পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
![img_img-1720355487](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678437663_IMG-20230310-WA0005.jpg)
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হেফাজতে ইসলামসহ দেশের বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতাদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। হেফাজতের নেতারা সরকারের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করলেও ক্ষমতাসীনরা তাদের আর কোনো ধরনের ছাড় দিতে রাজি নয়। ভবিষ্যতে তারা যাতে আর কোনদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সে জন্য আইনীভাবে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আর এরই অংশ হিসাবে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা এবার বিভিন্ন ইসলামী দলের শীর্ষ নেতাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির খোঁজ খবর নিতে শুরু করেছে। অর্থাৎ ইসলামী দলের শীর্ষ নেতা ও তাদের নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন মাদরাসা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কঠোর গোয়েন্দা নজরদারীতে রয়েছে। গোয়েন্দারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন ইসলামী দলের ২৩ শীর্ষ নেতা ও ৩০টি প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা তৈরী করেছে। এই তালিকা ধরে তদন্তে নেমে পুলিশ ৩শ অর্থ দাতার উৎস খুঁজে দেখছে। এ ছাড়া নেতাদের পরিচালিত বিভিন্ন মাদরাসায় অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্রও তারা খুঁজে পেয়েছে।
দেশের প্রায় অধিকাংশ মাদরাসাই অনুদানে চলে। অনেক মাদরাসা পরিচালনায় দেশের বাইরে ও ভেতর থেকে যেসব অনুদান এসেছে তার পরিমাণ কত এবং কোথায় কীভাবে এসব অর্থ ব্যয় হয়েছে তার কোন হিসাব নেই। অনুদানের অর্থ মাদরাসার ব্যাংক হিসাবে জমা হওয়ার কথা থাকলেও বহু মাদরাসার ব্যাংক হিসাবই খোলা হয়নি। এতে অনুদানের অর্থ জমা হয়েছে নেতাদের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে। পুলিশ ইতোমধ্যেই হেফাজতসহ বিভিন্ন ইসলামী দলের ২৩ জন শীর্ষ নেতা এবং ৩০টি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইউনিটের কাছে। ৩০টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় সবই নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এবং চট্টগ্রাম এলাকার। এ ছাড়া হেফাজত নিয়ন্ত্রিত সব মাদরাসায় পর্যায়ক্রমে তদন্ত চালানো হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিআইডির একজন কর্মকর্তা গতকাল (সোমবার) দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত মাদরাসাগুলোতে দেশের বাইরে থেকে অনেক অনুদান আসে। এসব টাকা জঙ্গী বা অন্য কোন খাতে ব্যয় হয়েছে কিনা তা তদন্ত করছে সিআইডি। একই সাথে মাদরাসাগুলোর টাকা কোন শিক্ষক বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করেছেন কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, এরই মধ্যে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন নেতার ব্যাংক হিসাবও আমরা খতিয়ে দেখছি। এ সব তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু বিষয়গুলো তদন্তাধীন তাই কতজনের বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে এ বিষয়ে মন্তব্য করা যাচ্ছে না। আমরা ঢাকা ও ঢাকার বাইরেও তদন্ত করছি বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন। সিআইডির ওই কর্মকর্তা বলেন, হেফাজতকেন্দ্রিক আন্দোলন-নাশকতায় যে অর্থ ব্যয় হয় তা কোথা থেকে আসে সে বিষয়েও তদন্ত হচ্ছে। যারা অর্থ অনুদান দেন তাদের বিষয়য়েও খোঁজ নেয়া হচ্ছে।
হেফাজত ও অন্যান্য ইসলামী দলের যেসব নেতার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে তারা হলেন- হেফাজতে ইসলামের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আমির (বর্তমানে আহবায়ক) আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা ইসমাইল নূরপুরী, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ও খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, পীর চরমোনাই ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির এবং বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহ-সভাপতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম, ইসলামী অন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম, ইসলামী অন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব প্রিন্সিপাল মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ শিক্ষা বোর্ড আল হাইআতুল উলিয়ার চেয়ারম্যান ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান (যাত্রাবাড়ি হুজুর), হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি এবং বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের মহাপরিচালক মুহাম্মদ মাহফুজুল হক, বাংলাদেশ ইমাম ও মুসল্লি ঐক্য পরিষদ ডেমরার সদস্য সচিব মাওলানা মাহমুদুল হাসান সিরাজী, বাংলাদেশ ইমাম ও মুসল্লি ঐক্য পরিষদ (কদমতলী) নেতা মাওলানা আব্দুল আলিম সাইফি, বাংলাদেশ ইমাম ও মুসল্লি ঐক্য পরিষদ শ্যামপুরের মাওলানা আব্দুল হক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের অর্থ সম্পাদক (বিলুপ্ত কমিটির) মুনির হোসাইন কাসেমী (বারিধারা মাদরাসা), ব্রাহ্মণবাড়িয়া দারুল আকরাম মাদরাসার পরিচালক আল্লামা সাজিদুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ বেড়াতলা মাদরাসার পরিচালক হাফেজ জোবায়ের আহাম্মদ আনসারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উচালিয়া মাদরাসার পরিচালক মাওলানা জহিরুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুহিলপুর দারমা মারাাসার পরিচালক মাওলানা মেরাজুল ইক কাশেমী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাটাই দক্ষিণ বিরাসা মাদরাসার পরিচারক আবু তাহের, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামিয়া ইউনুসিয়া মাদরাসার ছাত্র/সভাপতি জিয়া উদ্দিন জিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামিয়া ইউনুসিয়া মাদরাসার পরিচালক মুফতি মোবারক উল্লাহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইসলামপুর মাদরাসার পরিচালক বোরহান উদ্দিন কাশেমী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া ইউনুসিয়া মাদরাসার শিক্ষা সচিব আল্লামা আশেক এলাহী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কাজীপাড়া সৈয়দুন্নেছা মাদরাসার পরিচালক মাওলানা হাফেজ ইদ্রিস এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া অষ্টগ্রাম বাজার মাদরাসার পরিচালক মাওলানা বোরহান উদ্দিন।
এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীনই ১১টি মাদরাসার খোঁজ খবর নিচ্ছে গোয়েন্দাবাহিনী। যে সব প্রতিষ্ঠান গোয়েন্দা নজরদারিতে আছে সেগুলো হচ্ছে- সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় নিমাই কাশারীর জামিয়াতুল আবরার হাফিজিয়া মাদরাসা, সানারপাড় নয়া আটি কিসমত মার্কেটে অবস্থিত আশরাফিয়া মহিলা মাদরাসা, সানারপাড় আব্দুল আলী দারুস সালাম হিফজুল কোরআন মাদরাসা, মাদানীনগরের মাওলানা শাইখ ইদরীম আল ইসলামী, মাদানীনগরের আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদরাসা, নিমাই কাশারীর আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া নুরুল কোরআন মাদরাসা, মুত্তিনগর নয়াআটি ইফয়জুল উলুম মুহিউছঊন্নাহ আরাবিয়্যাহ মাদরাসা, ভ‚ইয়াপাড়া জামিয়া মোহাম্মদীয়া মাদরাসা, সাইনবোর্ড জামিয়াতুল ইব্রাহিম মাদরাসা, মারকুজুল তাহরিকে খাতমি নবুওয়াত কারামাতিয়া উলুম মাদরাসা এবং সিদ্ধিরগঞ্জ সুমিলপাড়া নুরে মদিনা দাখিল মাদরাসা।
এছাড়া হেফাজত নিয়ন্ত্রিত চট্টগ্রাম এলাকার মাদরাসাগুলো হচ্ছে-দাঁতমারা তালিমুল কোরআন ইসলামিয়া মাদরাসা, দাঁতমারা ছোট বেতুয়ার সিরাজুল উলুম মাদরাসা, ভুজপুর কাজিরহাট আল জামিয়া ইসলামিয়া এমদাদুল ইসলাম মাদরাসা, পশ্চিম ভুজপুর আল মাহমুদ ইসলামিয়া বালক/বালিকা মাদরাসা, ভুজপুর পশ্চিম আধারমানিক বড়বিল আল মাদরাসাতুল ইসলামিয়া আ-রাবিয়া হেফজখানা ও এতিমখানা বালক/বালিকা মাদরাসা, উত্তর নিশ্চিন্তপুর তালীমুল কুরআন বালক-বালিকা মাদরাসা ও এতিমখানা, পটিয়া আল-জামিয়া আল ইসলামিয়া মাদরাসা, পটিয়া হাফিজিয়া তালীমুল কুরআন মাদরাসা ও এতিমখানা, পটিয়া আশিয়া এমদাদুল উলুম মাদরাসা হেফজখানা ও এতিমখানা, ভুজপুর উত্তর বারমাসিয়া হাফেজুল উলুম ইসলামিয়া মাদরাসা, হাটহাজারী ফতেপুরের একটি মাদরাসা, হাটহাজারীর জামিয়া আহদিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম (হাটহাজারী বড় মাদরাসা), হাটহাজারী মেখল জামিয়া ইসলামিয়া হামিউস সুন্নাহ, হাটহাজারী জামিয়া ইসলামিয়া ক্বাসেমুল উলুম, হাটহাজারীর ফতেপুর জামিয়া হামিদিয়া নাছেরুল ইসলাম মাদরাসা, ফটিকছড়ির বাবুনগর আজিজুল উলুম মাদরাসা, ফটিকছড়ির আল জামিয়াতুল কোন আনিয়া তালিমুদ্দিন হেফজখানা ও এতিমখানা, ফটিকছড়ির নাজিরহাট আল জামেয়াতুল আরবিয়া নাসিরুল ইসলাম মাদরাসা এবং ফটিকছড়ির জাফতনগর হাফেকজুল উলুম মাদরাসা ও এতিমখানা।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার গতকাল ইনকিলাকে বলেন, হেফাজতের একাধিক নেতা এবং বেশকিছু মাদরাসার বিষয়ে জোরালো অনুসন্ধান চলছে। তিন শতাধিক ডোনারের (অর্থদাতা) নাম পাওয়া গেছে। বিদেশ থেকে অনেক অর্থ এসেছে। এসব অর্থ মাদ্রাসার ব্যাংক হিসাবে জমা হওয়ার কথা থাকলেও তা জমা হয়েছে নেতাদের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে। এসব টাকা হেফাজতকেন্দ্রিক আন্দোলনে ব্যয় করা হয়েছে বলেও রিমান্ডে থাকা হেফাজত নেতারা জানিয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।