Inqilab Logo

শনিবার, ০৮ জুন ২০২৪, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়ার ভয়াবহ প্রকোপ : আক্রান্ত ৩২ হাজারেরও বেশি

নাছিম উল আলম : | প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০০ এএম

দক্ষিণাঞ্চলে করোনাভাইরাসের মধ্যেই মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ হিসেবে ডায়রিয়ার প্রকোপ ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। চিকিৎসক ও জনবলের মারাত্মক সঙ্কট নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ চিকিৎসা প্রদান করতে পারছে না। সরকারি হিসেবে গত ৩ মাসে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ৩২ হাজার অতিক্রম করেছে। মারা গেছেন ৮ জন। এ সংখ্যাটা শুধুমাত্র সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ডায়রিয়া রোগীদের। প্রকৃতপক্ষে আক্রান্তের সংখ্যাটা অনেক বেশি। বরিশাল মহানগরী ও আশপাশের এলাকায়ও ডায়রিয়া পরিস্থিতির ক্রমাবনতি অব্যাহত রয়েছে। অথচ এ বিভাগীয় সদরের দুুটি হাসপাতালেই চিকিৎসা ব্যবস্থা যথেষ্ট অপ্রতুল।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুধুমাত্র ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বয়স্কদের ভর্তি তো দূরের কথা কোন ধরনের পরামর্শও প্রদান করা হচ্ছে না। মাস কয়েক আগে এ হাসপাতালটি থেকে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে সদর হাসপাতালে যাবার পথে এক রোগীর মৃত্যুও হয়েছে। আর জেনারেল হাসপাতালটিতে মাত্র ৪টি শয্যা রয়েছে ডায়রিয়া রোগীদের জন্য। গত মঙ্গলবার সেখানে ডায়রিয়া রোগী ছিল ৪৬ জন। গত রোববারে সংখ্যাটা ছিল ৬০ এর ঊর্ধ্বে। ফলে ইতোমধ্যে হাসপাতাল প্রাঙ্গনে তাবু খাটিয়ে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার ৪২টি উপজেলার ১৮টি ইতোমধ্যে ডায়রিয়া উপদ্রæত। ইতোমধ্যে বরিশালে ৪, পটুয়াখালীতে ২ ও বরগুনাতেও আরো ২ জন ডায়রিয়া রোগী মারা গেছেন। গতকাল দুপুরের পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় পটুয়াখালী সদরের শংকরপাশা গ্রামের ৬০ বছর বয়স্ক পিয়ারা বেগম ও বাউফলের কেশবপুরের খাদিজার মৃত্যু হয়েছে। ইতোপূর্বে বরিশালের বাকেরগঞ্জেই ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বরগুনায় মারা গেছেন আরো দুজন। গত ২৪ ঘণ্টাই দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় ১ হাজার ৫১২ জন ডায়রিয়া আক্রান্তের খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এর মধ্যে ভোলাতেই সর্বোচ্চ ৩২৫ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছে। এরপরে পটুয়াখালীতে ৩২১, বরগুনায় ২৫৬, বরিশালে ২৪৭, ঝালকাঠিতে ২৩৯ ও পিরোজপুরে ১২৪ জন ডায়রিয়া আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। গত এক সপ্তাহেই এ অঞ্চলে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ২০ জন। আর একমাসে আক্রান্তের সংখ্যাটা ১৭ হাজার ৬৭২। স্বাস্থ্য বিভাগের নির্ভরযোগ্য সূত্রের মতে, গত ফেব্রæয়ারি থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের কিছু কিছু এলাকায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ফেব্রæয়ারির শেষ দিকে এ রোগের ব্যাপক বিস্তার ঘটতে শুরু করে। ইতোপূর্বে বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা ও বরগুনার অবস্থা অপেক্ষাকৃত খারাপ থাকলেও এখন সবগুলো জেলার অবস্থাই খারাপ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৪০৬টি মেডিকেল টিম কাজ করছে বলে জানানো হলেও এসব টিমের কোনটিতেই চিকিৎসক নেই।
স্বাস্থ্য বিভাগের মতে, একজন চিকিৎসকের তত্ত¡াবধানে দু-তিনটি মেডিকেল টিম কাজ করছে। এছাড়া প্রতিটি টিমে একজন করে কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ‘সেকমো’ বা পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা কাজ করছেন। পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইনসহ আইভি ফ্লুইডের সরবরাহ রয়েছে বলেও দাবি স্বাস্থ্য বিভাগের। তবে খোলা বাজারে স্যালাইন সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে ইতোমধ্যে।
দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার মধ্যে গতকাল দুপুর পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি দ্বীপ জেলা ভোলাতে, ৮ হাজার ৯০ বলে সরকারিভাবে জানানো হয়েছে। পটুয়াখালীতেও ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া বরগুনাতে ৪ হাজার ৮৪৯, বরিশালে ৪ হাজার ৩৬৯, পিরোজপুরে ৪ হাজার দু’জন ও ঝালকাঠিতেও সাড়ে ৩ হাজারের বেশি ডায়রিয়া আক্রান্ত বলে জানা গেছে। গতবছরও একই সময়ে বরগুনায় প্রায় ৫ হাজার মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত ও অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভাগীয় পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার সাহা জানান, দুঃসহ গরমে খাবার-দাবারে অসতর্কতার জন্য মৌসুমের এসময় ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের পেটের পীড়া দেখা দেয়। তবে এবার সংখ্যাটা যথেষ্ট বেশি। তিনি পানিসহ সব ধরনের খাবারের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বনের তাগিদ দেন। পেটের পীড়া দেখা দিলে চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হবারও পরামর্শ দেন তিনি। হাসপাতালগুলোতে সব ধরনের চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ