Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কোরবানি প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম

প্রকাশের সময় : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ম. মীজানুর রহমান

ইসলাম শান্তির সাম্যের ও ত্যাগের ধর্ম, সম্পূর্ণ ভোগের নয়। এ এমন এক সত্য সুন্দর ও সাম্যের মানবিক ধর্ম প্রবর্তন করে গেছেন হজরত মোহাম্মদ (সঃ) যার চিরন্তনতাকে নিয়ে কোন বিতর্কের অবকাশ তিনি রেখে যাননি। ইসলাম অর্থাৎ শান্তি যার প্রয়াসে আমাদের জীবনচেতনাকে উজ্জীবিত রাখতে হয় প্রতিদিন প্রতিনিয়ত। ঈদুল আজহা সেই পবিত্র ত্যাগের কথাই আমাদের মনে করিয়ে দেয় আজ এই পবিত্র দিনে।
হজরত ইবরাহিম (আ.) স্বপ্নাদিষ্ট হয়েছিলেন তাঁর সবচেয়ে আপনজনকে কোরবানির (বলিদানের) আর তা ছিল তাঁর সবচেয়ে ¯েœহের পুত্রধন হজরত ইসমাইল (আ.)। বিষয়টি আদৌ কোন সাধারণ নয়। হজরত ইবরাহিম (আ.) এতই আল্লাহপ্রেমে ছিলেন বিভোর যে তিনি ঠিক পরদিনই খোদার আদেশমাফিক কোরবানি দিতে উদ্যত হলে ঠিক সেইখানে একটি দুম্বা এসে যায় অলৌকিকভাবে এবং তিনি তাঁর আল্লাহপ্রেমে যে জয়ী হয়েছিলেন সংক্ষিপ্তাকারে সেই সবচেয়ে বড় ত্যাগেরই ধারাবাহিকতার জেরই হচ্ছে প্রতি বছরে আল্লাহর নামে কোরবানি দেয়ার প্রথা। এ কোন লোক দেখানো কোরবানি নয়, এটি হচ্ছে ত্যাগের মাহাত্ম্যের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) তাঁর কাব্যে ও সঙ্গীতে আজীবন সত্য, সুন্দর ও সাম্যের প্রবক্তা ছিলেন। তিনি ইসলামে ছিলেন অবিচল বিশ্বাসী। তাই তাঁর কাব্যে ও গানে স্থান পেয়েছে ইসলোমের সেই আত্মশক্তির আহ্বান এবং সকল অশান্তি, অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, হিংসা, বিদ্বেষ প্রভৃতি সকল প্রকার অমানবিকতার বিরুদ্ধে সরাসরি বিদ্রোহ এবং সর্বত্র ন্যায়, সত্য, সুন্দর ও সাম্যের প্রতিষ্ঠা। তাঁর বিখ্যাত কবিতা “কোরবানী”তে সেই নির্দেশনা ভাস্বর হয়ে আমাদের সামনে জাজ্বল্যমান। প্রসঙ্গত বলতে হয়, তাঁর যুগটি ছিল পরাধীন ভারতবর্ষে বিদেশী দুঃশাসন আর ছিল সেই শাসনানুগ অত্যাচার আর অবিচার যার বিরুদ্ধে তিনি চেয়েছিলেন আত্ম-শক্তির উদ্বোধন। আর সেই দুঃশাসনের, সেই অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার শক্তি ও সাহস হচ্ছে ‘সত্যগ্রহ’ শক্তির উদ্বোধন। স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগ (জান-কোরবান)। তাই তিনি বলছেন,
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্য-গ্রহ’ শক্তির উদ্বোধন।
দুর্বল! ভীরু! চুপ রহো, ওহো খামখা ক্ষুব্ধ মন।
ধ্বনি ওঠে রণি’ দূর বাণীর,Ñ
আজিকার এ খুন কোরবানির!...
পশু কোরবানি দিয়ে পশু-শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছেন কবি। তিনি স্বদেশের বীর তরুণদের আত্মোৎসর্গের অর্থাৎ জান কোরবানের আহ্বান জানাচ্ছেন প্রসংগত।
যুগে যুগে মানুষের উপর মানুষরূপী অমানুষদের যে অত্যাচার-অবিচার নিষ্পেষণ চলছে নজরুল তারই ইঙ্গিত দিচ্ছেন এখানে এবং তার বিরুদ্ধে অবিরাম সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে।
আজকের বড় শিক্ষা হচ্ছে বনের পশুকে কোরবানি দিয়ে আপন মনকে শুদ্ধ কর এবং আত্মমুক্তির চেতনাকে জাগিয়ে দাও, স্বজন মানব-হত্যা চিরতরে বন্ধ কর আর এটাই হচ্ছে ইসলামের আত্মোৎসর্গের অমোঘ শিক্ষা। ত্যাগের মহান শিক্ষা যদি আমাদের সকলের মজ্জাগত হয় এবং আমরা যদি মহাভোগবাদকে পরিহার করতে শিখি ইসলামী আদর্শে তাহলে আমাদের সকলের জীবন হবে সুখী ও সমৃদ্ধ এবং মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা হবে সংঘাত-মুক্ত সর্বস্বার্থ-অন্বিত অক্ষয়।
লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক



 

Show all comments
  • H.M.Abdus Satter ১১ এপ্রিল, ২০২১, ১০:৪১ পিএম says : 0
    চমৎকার
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কোরবানি প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম

আরও পড়ুন