০ হাজার কওমি মাদরাসা বিপর্যস্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুরু থেকেই মাদরাসা শিক্ষা ও আলেম উলামাদের নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রদান করে আসছেন। সারা দেশের গ্রেফতার ও হয়রানীর পাশাপাশি পুলিশের বাড়াবাড়ির কারণে মাদরাসা শিক্ষা ও আলেম উলামাদের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর যে অবদান রেখে চলেছেন তা মøান হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ। স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে দেশব্যাপী আলেম সমাজের উপর যে অত্যাচার চলছে তা নজিরবিহীন ও অমানবিক।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, দেশের দ্বীনি মাদরাসাগুলোর বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। একদিকে লকডাউন অপরদিকে সরকারি প্রশাসনের নানামুখি হয়রানির কারণে মাদরাসাগুলো চরমভাবে বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। প্রশাসনের নানামুখি হয়রানি বন্ধ না হলে দেশের হাজার হাজার কওমি মাদরাসার চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হতে পারে। যার ফলে লাখ লাখ আলেম যেমন বেকার হয়ে পড়বে, তেমনি দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের বিশাল একটি অংশ ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হবে। মানুষের নৈতিক শিক্ষার বিকাশ বন্ধ হয়ে যাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন করে হেফাজতে ইসলামের দুইশ’ নেতার তালিকা তৈরি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই তালিকা ধরে রাজধানী এবং ঢাকার বাইরেও অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জেলা পুলিশের সহায়তা নিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি এ অভিযান চালাচ্ছে। প্রতিনিয়ত গ্রেফতার, গ্রেফতার আতঙ্কে আত্মগোপনে থাকা ও নজরদারির ভয় বিরাজ করছে আলেম উলামাদের মধ্যে। ইতোমধ্যে গোয়েন্দা পুলিশের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে তালিকা ভাগ করে দেয়া হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও ঢাকার বাইরের অভিযানে কাজ করছে।
বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে বায়তুল মোকাররমে ব্যাপক নাশকতা হয়। সেটাকে পুঁজি করে গুজব ছড়িয়ে বেশ কয়েকটি জেলায় ব্যাপক তাণ্ডব চালানো হয়। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাণ্ডবে যারা জড়িত ছিল তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে। যারা নাশকতায় জড়িত ছিল, উসকানি দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হবে।
মাঠ পর্যায়ের একজন পুলিশ কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মূলত হেফাজতের শীর্ষ নেতাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে পুরনো মামলায়। বিশেষ করে ২০১৩ সালের মে মাসে যে ঢাকা চলো অভিযানের সময় সারা দেশে নাশকতা, সেই মামলাসহ পুরনো বিভিন্ন মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। সামনে আরো গ্রেফতার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখন গ্রেফতার আতঙ্ক তাদের মধ্যে রয়েছে সেটা আমরা দেখতে পারি না। আমরা উপরের নির্দেশ পালন করছি।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, তালিকাভুক্ত আলেমদের সার্বক্ষণিকভাবে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তারা কোথায় কোথায় যাচ্ছেন এবং কার সঙ্গে বৈঠক করছেন, সেসবের খবর নেয়া হচ্ছে। তালিকাভুক্ত আলেমরা যাতে কওমি মাদরাসার সাধারণ শিক্ষার্থীদের উসকানি দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারেন, সেজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ডিএমপিতে দায়ের হওয়া মামলার অনেক আসামি ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় রয়েছে। তাদেরও ধরতে অভিযান চলছে। আমাদের গোয়েন্দা পুলিশ তাদের নজরদারি এবং গ্রেফতারের চেষ্টা করছে। একইসঙ্গে কিছু কিছু আসামিকে ধরতে সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশকে রিকুইজিশন দিচ্ছি। তারা গ্রেফতার করে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেবে। আইন ভঙ্গকারী কারো বিরুদ্ধে আমাদের কোনো ছাড় নেই। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি এবং এজাহারে নাম নেই কিন্তু বিশৃঙ্খলায় সম্পৃক্ততা বা উসকানিতে সম্পৃক্ততা পাওয়া যাচ্ছে যাদের, তাদেরও গ্রেফতার করা হবে।
রাজধানী রামপুরা বনশ্রির একটি মাদরাসার প্রধান মুফতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সাধারণত কওমি মাদরাসা চলে জনসাধারণের দান-অনুদানের মাধ্যমে। কোনো সরকারি দান-অনুদান কওমি মাদরাসা গ্রহণ করে না। দান-অনুদানগুলো রমজান মাস, কোরবানির ঈদ এবং বিভিন্ন প্রোগ্রাম উপলক্ষে আসে। দান-অনুদানের মৌসুমে এই লকডাউন হওয়াতে চরম বিপাকে পড়েছে কওমি মাদরাসাগুলো। আমাদের মাদরাসায় প্রায় সময় পুলিশ আসে। পুলিশ মাদরাসার শিক্ষকদের সম্পর্কে নানা ধরনের তথ্য সংগ্রহ এবং তালিকা তৈরি করে। এতে করে অনেক শিক্ষক আতঙ্কের মধ্যে থাকেন। এর প্রেক্ষিতে মাদরাসার লিল্লাহ বোর্ডিং ও এতিমখানার ছাত্ররা মানবেতর জীবনযাপন করছে। কোনো অপরাধের সাথে মাদরাসার কোনো আলেম সম্পৃক্ত থাকলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। তিনি পুলিশের এ ধরনের হয়রানি বন্ধ করার দাবি জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।