কোরবানির আসল মানে
মুস্তাফা জামান আব্বাসীগরুর যে অংশটি গরিবের প্রাপ্য তার ডিস্ট্রিবিউশন সম্পর্কে। এ নিয়ে কেউ ভাবিনি। এ
মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীরপ্রতীক
পবিত্র কোরআনের সূরা আনআম (৬ নম্বর সূরা) এর সর্বশেষ ৬টি আয়াত যথা আয়াত নম্বর ১৬০ থেকে ১৬৫-এর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত (২০০৪ সালের ঊনত্রিশতম মুদ্রণ) অনুবাদ থেকে উদ্বৃত করা বাংলা অর্থ হল, (১৬০) কেহ কোনো সৎকার্য করিলে সে তাহার দশ গুণ পাইবে এবং কেহ কোনো অসৎ কার্য করিলে তাহাকে শুধু উহারই প্রতিফল দেয়া হইবে, আর তাহাদের প্রতি জুলুম করা হইবে না। (১৬১) বল, “আমার প্রতিপালক তো আমাকে সৎপথে পরিচালিত করিয়াছেন। উহাই সুপ্রতিষ্ঠিত দীন, ইবরাহিমের ধর্মাদর্শ, সে ছিল একনিষ্ঠ এবং সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না”। (১৬২) বল, “আমার সালাত, আমার ইবাদত, আমার জীবন ও আমার মরণ জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে”। (১৬৩) “তাঁহার কোনো শরীক নাই এবং আমি ইহারই জন্য আদিষ্ট হইয়াছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম”। (১৬৪) বল, “আমি কি আল্লাহকে ছাড়িয়া অন্য প্রতিপালককে খুঁজিব? অথচ তিনিই সব কিছুর প্রতিপালক”। প্রত্যেকে স্বীয় কৃতকর্মের জন্য দায়ী এবং কেহ অন্য কাহারও ভার গ্রহণ করিবে না। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন তোমাদের প্রতিপালকের নিকটেই, তৎপর যে বিষয়ে তোমরা মতভেদ করিতে তাহা তিনি তোমাদিগকে অবহিত করিবেন। (১৬৫) তিনিই তোমাদিগকে দুনিয়ার প্রতিনিধি করিয়াছেন এবং যাহা তিনি তোমাদিগকে দিয়েছেন সে সম্বন্ধে পরীক্ষার উদ্দেশ্যে তোমাদের কতককে কতকের উপর মর্যাদায় উন্নীত করিয়াছেন। তোমার প্রতিপালন তো শাস্তি প্রদানে দ্রুত আর তিনি অবশ্যই ক্ষমাশীল, দয়াময়। (অনুবাদ শেষ)।
পবিত্র কোরআনের উদ্বৃতি দিয়েই কোনো কলাম শুরু করা আমার জন্য ব্যতিক্রম। কিন্তু শুরু করলাম এজন্য যে, এই কলামটি পাঠকের সামনে যখন যাবে তখন পবিত্র ঈদ-উল-আযহা মাত্র সামান্য দূরে মাত্র। পবিত্র ঈদ-উল-আযহা প্রসঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করার নিমিত্তেই পবিত্র কোরআনের ১৬২ নম্বর আয়াতটি আমি উদ্বৃত করতে মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে লেখা শুরু করলাম, কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম যে, এর আগে-পরে দু’একটি আয়াতসহ যদি আলোচনাটা করি তাহলে আলোচনাটি সম্ভবত ফলপ্রসূ হতে পারে। যে কোনো আলোচনায় পাঠককূলের সামনে ফলপ্রসূ হবে কি হবে না সেটাও নির্ভর করে মহান আল্লাহ তায়ালার দয়া ও অনুমোদনের ওপর। পবিত্র কোরবানি উপলক্ষ্যে আমিও সম্মানিত পাঠকের সাথে মত বিনিময় করছি, ইবাদতের নিয়তে মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে।
হযরত ইবরাহিম (আ.) কে মহান আল্লাহ তায়ালা হুকুম দিচ্ছেন বলার জন্য অথবা শিখিয়ে দিচ্ছেন বলার জন্য কয়েকটি কথা। প্রথম কথা হচ্ছে, আমার প্রতিপালক আমাকে সৎপথে পরিচালিত করেছেন এবং যেই পথটিতে পরিচালিত করেছেন সেটাই সুপ্রতিষ্ঠিত দীন। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, আল্লাহই হচ্ছেন সবকিছুর প্রতিপালক, অতএব, সেই আল্লাহকে ছেড়ে অন্য প্রতিপালক সন্ধান করা কি একটি অবান্তর বিষয় নয়? তৃতীয় কথা হচ্ছে, আমার প্রতিপালকের কোনো শরীক নেই এবং এই কথাটি প্রচার করার জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি এবং এই প্রচারের দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার সুবাদেই আমি প্রথম মুসলিম। চতুর্থ কথা, আমার সালাত বা নামাজ, আমার ইবাদত তথা কোরবানি ও হজ, সার্বিকভাবেই আমার জীবন ও আমার মৃত্যু সবকিছুই মহান প্রতিপালক আল্লাহর উদ্দেশ্যে। পঞ্চম কথা, মহান আল্লাহ তায়ালাই পৃথিবীতে মানুষকে তার প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়েছেন, মানুষকে অনেক সম্পদ ও দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন এবং সেই সম্পদ ও দায়িত্ব, কে কী নিয়মে ব্যবহার করে সেটি মূল্যায়ন বা পর্যালোচনার জন্য কিছু বান্দাকে অন্য বান্দাদের উপরে মর্যাদা দিয়েছেন তথা কাউকে নেতা ও দায়িত্বশীল বানিয়েছেন, কাউকে সম্পদশালী বানিয়েছেন। অপরপক্ষে অন্যদেরকে অনুসারী ও দায়িত্বশীল বানিয়েছেন এবং তুলনায় কম সম্পদশালী বানিয়েছেন। ষষ্ঠ কথা, মহান প্রতিপালক যুগপৎ দ্রুত শাস্তি প্রদান করেন আবার অবশ্যই দয়া প্রদর্শনকরত অপরাধ ক্ষমাও করে দেন। সপ্তম কথা, প্রত্যেক বান্দা নিজের কৃতকর্মের জন্য দায়ী হবে এবং কেউ অন্য কারো ভাগ গ্রহণ করবে না। অষ্টম কথা, কেউ যদি সৎকাজ করে, তাহলে সে দশ গুণ পুরস্কার পাবে কিন্তু কেউ যদি অসৎ কাজ করে তাহলে সে শুধুমাত্র সমান বিনিময়ের প্রতিফল পাবে।
আসলে কোরবানিকে বৃহত্তর আঙ্গিকে বিবেচনা করার জন্য জ্ঞানী-গুণী মনীষী ব্যক্তিগণ যুগে যুগে মানুষকে তাগাদা দিয়ে এসেছেন। তাগাদা না দিলে অবস্থা আরও ভয়ংকর হতো; তাগাদা দেয়ার কারণে অবস্থা হয়তো এখন যা দেখছি সেই স্তরে আছে। আমরা কোরবানি দিচ্ছি একটি পশুকে যথা উট বা গরু বা ছাগল বা ভেড়া ইত্যাদি। অপরপক্ষে আমরা নিজেরাও তো একটি পশু। আমরা লেখাপড়া শুরু করার সময় পড়েছিলাম ইংরেজিতে “ম্যান ইজ এ রেশনাল এনিম্যাল” তথা মানুষ বিবেকসম্পন্ন বা বিবেচনাবোধ সম্পন্ন জন্তু। তাহলে প্রথমেই মেনে নিতে হবে যে, আমরা পশু; পরে যোগ দিতে হবে যে আমাদের মধ্যে বিবেক বা বিবেচনাবোধ আছে। বর্তমান সামাজিক কাঠামো এবং মানুষের কর্মকা-ের প্রবণতা দেখে আমার মূল্যায়ন হচ্ছে যে, মানুষের মনের ভেতর অবস্থানকারী আদি-পশুত্ব, বিবেক বা বিবেচনাবোধের ওপরে প্রাধান্য পায়। তাই ঈদ-উল-আযহার দিনে একটা মানসিক কর্ম বা সরেজমিন কর্ম হল টাকা খরচ করে, গরু বা ছাগল কিনে কোরবানি দেয়া তথা ত্যাগ স্বীকার করা এবং অন্য যে কর্মটি সম্পাদন করা উচিত সেটা হল, নিজেদের মনের ভেতরের পশুত্বকে চিহ্নিত করা বা আবিষ্কার করা এবং সেই পশুত্বকে দমন করা। এই প্রক্রিয়া যদি অনুসরণ করা হয়, তাহলে আমার মনে ভেতরে ত্যাগ স্বীকার করার প্রবণতাকে সুদীপ্ত ও প্রখর করতে পারবো বলে বিশ্বাস করি। আমার মূল্যায়নে বর্তমান সমাজে খুব কম লোকই এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেন, অতএব ত্যাগ স্বীকারে অধিকতর আগ্রহী হন। অন্য একটি কথা হল, প্রক্রিয়া অনুসরণ না করার ফলে হয়তো বা নিজের পশুত্বকে তো দমন করতে পারলামই না, ত্যাগ স্বীকারের মনোভাবকে প্রখর করতে পারলামই না বরং একটা উল্টো কাজ করলাম। সেই উল্টো কাজটি হল, আমি অনেক লোককে দেখাতে চাইলাম আমার কত টাকা আছে, আমি কত বড় গরু কোরবানি দিচ্ছি তোমরা দেখ!!! অর্থাৎ লোক দেখানো কোরবানি এবং অহংকারে বিদ্ধ হলাম।
একটি সামাজিক উদাহরণ দেই। দু’তিন বছর আগে একদিন ঢাকা মহানগরের মোহাম্মদপুর এলাকায় ২৪/১১ তাজমহল রোড, ব্লক-সি-তে অবস্থিত ভিশন ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড এর অফিসে মেহমান হিসেবে উপস্থিত ছিলাম। প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এর সভাপতি রাকিবুর রহমান। আয়োজক কোম্পানীর উদ্দেশ্য ছিল শুভাকাক্সক্ষীদের মধ্যে শেয়ার মার্কেট সম্বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। অতিমহৎ উদ্যোগ এবং সুন্দরভাবে আয়োজিত ফাংশন ছিল। সুন্দর আলোচনা হয়েছিল। সেখানে অবশ্যম্ভাবীভাবেই দেড় দুই বছর আগে বাংলাদেশের শেয়ার কেলেংকারীর কথা আলোচনায় উঠে আসে। আমিই তুলে আনি। যারা সেই শেয়ার কেলেংকারীর সঙ্গে জড়িত, অর্থাৎ যারা সাধারণ মানুষকে কৌশলে ঠকিয়ে হাজার কোটি টাকা কামিয়েছেন, তারা এখন ত্যাগ স্বীকার করবেন অনেক বড় বড় কোরবানি জবাই দিয়ে। এখানে প্রশ্ন করার বিষয় আছে। সেই কেলেংকারীর নায়ক বা মহানায়কগণ মানবতার বিরুদ্ধে লুণ্ঠনের অভিযোগে অভিযুক্ত। তাদের কোরবানি যদি ঐ টাকা থেকে হয়, তাহলে সেই ত্যাগ বা ইবাদতের ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন করা যেতেই পারে। আমরা বান্দারা ঐরূপ প্রশ্ন করার সুযোগ হয়তো কম, কিন্তু মহান সৃষ্টিকর্তা করতেই পারেন।
কোনো একটি প্রয়োজনে আমার আয়ত্তে থাকা পুরানো ম্যাগাজিন ঘাঁটছিলাম; ঘাঁটতে ঘাঁটতে, বিশ্ববিখ্যাত আন্তর্জাতিক সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘দি ইকোনোমিস্ট’ এর ২০১২ সালের অক্টোবর ১৩-১৯ সংখ্যার মুদ্রিত কপিটি চোখে পড়লো। কাভার স্টোরি বা প্রচ্ছদের শিরোনাম এবং ভেতরে ১৩-১৪ পৃষ্ঠার স্টোরিটি হচ্ছে “ট্রু প্রোগ্রেসিভিজম: দি নিউ পলিটিক্স অফ ক্যাপিটালিজম এন্ড ইন ইকুয়ালিটি”। যেটি আমরা প্রায়শ নিজে নিজেই অনুভব করি, এই কাভার স্টোরিতে সেটাই আলোচনা করা হয়েছে। দেশে দেশে অর্থনৈতিক অগ্রগতির তারতম্য যেমন কমানো প্রয়োজন, তেমনই দেশের অভ্যন্তরে মানুষে মানুষেও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির তারতম্য কমানো প্রয়োজন। তবে, বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ তাদের দেশের ভেতরে তারতম্য কমানোয় যতটুকু ব্যস্ত বা যতটুকু আগ্রহী, সকল দেশের নেতৃবৃন্দ সমষ্টিগতভাবে, এক দেশের সঙ্গে অপর দেশের তারতম্য কমানোয় ততটুকু ব্যস্ত বা আগ্রহী নন। আরও একটি গুরুত্ব¡পূর্ণ বক্তব্য হচ্ছে, দেশের অভ্যন্তরে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষে মানুষে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বা সম্পদের তারতম্য কমাতে গিয়ে, ঐ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেখানে মানুষকে আইনের মাধ্যমে বাধ্য করা হয় ত্যাগ স্বীকার করতে, সেখানে মানুষ আইনকে ফাঁকি দিতে চেষ্টা করবেই করবে। কারণ, আইনেই ফাঁকি দেয়ার রাস্তা থাকে। অপরপক্ষে, যেখানে মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্যের কারণে বা মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভালোবাসার কারণে বা সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসার কারণে ত্যাগ স্বীকারের প্রেরণা সৃষ্টি হয়, সেখানে ত্যাগ স্বীকারগুলো বস্তুনিষ্ঠ হয়। আমাদেরকে আল্লাহতায়ালার হুকুম পালনের জন্য প্রথমে নিজের মনকে প্রস্তুত করতে হবে। এই পৃথিবীর বহুবিধ আকর্ষণ আমাদেরকে প্রলোভিত করে মহান আল্লাহ তায়ালা হুকুম না মানতে। তাই আমাদের প্রথম লক্ষ্যবস্তু আমাদের চিন্তার জগত।
উপরের অনুচ্ছেদে দি ইকোনোমিস্ট এর যে স্টোরির কথা বললাম, সেই স্টোরিতেও বলা আছে রিফর্ম বা সংস্কারের কথা। আমাদের দেশেও আইনের সংস্কার যেমন প্রয়োজন; এটা যেমন বাস্তবতা তার থেকেও বড় বাস্তবতা হল, আমাদের মনে এবং চিন্তার জগতে সংস্কার প্রয়োজন। আমাদের দেশে এক ধরনের লেখক, বুদ্ধিজীবী, চিন্তাশীল ব্যক্তি এটা প্রচার করেন যে, উন্নয়নশীল দেশে পুঁজি সংকলনে বা গঠনে (ইংরেজিতে ক্যাপিটাল ফরমেশন) দুর্নীতি ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। আমার মূল্যায়নটি দুটি ভিন্নধর্মী উদাহরণের মাধ্যমে উপস্থাপন করছি। বিদেশ থেকে বিমান বন্দরের মাধ্যমে স্মাগলিং করে মালপত্র এনে অর্থাৎ সরকারকে খাজনা না দিয়ে কম দামে মালপত্র এনে, সেই মালপত্র বেশি দামে বিক্রি করে বিক্রেতা দ্রুত কিছু পুঁজি গঠন করতে পারে। এতে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হয় তথা দেশের কোষাগার উপার্জন থেকে বঞ্চিত হয়। এটা আমার মতে ছোট অপরাধ। অপরপক্ষে সোনালী ব্যাংক (উদাহরণস্বরূপ মাত্র) থেকে ভুয়া পদ্ধতিতে বা প্রতারণার পদ্ধতিতে হাজার হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়ে যাওয়া এবং সেই টাকাকে পুঁজি বানিয়ে শিল্প স্থাপন করা অনেক অনেক বড় অপরাধ। আমার ব্যক্তিগত মূল্যায়নে আমি তফাতটি ব্যাখ্যা করছি। স্মাগলার যদি বিমান বন্দর দিয়ে মালটি না আনতো, তাহলেও তো সরকার খাজনা পেতো না এবং মালটি আনার জন্য সরকার হয়তো জনসাধারণকে বড় কোনো সুযোগ দিচ্ছে না। অথবা সুযোগ দিলেও কেউ নিচ্ছে কেউ নিচ্ছে না। এখানে সরকার খাজনা বঞ্চিত হয়, তথা দেশ পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়; যুগপৎ দেশের বাজারে মাল পাওয়া যায় এটা ইতিবাচক। সোনালী ব্যাংকের ঘটনায় যেই টাকার মালিক দেশের লাখ লাখ জনগণ, বা যেই টাকার উপর কয়েকশত বা দু’এক হাজার ব্যক্তি লোন নেবার জন্য হকদার, সেই টাকা একজন ব্যক্তি নিয়ে চলে গেলেন এটা সেই হকদার ব্যক্তিদেরকে বঞ্চিত করার অপরাধ।
বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, সাধারণত ভদ্র লোকের চুরি ডাকাতিকে প্রশ্রয় দেয়া হয়। কারণ, ভদ্র চোর-ডাকাতেরা চুরি ডাকাতি করে সেই চুরি ডাকাতির টাকাকে পুঁজি বানিয়ে সেই পুঁজি দিয়ে শিল্প স্থাপন করে শিল্পপতি বনে যান। অথবা সেই পুঁজি দিয়ে বড় ব্যবসা করে বড় ব্যবসায়ী হয়ে যান। দেশে যেহেতু শিল্প ও বড় ব্যবসা প্রয়োজন, তাই কে কীভাবে পুঁজি সংগ্রহ করলো তার দিকে মানুষ নজর দেবার সময় পায় না। তারা মাটির উপরে ফলটি দেখতে চায় অর্থাৎ শিল্প বা ব্যবসা দেখতে চায়। অর্থাৎ শিল্পপতি বা ব্যবসায়ী যেই উৎস থেকেই তার পুঁজি পেয়ে থাকুন না কেন, সম্মানিত হয়ে যান। বাংলাদেশে শিল্পপতি বা ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রচুর সংখ্যক আছেন যারা কষ্ট করে সৎ প্রক্রিয়ায় সময় লাগিয়ে ধীরে ধীর বড় শিল্পপতি বা ব্যবসায়ী হয়েছেন। আবার প্রচুর সংখ্যক আছেন যারা এর ব্যতিক্রম। আমরা এই আলোচনা শেষ করতে চাই এই বলে যে, এই শিল্পপতি এবং ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সাধারণ মানুষ ত্যাগ আশা করে। এই কোরবানির সময় এই প্রশ্নটি যেন আমাদের মনে থাকে, শুধু এইটুকুই আমার আবেদন।
লেখক: মুক্তিযোদ্ধা, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।