Inqilab Logo

সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সিলেটে সেবায় অসহায়ত্ব

নাই, নাই, শব্দে করোনা চিকিৎসা

ফয়সাল আমীন : | প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০০ এএম

করোনা ভয়াল থাবা গ্রাস করছে সিলেটে। দীর্ঘ হচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সেই সাথে বাড়ছে মৃত্যুও সংখ্যাও। চারটি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দুই শত প্রায়। ঠাঁই নেই হাসপাতালেও। করোনাডেডিকেটেড ১০০ শয্যার ‘শহিদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে’ খালি নেই বেড। আইসিইউর জন্য চলছে রীতিমতো হাহাকার। হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছুটছেন রোগীর স্বজনরা। কিন্তু কোথাও নেই আইসিইউ। কেবল নাই নাই শব্দে এমন অসহায়ত্ব ঘটছে চোখের সামনে।

এরমধ্যে নগরীর দরগাহ গেইট এলাকার বেসরকারী হাসপাতাল নূরজাহান করোনা ইউনিট করা হয়েছে চালু। এ হাসপাতালে ২৩ বেডের করোনা ইউনিট ও ১১ বেডের স্পেশালাইজড আইসিইউ ইউনিট চালু করা হয়েছে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের পরিচালক শাফি মোহাম্মদ নাহিয়ান জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধিতে ডেডিকেটেড হাসপাতাল গুলোতে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় আবারো করোনা ইউনিট চালু করেছেন তারা। এছাড়া সিলেট নগরীর দুটি বেসরকারি হাসপাতালেও চলছে করোনা রোগীদের চিকিৎসা। নগরীর আখালিয়ার মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ বেড রয়েছে ৮টি। নগরীর দক্ষিণ সুরমার নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে আইসিইউ বেড ১০টি। এ হাসপাতাল গুলোতে করোনা চিকিৎসা ব্যয়বহুল থাকার পরও সিট খালি নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, বিভাগের চার জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য আইসিইউ বেড রয়েছে মাত্র ২১টি। এর মধ্যে শহিদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ১৬টি ও মৌলভীবাজার হাসপাতালে ৫টি। সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ সরকারি হাসপাতাল গুলোতে নেই আইসিইউর ব্যবস্থা। চিকিৎসার মান ও সেবা ভালো হওয়ায় রোগীর অবস্থা খারাপ হলেই স্বজনরা রোগী নিয়ে ছুটে আসছেন সিলেটের করোনা চিকিৎসার বিশেষায়িত হাসপাতাল শহীদ ডা. শামসুদ্দিনে। কিন্তু আইসিইউ শয্যা খালি না থাকায় ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা।

তাছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনা রোগীদেরই চিকিৎসা দিচ্ছেন, সন্দেহভাজন করোনার রোগীদের করাতে পারছেন না ভর্তি। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, শহিদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে আইসিইউ বেড ১৬টি এবং ওয়ার্ড ও কেবিন মিলে সিট আছে ৮৪টি। এর মধ্যে নষ্ট আইসিইউর দুটি বেড। গত শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত হাসপাতালের আইসিইউ ১৪ বেডেই ছিল রোগী। আর ওয়ার্ড ও কেবিন মিলিয়ে রোগী ছিলেন আরও ৮২ জন।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সুশান্ত কুমার জানান, রোগীতে পরিপূর্ণ তাদের হাসপাতাল। কোনো রোগী মোটামুটি সুস্থ হলেই বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাকে। আর যে সিট খালি হচ্ছে সেখানে ভর্তি করা হচ্ছে নতুন রোগী। আইসিইউতে সিট সঙ্কট থাকায় করোনা পজিটিভ রোগী ছাড়া ভর্তি করা যাচ্ছে না অন্য রোগীদের।

সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা.শামস উদ্দিন বলেন, কোনো আইসিইউ বেড নেই সুনামগঞ্জে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থাও নেই। করোনা রোগীদের জন্য আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ১৪৫টি। এর মধ্যে জেলা সদরে ১০০টি বাকিগুলো জেলার বিভিন্ন উপজেলায়।

হবিগঞ্জের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোখলেছুর রহমান উজ্জ্বল বলেন, তার জেলায়ও নেই কোনো আইসিইউ বেড। তবে ব্যবস্থা রয়েছে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের। করোনা রোগীদের জন্য জেলা সদরে ১০০ এবং ৭টি উপজেলায় আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ৫টি করে।

ঝুঁকিপূর্ণ জেলা মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন বলেন, জেলা সদরে করোনা রোগীদের জন আইসিইউ বেড রয়েছে ৫টি। এর মধ্যে তিনটিতে আছে রোগী, পুরো জেলায় আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ১৩০টি। এর মধ্যে জেলা সদরে মাত্র ৫০টি, বিভিন্ন উপজেলায় বাকিগুলো ।

সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল বলেন, সরকারিভাবে শুধু শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ১৬টি আইসিইউ বেড রয়েছে। খাদিমপাড়া ও শাহপরাণ হাসপাতালসহ আর কোথাও নেই আইসিইউ বেড। করোনা রোগীদের জন্য জেলা সদর ও উপজেলাগুলোর সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক মিলিয়ে আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ৮৯১টি ।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. নুরে আলম শামীম জানান, আইসিইউ সুবিধা বাড়াতে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। তবে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা অক্সিজেনে জোর দিচ্ছি আমরা। অক্সিজেনের মাধ্যমে সাধারণ বেডেই অনেক রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। এজন্য সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে অন্তত ২০০ আইসোলেশন শয্যা প্রস্তুত করার। এছাড়া চলমান পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরোও বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাটাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। যে হারে রোগী বাড়ছে তাতে, বেড যতই বাড়ানো হোক, রোগীর সঙ্কুলান দেয়া অসম্ভব থাকবেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ