Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দক্ষিণাঞ্চলে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়

দাবদাহ-লাগাতার অনাবৃষ্টি ও সাগরের নোনা পানি

নাছিম উল আলম : | প্রকাশের সময় : ২৮ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০০ এএম

স্মরণকালের ভয়াবহ দাবদাহের সাথে লাগাতার অনাবৃষ্টিতে উজানের প্রবাহ হ্রাস পাওয়ায় সাগরের নোনা পানিতে সয়লাব দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদী। এতে স্বাভাবিক জনজীবনে বিপর্যয়ের সাথে মারাত্মক পরিবেশ সঙ্কট সৃষ্টি করছে। বরিশালের তাপমাত্রা ইতোমধ্যে স্মরণকালের সর্বোচ্চ ৩৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছে। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৫.৪ ডিগ্রি বেশি। অব্যাহত তাপ প্রবাহে দক্ষিণাঞ্চলে চলমান ডায়রিয়া রোগীদের পানিশূন্যতা তরান্বিত করে জীবনের ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে।
নদ-নদীতে লবণাক্ততার মাত্রা ১২শ’ পিপিএম অতিক্রম করেছে। ফলে নদী-খালের পানি ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। যারা এসব উৎসের পানি ব্যবহার করছেন, তাদের ডায়রিয়া ঝুঁকিও বাড়ছে। সরকারি হিসেবে ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৩৮ হাজার মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। গত ৪ মাস ধরেই দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টির দেখা নেই। বৃষ্টির অভাবে ফসলী জমি থেকে শুরু করে খাল-বিল শুকিয়ে চৌচির। মুগ, ভুট্টা, সয়াবিন ও শাক-সবজিসহ সূর্যমুখীর উৎপাদনে মারাত্মক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। পানি সঙ্কটে বরগুনা এলাকায় বোরো ধানের সেচ ব্যবস্থা পর্যন্ত ব্যাহত হচ্ছে।

গত অক্টোবর থেকেই দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টির অভাব শীত মৌসুমে তা ততটা অনুভুত না হলেও ক্রমে সঙ্কট ঘনীভ‚ত হতে থাকে। জানুয়ারি মাসে বরিশাল অঞ্চলে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৮.৯ মিলিমিটার হলেও কোন বৃষ্টি হয়নি। আবহাওয়া বিভাগের মতে, ফেব্রæয়ারিতে ২৭ মিলিমিটারের স্থলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১ মিলিমিটার। মার্চে ৫৭.১ মিলিমিটারের স্থলে মাত্র ০.৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ৯৯.৫% কম। আর চলতি মাসে ১৩২.৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হবার কথা থাকলেও কোন বৃষ্টি হয়নি।

লাগাতার অনাবৃষ্টি ও সীমান্তের ওপারে অভিন্ন নদ-নদীর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের ফলে গত ডিসেম্বরের পর থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীতে সাগরের নোনা পানি উঠে আসতে শুরু করে। ইতোমধ্যে লবণাক্ততার মাত্রা ১ হাজার পিপিএম অতিক্রম করেছে। মার্চ থেকে পরিস্থিতি আরো জটিল হতে শুরু করে। বঙ্গোপসাগর থেকে ১১০ কিলোমিটার উজানে বরিশালের কির্তনখোলায় লবণাক্ততার মাত্রা ১ হাজার ২শ’ পিপিএম অতিক্রম করেছে বলে দায়িত্বশীল সূত্র জানা গেছে। ইতোমধ্যে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম বিষয়টি নিয়ে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণেরও নির্দেশ দিয়েছেন। সে আলোকে মন্ত্রীর কাছে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদনও দাখিল করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

অত্যাধিক তাপপ্রবাহ মাঠে থাকা রবি ফসলের জন্য ক্রমাগত হুমকি সৃষ্টি করছে। ইতোমধ্যে বরিশালের তাপমাত্রা সর্বকালের রেকর্ড ছাপিয়ে ৩৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছে। অথচ আবহাওয়া বিভাগের হিসেবে এপ্রিল মাসে বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকার কথা ৩৩.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মার্চে বরিশালে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩২.২ ডিগ্রি থাকার কথা। কিন্তু গত ২২ মার্চ বরিশালে তাপমাত্রা ছিল ৩৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কয়েক দফার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিগত ‘খরিপ-২’ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে আমনের উৎপাদন প্রায় দেড় লাখ টন হ্রাস পায়। সে বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে প্রায় ৭ লাখ ২ হাজার ১৭৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধান, গম, ভুট্টা, গোল আলু, সয়াবিন, বিভিন্ন ধরনের তেল ফসল, মসলা ও ডাল ফসলের আবাদ হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পানি

২৫ অক্টোবর, ২০২২
২১ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ