পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কোন পথে যাচ্ছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ? সবার চোখ এই সংগঠনের দিকে। এ নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা। দেশে রাজনীতি দীর্ঘদিন স্থবির থাকায় অরাজনৈতিক ইসলামী এ সংগঠন ও এর নেতারা সাত-আট মাস ধরে এপিঠ-ওপিঠ আলোচনার শীর্ষে। সচেতন নাগরিক মহল ও বিশ্লেষকরা বলছেন, হেফাজতে ইসলাম এ মুহূর্তে সঙ্কটে পড়েছে। আছে নানামুখী চাপে। তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে এ পরিস্থিতি উতরে বা সামাল দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে হেফাজতে ইসলাম।
অরাজনৈতিক এ সংগঠনটি দেশের ছোট-মাঝারি, অঞ্চলভিত্তিক অনেকগুলো রাজনৈতিক ইসলামী দল-জোট সংগঠনের সমহারে গঠিত। ফলে হেফাজতের ভেতরে আছে নানামুনীর নানা মত-পথ। সেইসাথে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারকে সমর্থন নাকি বিরোধিতা এ নিয়ে আছে স্পষ্ট দুটি ভাগ। সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের বিরোধিতায় রাজপথে আন্দোলনে নেমে সাংঘর্ষিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষাপটে কার্যত সরকারের তীব্র রোষানলে পড়েছে হেফাজত। সেইসাথে আগুনে ঘি ঢালার মত ঘটনা ঘটেছে সংগঠনটির সাবেক বহুল আলোচিত যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের নারায়ণগঞ্জে রিসোর্ট কান্ডের অস্বস্তিকর ঘটনা এবং তা জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক তীব্র অসন্তোষের সাথে তুলে ধরা। এরপরই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, হেফাজতের অপকর্মের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। অন্যদিকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ঢাকা-চট্টগ্রাম-ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সারাদেশে হেফাজত কর্মীদের উপর মামলার পর মামলা, ধরপাকড় শুরু করে।
অপরদিকে অনেকটা আকস্মিকভাবে গত রোববার রাতে হেফাজতের সাবেক আমির আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। ওইদিন তাকে কয়েকজন শীর্ষ নেতাসহ আটকের প্রস্তুতি ছিল মর্মে ব্যাপক আলোচনা হয় চট্টগ্রামে। জুনাইদ বাবুনগরী কমিটি বাতিলের সাড়ে তিন ঘণ্টার মাথায় আহ্বায়ক কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন। এতে বাবুনগরীকে আহ্বায়ক এবং আল্লামা মহিববুল্লাহ বাবুনগরী, নুরুল ইসলাম জিহাদী, সালাউদ্দিন নানুপুরী ও মিজানুর রহমান চৌধুরীকে সদস্য করা হয়েছে। জুনাইদ বাবুনগরীর ঘনিষ্ঠজনরা সাংবাদিকদের জানান, আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার মধ্যদিয়ে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
কমিটি বাতিল এবং আহ্বায়ক কমিটি গঠন উভয় পদক্ষেপই ‘অস্বাভাবিক’ হিসেবে দেখছে হেফাজত কর্মীরা। তবে তারা বাবুনগরীসহ নেতৃত্বের সঙ্কট মুহূর্তে কৌশলে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রশংসা করছেন। অদূর ভবিষ্যতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কথা চলছে। তবে এতে সাবেক আমির মরহুম আল্লামা শফী পুত্র সরকার সমর্থক লবির সাবেক হেফাজত নেতা মাওলানা আনাস মাদানী, মঈনুদ্দীন রুহীসহ অনেকে বড়সড় পদে দাপটের সাথে ফিরে আসার গুঞ্জন রয়েছে।
ব্যাপক ধরপাকড় আর কঠোর নজরদারির মধ্যেও কৌশলে পথচলার নীতি গ্রহণ করেছে সংগঠনটি। হেফাজতের মাঠপর্যায়ের সক্রিয় নেতারা বলছেন, নানামুখী চাপ সেইসাথে সঙ্কট মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় কমিটি বাতিল এবং আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মধ্যদিয়ে হেফাজত প্রধান আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী এবং তার ঘনিষ্ঠ প্রবীণ নেতারা রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। চলতি পথে প্রতিবন্ধকতা আসলে গাড়িতে ব্যাকগিয়ার দিয়ে বিকল্প পথে গতি নিতে হয়। আবার দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে ঘুরে দাঁড়াতে হয়। নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন মানে থমকে যাওয়া নয়, বরং নতুন উদ্যমে দ্বিগুণ শক্তিতে ঘুরে দাঁড়ানোরই কৌশল বলছেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
হেফাজতের ভেতরেও সঙ্কট আছে। সারাদেশে ব্যাপক ধরপাকড়ের মধ্যে নায়েবে আমির পদমর্যাদার নেতাসহ অনেকেই সংগঠন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন, পদত্যাগ করেছেন। এটিও এক ধরনের সঙ্কট হিসেবে দেখছেন দলের নেতারা। আবার সরকারের সাথে সমঝোতা নিয়েও দলের মধ্যে বিভক্তি এবং মতবিরোধ স্পষ্ট। বিভিন্ন দল ও সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হেফাজতে দলমতের ভিন্নতাও রয়েছে। এসবের মেলবন্ধন কঠিন চ্যালেঞ্জের বিষয়। সারাদেশে ব্যাপক মামলা-হুলিয়া এবং ধরপাকড়ের পর কঠিন চাপে পড়েন সংগঠনের নীতি-নির্ধারকেরা। ধরপাকড়ে নাস্তানাবুদ কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতারাও। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার বাবুনগরীসহ হেফাজতের কেন্দ্রীয় আরও বেশ কয়েকজন নেতা ছাড়াও সাড়ে তিন হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হাটহাজারী থানায় আরও দুটি মামলা হয়। ২৬ মার্চের ঘটনায় হাটহাজারী থানায় সাতটি মামলার পর হঠাৎ করে বাবুনগরীকে আসামি করে আরও তিনটি মামলা দায়েরের ঘটনাকে হেফাজতের প্রতি সরকারের কঠোর অবস্থানের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
এমন প্রেক্ষাপটে কোন কৌশলে হেফাজত সামনে এগিয়ে যাবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। সংগঠনটির এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত একাধিক নেতা বলেছেন, সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে নানা কৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে। শুধু অরাজনৈতিক এবং প্রবীণ নেতাদের দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করাও একটা কৌশল। বিষয়টি হেফাজত নেতারা পরিষ্কার না করলেও কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার আগে ভিডিও বার্তায় আল্লামা বাবুনগরী জানিয়েছেন, ‘সার্বিক চলমান অস্থির এবং নাজুক পরিস্থিতি’ বিবেচনায় নিয়েই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সরকারের চাপের মুখে সমঝোতার অংশ হিসেবে নাকি নিজেদের আভ্যন্তরীণ সঙ্কটের কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেটা নিয়েও বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে। তবে হেফাজতের নেতারা মনে করেন, চাপ এবং সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার বিষয়টি জরুরি ছিল। দ্রুত আহ্বায়ক কমিটি গঠনও কৌশলের অংশ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ কঠিন সময়ে সংগঠনের ঐক্য ধরে রাখার ক্ষেত্রে যে সঙ্কট সেটা কাটিয়ে উঠতে এ ধরনের পদক্ষেপ অন্যতম কারণ হতে পারে। কারণ অতীতে হেফাজত আরও কঠিন সঙ্কট এবং জুলুম, নিপীড়ন মোকাবেলা করেছে। তখন হেফাজকে দ্বিগুণ শক্তিতে ঘুরে দাঁড়াতেও দেখা গেছে। এজন্য তারা কৌশল অবলম্বন করে এগিয়ে গেছে। এবারও তার ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
হেফাজতের কয়েকজন নেতা জানান, অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম কোনো ‘রাজনৈতিক’ কর্মকান্ডে জড়াবে না। বরং গণজাগরণ মঞ্চের নামে জনবিচ্ছিন্ন ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে হেফাজত সোচ্চার থাকবে। নাস্তিক, মুরতাদদের বিরুদ্ধে হেফাজতের অবস্থান আরও কঠোর হবে। এদেশের ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যেকোনো অপতরৎপরতা এবং চক্রান্তের বিরুদ্ধে অতীতের মত হেফাজতে ইসলাম সোচ্চার হবে। তৌহিদী জনতার ঈমান আকিদা এবং ইসলামের প্রশ্নে হেফাজতের ভূমিকা হবে বরাবরের মতই আপোষহীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।