Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

চট্টগ্রামে বজ্রবৃষ্টি হিমেল পরশে স্বস্তি

• খরতপ্ত আবহাওয়ায় পরিবর্তনের আভাস • হালদায় রুই কাতলা মা-মাছের ডিম ছাড়ার প্রস্তুতি

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১ মে, ২০২১, ৭:৪৫ এএম

টানা ছয় মাসের অনাবৃষ্টি, খরতাপে পুড়ে খাক হওয়া চট্টগ্রাম জনপদ অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টিপাতে খানিকটা সিক্ত হয়েছে। ঘন ঘন কড়কড়ে বজ্রের গর্জন, বিজলির চমকানি, ঘনঘোর মেঘমালা আর হিমেল হাওয়ায় ভর করে আজ শনিবার সেহেরি রাতের বেলায় বৃষ্টি নামে।

তাপপ্রবাহে দুর্বিষহ জনজীবনে সাময়িক হলেও শীতল পরশ বুলিয়ে দেয় প্রত্যাশিত এই বর্ষণ।
গতকাল বাদজুমা মসজিদে মসজিদে দেশজুড়ে তীব্র গরম ও খরা পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ এবং রহমতের বৃষ্টির জন্য আল্লাহর দরবারে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
চট্টগ্রাম নগরীতে আজ ভোর রাত সোয়া তিনটার দিকে হঠাৎ বিজলী চমকানি আর মুহূর্মুহু বজ্রের গর্জনে সুশীতল বৃষ্টিপাত শুরু হয়। স্থানভেদে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হয়। তবে বৃষ্টি স্থায়ী হয় ঘণ্টা খানেক। সেই সাথে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে হিমেল দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। বৃষ্টি থামলেও শীতল পরশের জের রয়েছে।
অসহনীয় তাপদাহের সময়েই এই প্রত্যাশিত বৃষ্টি, ঠাণ্ডা বাতাসে মাহে রমজানে এবং করোনাকালে জনজীবনে অপার স্বস্তি এনে দিয়েছে।
দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া ও বজ্রপাতের সময় চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বস্তি এলাকায় কাচা ঘরবাড়ি উপড়ে যায়।
হালদায় ডিম ছাড়ার প্রস্তুতি
এশিয়ায় মিঠাপানির রুই কাতলা মৃগেল (কার্প) জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্র 'মাছের ব্যাংক' খ্যাত বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষিত হালদা নদীতে মা-মাছের আনাগোনা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের ফলে শিগগিরই মা মাছের ডিম ছাড়ার দেখা দিয়েছে। মৌসুমের এই সময়ে বজ্রবৃষ্টি এবং হালদার পাহাড়ি উজান থেকে আসা ঘোলা পানির স্রোতে রুই কাতলা মৃগেল মা মাছেরা ভেসে ওঠে, দলে দলে ডিম ছাড়ে। অভিজ্ঞ জেলেরা বিশেষ পদ্ধতিতে নৌকার সাহায্যে ডিম সংগ্রহের উদ্দেশ্যে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে হালদার উভয় তীরে প্রস্তুত হয়েই অপেক্ষা করছেন।
সাধারণত অমাবস্যা অথবা পূর্ণিমার 'জো'র সময় হালদায় মা-মাছেরা ডিম ছাড়ে। আবহমান কাল থেকেই পুরো ব্যাপারটা প্রকৃতির আপন নিয়মেই হয়ে আসছে।
চোরা শিকারিদের হাত থেকে মা মাছ সুরক্ষার জন্য হালদা তীরে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। পাহারায় আছে নৌ পুলিশ।
আবহাওয়া পরিস্থিতি
অনেক জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তবে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত হালকা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাতের ফলে গরমের তীব্রতা কোথাও কোথাও কমতির দিকে। আবার কোথাও কোথাও তাপপ্রবাহ প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় ক্রমেই দেশের বিভিন্ন স্থানে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এরফলে তাপমাত্রা হ্রাসের সম্ভাবনা রয়েছে।
শুক্রবার বিভিন্ন স্থানে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টি হয়েছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৩৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭.২ এবং সর্বনিম্ন ২৭.৩ ডিগ্রি সে.।
পূর্বাভাস-
আজ শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের এবং কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চলের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি এবং এ সম্পর্কিত পূর্বাভাসে জানা গেছে, ঢাকা, সিলেট ও খুলনা বিভাগ এবং রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, নোয়াখালী, নেত্রকোণা, রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর ও পটুয়াখালী অঞ্চলের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তবে এই তাপপ্রবাহ কিছু জায়গায় কমতে পারে।
সারাদেশের দিনের তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টির প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং তাপমাত্রা হ্রাসের সম্ভাবনা রয়েছে। এরপরের ৫ দিনে আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।
আন্তর্জাতিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকারী স্যাটেলাইট সংস্থাসমূহ এবং আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসে জানা যায়, চলতি মে মাসের শুরু থেকে বাংলাদেশ এবং আশপাশ অঞ্চলে মেঘ বৃষ্টির আবহ তৈরি হতে পারে। গরম বাতাস কেটে গিয়ে বায়ুপ্রবাহে তথা আবহাওয়ায় পরিবর্তন আসতে পারে।
খরা পরিস্থিতিতে গত চার মাসে সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে ৯৪ শতাংশই কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আবহাওয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ