বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
রাজধানীর গুলশানের একটি অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়া নামের এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরে এ ঘটনায় মৃত তরুণীর বোন আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মঙ্গলবার ভোররাতে একটি মামলা করেন।
বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়েছে তোলপাড়। সোশ্যাল মিডিয়ার আলোচনার এখন মুখ্য বিষয় তরুণী মৃত্যু ও আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা।
সাংবাদিক ও গবেষক মেহেদী হাসান পলাশ লিখেন, ‘কলেজ পড়ুয়া একটা মেয়ে, কত বয়স হতে পারে তার? বড়জোর ১৮, সার্টিফিকেটে হয়তো আরো কম। বাংলাদেশের চলমান বাস্তবতায়, এই মেয়ের সাথে যে কারোর, এমনকি কোন শিল্পপতি বা শিল্পপতি পুত্রের প্রেম থাকতেই পারে। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মেয়েটির রিলেশন এর বয়স দুই বছর কমপক্ষে। এই দুই বছরের বেশিরভাগ সময় মেয়েটি তার প্রেমিকের ভাড়া করা বনানী-গুলশানের ফ্ল্যাটে থেকেছে যার ভাড়া কমবেশি এক লক্ষ টাকা। বিনিময়ে মেয়েটির শিল্পপতি বন্ধু মাঝেমধ্যে ওই ফ্ল্যাটে যেত এবং মেয়েটির সাথে একান্ত সময় কাটাতো। মেয়ের বোনের লিখিত অভিযোগ অনুযায়ী ২০১৯ সাল থেকে তারা বনানীর একটি ফ্ল্যাটে স্বামী-স্ত্রীর মতো বসবাস করে আসছিল। এটা কে কি প্রেম বলা যায়? নাকি ভ্রষ্ট সমাজের নষ্ট কামনার অনিয়ন্ত্রিত স্খলন? সামন্তযুগে যা ছিল কোঠা, বুর্জোয়া যুগে তার নাম হয়েছে ফ্ল্যাট, রিসোর্ট, গার্ডেন হাউস। পূঁজি যে সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করে সে সমাজের সবকিছুই পণ্য। এমনকি ভালোবাসার মতো আবেগ, প্রকৃতির দেয়া সৌন্দর্য এর বাইরে নয়। এই পূঁজি নারীর সৌন্দর্য কে মঞ্চে দাঁড় করিয়ে দেয়। একে একে খুলে নেয় আব্রু, ফিতে দিয়ে মেপে নেয় দেহের বাঁক। এরপর পুঁজিহীন রা অন স্ক্রিনে উপভোগ করে, আর পুঁজিপতিরা অফস্ক্রিন ভোগ করে। সামাজিকীকরণের অংশ হিসেবে পুঁজিবাদ এর অনেক ঠাট বহরী নাম দিয়েছে। সেগুলো উচ্চারণ করলে অনেকে আবার রৈ রৈ করবেন। আমাদের সমাজে এই মুনিয়া একমাত্র নয়, এই শিল্পপতি পুত্রও একমাত্র নয়। এরকম আরো অসংখ্য মুনিয়া, অসংখ্য শিল্পপতি বা শিল্পপতি পুত্র রয়েছে। একা আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলেকে উদাহরণ হিসেবে নাইবা টানলাম। শুধু শিল্পপতি বা শিল্পপতি পুত্র নয়, অবৈধভাবে অর্থে দম্ভিত অনেক রাজনীতিবিদ ব্যুরোক্র্যাট ও তাদের ঐশীর মত অসংখ্য সন্তান রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন পেশায় যারা অবৈধ পুঁজির পাহাড় গড়েছেন, তাদের অধিকাংশের মুখোশের আড়ালে থাকা মুখগুলো এই সারিতে। এমনকি এই লেখা যখন লিখছি, তখন এই সমাজের কোথাও কোন মুনিয়া হয়তো কোন নষ্ট পূঁজির ভ্রষ্ট কামনায় দলিত হচ্ছে। কিম্বা কোন মুনিয়া তার সীমাহীন লিপ্সা ও নিয়ন্ত্রণহীন স্বপ্নের কাছে মেলে দিয়েছে সৌন্দর্যের পাপড়ি। কিন্তু মানুষ সসীম। তাই তার সীমাহীন লিপ্সা ও স্বপ্ন একসময় সীমানার প্রাচীরে গুতো খেয়ে আছড়ে পড়ে বাস্তবতার জমিনে। অলীক ও বাস্তবতার দ্বন্দ্বের পরিণতিতে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলে থাকে, ছাদ কার্নিশ থেকে লাফিয়ে পড়ে, কিংবা বিষে বিষে নীল- নিথর হয়ে যায় মুনিয়াদের দেহ। আর পূঁজি হল, রঙিন প্রজাপতির মতো। এক ফুল শুকিয়ে গেলে ডানা মেলে উড়ে যায় অন্য ফুলে। মুনিয়া সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ তরুণী, ঢাকা শহরের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে একা থাকত দীর্ঘদিন— এ খবর অভিভাবকদের অজানা থাকার কোনো কারণ নেই। ২০১৯ সাল থেকে বনানীর ফ্ল্যাটে স্বামী-স্ত্রীর মতো তারা যখন বসবাস করছিল তখন মেয়েটি দশম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল বা এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। এই বয়সের একটি মেয়ে পরিবারের অজান্তে বা অজ্ঞাতে এত দীর্ঘ দিন কারো সাথে লিভ টুগেদার চালিয়ে যেতে পারে না। অর্থ বা পূঁজি সর্বগ্রাসী এবং এর ক্ষমতাও সীমাহীন। হয়তো এই পুঁজি মুনিয়ার অভিভাবকদেরকেও নিয়ন্ত্রণ করেছিল। কোন অলীক স্বপ্নে তারাও আদরের প্রিয় মেয়েটিকে পুঁজির হাতে সমর্থন করে দিয়েছিল। তাই আজ প্রিয় মেয়েটির নিথর দেহ নেয়ার জন্য কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসতে হয়েছে। এ ধরনের মুনিয়াদের সবার পরিণতি দিনশেষে কমবেশি একই। এই লেখা আমাদের সমাজে মিশে থাকা সেইসব মুনিয়াদের অভিভাবকের জন্য। কসমোপলিটন স্বপ্নে অপরিণত বুদ্ধির মুনিয়ারা হয়তো ভুল করতে পারে, কিন্তু সেই ভুলে আপনারা বিভোর হোক হবেন না, যদি না আদরের মুনিয়াদের নিথর দেহ দেখতে না চান।’
চলচ্চিত্র নির্মাতা রফিক সিকদার লিখেন, ‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু- এই অমোঘ সত্যকে বিশ্বাস না করা সুন্দরী মেয়েরা খুব সহজেই নষ্টদের দখলে চলে যায়।’
নীরা হক লিখেন, ‘সব সত্য উদঘাটন করা দরকার। কোনো মেয়ের জীবন ভবিষ্যতে যেন এভাবে না চলে যায়।’
নীল নির্ঝর মনে করেন, ‘যত-ই প্রভাবশালী হোক না কেন, এই মৃত্যুর জন্য যে বা যারা দায়ি; তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া দরকার।’
উদ্বেগ প্রকাশ করে শেখ আকতার আলী লিখেন, ‘পশ্চিমা সংস্কৃতি আমরা যত বেশি অনুসরণ করব, আমাদের পরিবার সমাজ ততবেশি ভেঙ্গে পড়বে। এমন একজন প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে কিভাবে একা একা একটি ফ্ল্যাটে থাকতে পারে? কেউ আবার বইলেন না যে, এটা তার অধিকার! অধিকার অধিকার করতে গিয়েই আমাদের মুসলিম সমাজ আজ ধ্বংসের অতল গহবরে!’
কামাল হোসাইন ভুঁইয়া লিখেন, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন..... তবে ওর পরিবারের উচিত হয়নি, এভাবে একা থাকতে দেওয়াটা।’
রেজওয়ান খান চুন্নু লিখেন, ‘মেয়েটি কলেজ ছাত্রী, গুলশানের মত যায়গায় ফ্ল্যাটে থাকতো, একা থাকতো, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একবছর ধরে বন্ধ, এখন রমজান মাসে ঢাকায় থাকার কারণ কি? অনেকগুলো প্রশ্ন এবং ধোঁয়াশা।’
আক্ষেপ জানিয়ে সাইফুল ইসলাম লিখেন, ‘টাকা ওয়ালাদের আমোদ-ফুর্তির অংশ হিসেবে এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে অনেক জীবন! যেহেতু অভিযুক্ত প্রভাবশালী, তাই হয়তো কিছুই হবে না তার!’
প্রগতিশীল ও নারীবাদীদের এই বিষয়টি নিয়ে চুপ থাকা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলে নেটিজেনরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।