পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একটি মৃত্যু, একজন আইনজীবীর চিরবিদায় স্তব্ধ করে দিয়েছে গোটা আইনাঙ্গনকে। শোকে মুহ্যমান বিচার বিভাগ তাই এক দিনের জন্য বন্ধ রেখেছে বিচারিক কার্যক্রম। গতকাল বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল এবং হাইকোর্ট বিভাগ চলেনি। প্রথিতযশা আইনজীবী, রাজনীতিক সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর ইন্তেকালের পর তার সম্মানে বিচার কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন প্রধান বিচারপতি। গত বুধবার বিকেল ৫টার দিকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন) আবদুল মতিন খসরু এমপি। এর আগে তিনি করোনা আক্রান্ত হয়ে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। তার ইন্তেকালে শোকের ছায়া নেমে আসে রাজনৈতিক অঙ্গন, আইনজীবী সমিতি, বিচারাঙ্গন ও সাধারণ মানুষের মাঝে। ঢাকায় দু’টি জানাজা এবং কুমিল্লায় দু’টি জানাজা হয়। দল, মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত আবদুল মতিন খসরুকে বাদ আছর দাফন করা হয় কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মিরপুর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে।
এর আগে সকাল ১০টায় আবদুল মতিন খসরুর লাশ আনা হয় মরহুমের চিরচেনা সুপ্রিম কোর্ট বার প্রাঙ্গনে। এখানে অনুষ্ঠিত হয় তার দ্বিতীয় জানাজা। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিগণ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দ, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এ জানাজায় অংশ নেন।
জানাজা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রূহুল কুদ্দুস কাজল। তিনি আবদুল মতিন খসরুর বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। জানাজায় আবদুল মতিন খসরুর একমাত্র ছেলে আবদুল মুনিম ওয়াসিফ তার বাবার জন্য সকলের দোয়া কামনা করেন।
এর আগে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন খসরুকে ‘রাষ্ট্রীয় গার্ড অব অনার’ প্রদান করা হয়। পরে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, স্পিকার, আইন মন্ত্রণালয়, অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, আওয়ামী লীগের পক্ষে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষকলীগ, ছাত্রলীগ, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম, আবদুল মতিন খসরু অ্যাসোসিয়েটসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে আবদুল মতিন খসরুর কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
পরে মরহুমের লাশ কুমিল্লায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিজ সংসদীয় আসন (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) বুড়িচংয়ে আনন্ত পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তৃতীয় জানাজা এবং ব্রাহ্মণপাড়ায় চতুর্থ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দল-মত নির্বিশেষে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।
‘সেদিন তার বক্তব্যে কেঁদেছে মানুষ’
সুপ্রিম কোর্ট বার প্রাঙ্গনে আবদুল মতিন খসরুর জানাজায় অংশ নিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস ছিল। তিনি একজন মেধাবী এবং অত্যন্ত প্রজ্ঞাবান আইনজীবী ছিলেন। তার মৃত্যুতে আইন অঙ্গনে একটা বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। জানিনা এ শূন্যতা আর পূরণ হবে কি না । আইনমন্ত্রী বলেন, মতিন খসরুর মৃত্যুতে আমি অত্যন্ত মর্মাহত। তার বিদেহী রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। স্মৃতিচারণ করে আনিসুল হক বলেন, আমি তাকে ছাত্রলীগ করার সময় থেকে চিনতাম। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি পাঁচবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৯৬ সালে প্রথমে তিনি আইন প্রতিমন্ত্রী হন। এর ৬ মাস পর তাকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী করা হয়। ব্যক্তিগতভাবে তিনি আমাকে অনেক স্নেহ করতেন। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সময় আবদুল মতিন খসরু আইনমন্ত্রী ছিলেন। কাজ শেষ করে তিনি সন্ধ্যাবেলায় আসতেন। আমাদের কাজ শেষ হলে তিনি বাড়ি ফিরতেন। ১৯৯৬ সালে ইনডেমনিটি আইন বাতিলের সময় তিনি যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তা আজও স্মরণীয়। সেদিন তাঁর বক্তব্যে দেশের মানুষ কেঁদেছে।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মিরপুর গ্রামে ১৯৫০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি আব্দুল মতিন খসরুর জন্ম। পিতা-হাজী মো. আবদুল মালেক এবং মাতা জাহানারা বেগম। তিনি চার ভাই তিন বোনের মধ্যে সবার বড়। তার এক ছেলে এক মেয়ে রয়েছে। মেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক্তার হিসেবে কর্মরত। ছেলে আর্কিটেক্ট।
আবদুল মতিন খসরু মাধবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি ও বিএ পাস করে কুমিল্লা ল’ কলেজ থেকে এল এল বি সম্পন্ন করেন। বিকম ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৭৮ সালে কুমিল্লা জজকোর্টে আইন পেশায় নিযুক্ত হন। ১৯৮২ সালের ১৩ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ২০১০ সালের ২৪ আগস্ট তিনি সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে সুপ্রিম কোর্টে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনয়নে কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) থেকে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। পরে ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে পরপর আরও ৪ বার এমপি নির্বাচিত হন। এর মধ্যে ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের আওয়ামী লীগ সরকার আমলে আইনমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল হয়। যা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের বিচারের পথ খোলে। একাদশ জাতীয় সংসদের আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তিনি। তিনি দলের আইন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমন্ডলীর সদস্য হন। ২০১৯ সালেও তাকে একই পদে বহাল রাখা হয়। আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করার আগে তিনি দলের আইন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া তিনি ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের থানা ও জেলার বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। অমায়িক, সদালাপী ও তার নির্লোভ রাজনীতি চর্চার কারণে দল-মত নির্বিশেষে সবার কাছেই তিনি ছিলেন জনপ্রিয়। সর্বশেষ তিনি গত ১২ মার্চ তিনি সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি নির্বাচিত হন। নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণের কারণেই তিনি করোনায় আক্রান্ত হন বলে ধারণা করা হয়। গত ১২ এপ্রিল মতিন খসরুর নেতৃত্বাধীন কার্যকরি কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে বিদায়ী কমিটি। এ সময় তিনি ছিলেন লাইফ সাপোর্টে। বিপুল ভোটে তিনি সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি নির্বাচিত হলেও সভাপতির চেয়ারে তিনি বসতে পারেননি। সমিতির সভাপতির কক্ষে এখনও টানানো রয়েছে আবদুল মতিন খসরুর নামফলক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।