পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
১৯০১ সালে নির্মিত হয়েছিল তিস্তা রেল সেতু। রংপুরে তিস্তা নদীর উপর নির্মিত ব্রিটিশ আমলের ঐতিহাসিক সেই রেলসেতুর মেয়াদ ছিল ১০০ বছর। তিস্তা রেলসেতুর বয়স একশ’ বছর অতিক্রম করেছে ২০০০ সালে। মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পেরিয়ে গেছে আরও ২০ বছর। এখনও সেই সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে ট্রেন। এ ঝুঁকি এড়াতেই নতুন করে আরেকটি রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সেতুটি নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের কাজ চলছে। এ-সংক্রান্ত খসড়া সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিস্তা রেল সেতুটি নির্মাণে চারটি সম্ভাব্য রুট প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যমান সেতুর উজান ও ভাটিতে এ রুট চারটি প্রস্তাব করা হয়েছে। রুটভেদে মূল সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬৫০ থেকে ৭০০ মিটার। তবে ভায়াডাক্ট তথা উড়ালপথসহ মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে দুই হাজার ২২৯ থেকে দুই হাজার ৫০৩ মিটার।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, তিস্তা রেল সেতু চালুর ১২০ বছর পূর্ণ হয়েছে ২০২০ সালের ১৬ অক্টোবর। লালমনিরহাট রেল বিভাগের অধীন এ সেতুটি দিয়ে বর্তমানে ২০টি ট্রেন দৈনিক চলাচল করে। আগামীতে এ রুটে ট্রেনের সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে ট্রেন চলাচলে ঝুঁকি বাড়তে পারে। এ অবস্থায় সেতুটি নতুন করে নর্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নতুন সেতুটির এক্সেল লোড ধরা হয়েছে ২৫ টন। এতে সেতুর ভারবাহী ক্ষমতাও বাড়বে। আর চারটি সম্ভাব্য রুটের মধ্যে প্রথম অপশন মানে নদীর উজানে সেতুটি নির্মাণ করা হলে নতুন কোনো স্টেশন নির্মাণ করতে হবে। এক্ষেত্রে বিদ্যমান কাউনিয়া ও তিস্তা স্টেশনই ব্যবহার করা যাবে। আর এ অপশনে মূল সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬৫০ মিটার। তবে ভায়াডাক্টসহ মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে দুই হাজার ৫০৩ মিটার। এক্ষেত্রে সেতু নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এ-সংক্রান্ত খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেতুটি নির্মাণে প্রায় ৩৮ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। তবে ওই এলাকায় কোনো বাড়িঘর বা অবকাঠামো না থাকায় পুনর্বাসন খাতে কোনো অর্থ ব্যয় হবে না। সেতুটি নির্মাণে জমি অধিগ্রহণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ কোটি ১২ লাখ টাকা।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, সারাদেশের সঙ্গে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের রেল যোগাযোগ সৃষ্টিতে ১৮৯৯-১৯০০ সালে তিস্তা নদীর ওপর ২ হাজার ১১০ ফুট লম্বা প্রথম তিস্তা রেল সেতু নির্মাণ করে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। ১৯০১ সালে সেতুটি উদ্বোধন করা হয়। সে সময় দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রেল সেতু হিসেবে এটির ব্যাপক পরিচিতি ছিল। সেতুটি উত্তর পাশে লালমনিরহাটের সদর উপজেলার তিস্তা এবং দক্ষিণ পাশে যুক্ত হয়েছে রংপুরের কাউনিয়ার সঙ্গে। সেতুটির মেয়াদ ধরা হয়েছিল ১০০ বছর। রেলওয়ে সূত্র জানায়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সেতুটিতে মিত্রবাহিনী বোমা হামলায় কাউনিয়া প্রান্তের একটি গার্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে মেরামতের মাধ্যমে ১৯৭২ সালে সেতুটি পুনরায় চালু করা হয়। ১৯৭৭ সালে রেলওয়ে এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর যৌথভাবে রেল সেতুতে মিটারগেজ লাইনের পাশে ২৬০টি স্টিলের টাফ প্লেট ও কাঠের পাটাতন স্থাপন করে। আর ১৯৭৮ সালে ট্রেনের পাশাপাশি সেতুটি দিয়ে সড়ক যোগাযোগ শুরু করা হয়। সে থেকেই সেতুটি ওপর দিয়ে ট্রেন ছাড়াও যাত্রীবাহী বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করত। এতে মাত্রাতিরিক্ত মালবোঝাই ট্রাক ও পাথরের ট্রাক পারাপারের ফলে সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ২০০১ সালে রেল সেতুর পূর্ব পাশে তিস্তা সড়ক সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে ভিত্তিপ্রস্তর নির্মাণ করা হয়। পরে ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতু উদ্বোধন করেন। এতে মেয়াদোত্তীর্ণ রেল সেতুতে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে শুধু ট্রেন চলাচল অব্যাহত রাখা হয়।
কয়েক মাস আগে তিস্তা রেল সেতু পরিদর্শন করে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, কানেক্টিভিটি বাড়াতে তিস্তা রেল সেতুতে ট্রেনের গতি ও সংখ্যা বাড়ানো হবে। তাই তিস্তা নদীর ওপর আরেকটি রেল সেতু নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পুরনো সেতুর পশ্চিম পাশে আরেকটি ডুয়েলগেজ সেতু নির্মাণে খুব দ্রæত কার্যক্রম হাতে নেয়া হবে। এর পরপরই নতুন রেলসেতু নির্মাণের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।