পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হকের ৭দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবদাস চন্দ্র অধিকারী শুনানি শেষে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন মঞ্জুর করেন। এর আগে সকালে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে পুলিশ। মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে নতুন ও পুরোনো মিলিয়ে অন্তত ১৮টি মামলা রয়েছে। গত রোববার মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা থেকে মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাকে তেজগাঁও বিভাগের ডিসি কার্যালয়ে নেয়া হয়। সেখান থেকে প্রথমে তাকে মোহাম্মদপুর থানা ও পরে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। গত কয়েকদিনে মামুনুল হক ছাড়াও হেফাজতে ইসলামের আরো বেশ কয়েকজন শীর্ষ স্থানীয় নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মাওলানা মামুনুল হককে বেলা ১১টা ১০ মিনিটে তাকে আদালতে নেয়া হয়। পরে তাকে আদালতের হাজত খানায় রাখা হয়েছে। এজন্য আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে পুলিশ। সরেজমিনে দেখা গেছে, রায়সাহেব বাজার মোড় থেকে আদালত পুরো এলাকায় ছিল পুলিশ। বিশেষ কোনও প্রয়োজন ছাড়া লোকজনকে কোর্ট এলাকায় যেতে দেয়া হয়নি।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার বেলা ১১টা ১০ মিনিটের দিকে তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় ২০২০ সালের মোহাম্মদপুর থানার একটি ভাঙচুর ও নাশকতার মামলায় তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার এসআই সাজেদুল হক।
রিমান্ড আবেদনে এসআই সাজেদুল বলেন, ২০২০ সালের ৬ মার্চ রাত সাড়ে ৮টার দিকে সাত মসজিদ এলাকায় সাত গম্বুজ মসজিদে আমল করাকালীন আসামি মামুনুল হক ও তার ভাই মোহতামিম মাহফুজুল হকের নির্দেশে জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসার ছাত্র আসামি ওমর ও ওসমান এসে মামলার বাদী জিএম আলমগীর শাহীনসহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের আমল করতে নিষেধ করে, তাদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করে ও মসজিদ থেকে বের হয়ে যেতে বলে। এরপর রাত ৮টা ৪০ মিনিটে আসামি ওমর, ওসমান, শহিদ, আনিস, জহির মসজিদের ভেতরে এসে বাদীর সঙ্গে থাকা অন্যদের এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকে। বাদী তাদের রক্ষা করতে গেলে, আসামি জহির তাকে মারধর করে। এরপর আসামি মামুনুল হক ও তার ভাই মোহতামিম মাহফুজুল হকের নির্দেশে মাদরাসার ৭০-৮০ জন ছাত্র বাদীকে মারধর করে। এতে বাদী গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। এ সময় তার কাছ থেকে একটি স্যামসাং এ-৫০ মোবাইল, সাত হাজার টাকা ও ২০০ ডলার টাকা নিয়ে যায় আসামিরা।
রিমান্ড শুনানিতে বিচারক মামুনুলকে বলেন, আপনার কি কিছু বলার আছে? উত্তরে মামুনুল বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি প্রতি রমজান মাসে ছয় বার কোরআন শরীফ খতম দেই। রমজান মাস পবিত্র মাস। এই মাসে আমি যেন রোজা, নামাজ ও কোরআন পড়তে পারি তার সুযোগ করে দেয়ার জন্য আবেদন করছি।
মামুনুলের রিমান্ড শুনানি নিয়ে আইনজীবীরা যা বললেন
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু, সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর আজাদ রহমান, হেমায়েত উদ্দিন খানসহ কয়েকজন সাত দিনেরই রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন।
শুনানিতে তারা বলেন, গত বছরের ৬ মার্চ রাত সাড়ে ৮টার দিকে মোহাম্মদপুরের একটি মসজিদে আমল করাকালীন সময়ে মামুনুল হক এবং তার ভাই মোহতামিম মাহফুজুল হকের নির্দেশে এ মামলার বাদী জি এম আলমগীর শাহিনসহ অন্যদের আমলে বাধা দেন। বাদীসহ অন্যদের মারধর করে মসজিদ থেকে বের করে দেন। বাদীর পকেট থেকে মোবাইল, টাকা নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মামুনুল হক এবং তার ভাইসহ অন্যান্যরা জড়িত। তারা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে। এ অবস্থায় পুলিশ মামুনুল হকের ৭দিনের রিমান্ড আবেদন করে। আমরা বলেছি, যেহেতু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে, বাদীকে মারধর করাসহ টাকা নিয়ে যাওয়া হয়েছে, আরও কারা কারা সম্পৃক্ত আছে, পলাতক আসামিদের গ্রেফতারসহ জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন। এজন্য তার সাত দিনেরই রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি। আদালত সন্তুষ্ট হয়ে সাত দিনেরই রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। জামিন নামঞ্জুর হয়েছে।
তারা আরো বলেন, আসামিরা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে। আমি মসজিদে ঢুকতে পারবো না, এটা তো হতে পারে না। ঘটনার সাথে মামুনুল হকসহ আরও অনেকে জড়িত। মামলাটি তদন্ত পর্যায়ে আছে। গত বছরের ৬ মার্চ মামলা দায়ের করা হয়। মামুনুল হক পলাতক ছিলেন। তিনি আদালতে হাজির হননি। আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা ছিল না তার। আজ তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করা হয়েছে। আদালত তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
আসামির পক্ষে সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাসহ কয়েকজন আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, মোহাম্মদপুর থানার একটি মামলায় মামুনুল হকের সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছিল। রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ ছিল, তিনি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছেন। কারণ এ মামলায় কোনো এক ব্যক্তিকে নাকি মামুনুল হকের নির্দেশে মারধর করে মসজিদ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। আমাদের কথা হচ্ছে, মামুনুল হক কি নির্দেশ দিয়েছেন, কখন নির্দেশ দিয়েছেন সে সম্পর্কে কোনো বক্তব্য রিমান্ড আবেদনে নেই। গত এক বছর আগের মামলা। মামুনুল হক বাংলাদেশের সর্বত্র বিরাজমান, দেখা গেছে তাকে। এক বছর আগে তাকে গ্রেফতার করেননি কেন? রোববার গ্রেফতারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু সেই জিজ্ঞাসাবাদের কোনো রিপোর্ট সেখানে ছিলো না। আসলে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত নয়, মামুনুল হককে জব্দ করতে সুপরিকল্পিতভাবে মামলাটা করা হয়েছে। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সাত দিনের রিমান্ড দেয়া হয়েছে। মামুনুল হককে যে রিমান্ড দেয়া হয়েছে তা অযৌক্তিক, একতরফাভাবে তাকে রিমান্ড দেয়া হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।