Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সুবর্ণচরে বেড়িবাঁধে ভাঙন

কোটি টাকার ফসল নষ্ট

নোয়াখালী ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০৪ এএম

সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবলী ইউনিয়নের ভুলুয়া নদীর পাশ্ববর্তী বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে দু’টি গ্রামের ফসলি জমি। জোয়ারের লবণাক্ত পানিতে নষ্ট হয়েছে প্রায় একশ’ একর জমির রবিশস্য তরমুজ, ঢেঁড়স, সয়াবিন, মরিচ, আলু, ডাল। এতে ক্ষতি হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। ক্ষতির মুখে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতার কারণে এ বাঁধটি সঠিক সময় মেরামত না করায় গত ৩-৪ বছর ধরে তারা বার বার ক্ষতির মুখে পড়ছেন। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি বাঁধটি দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সরজমিনে দেখা গেছে, নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার মধ্যবর্তি সীমানায় ভুলুয়া নদী। পশ্চিমে রামগতির চর রমিজ ও পূর্বে সুবর্ণচরের চর ব্যা¹া গ্রাম। পশ্চিমে চর জেগে উঠায় সীমাহীন ভাঙনের কবলে পড়ে পূর্বাঞ্চল। উপক‚লীয় অঞ্চলের লোকজনের সুবিধার কথা চিন্তা করে ১৯৮৬ সালে চর ব্যা¹া গ্রামে ভুলুয়া নদীর পাড়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। বিভিন্ন সময় বন্যা ও প্রাকৃতিক জলোচ্ছ্বাসের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাঁধটি। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের দিকে তা মেরামত করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু ২০১৭ সালের শেষের দিকে ও ২০১৮ সালের প্রচন্ডভাবে ভাঙতে শুরু করে বেড়ি বাঁধটি। গত তিন বছর বাঁধের ভাঙাংশ দিয়ে আশপাশের বাড়ি ঘর, মাছের পুকুর ও ফসলি জমিতে ডুকে পড়ে নদীর লবণাক্ত পানি।

আর চলতি বছরে অমাবস্যা ও পূর্ণিমার সময় প্রচন্ড জোয়ারে বেড়িবাঁধের অন্তত ৩শ’ মিটার ভেঙে গিয়ে ফসলি জমিতে লবণাক্ত পানি ডুকতে শুরু করে। আর এ জোয়ারের পানিতে গত ২৬ মার্চ থেকে প্রতি বারো ঘন্টায় এক বার জমিগুলো প্লাবিত হচ্ছে। এতে দুই তিন ঘণ্টা স্থায়ীভাবে কয়েক ফুট পানির নিচে তলিয়ে থাকার পর ক্ষেতে থাকা ফসল নিয়ে নদীতে নেমে যাচ্ছে জোয়ারের পানি। বেড়িবাঁধ মেরামত না করায় শুকনো মৌসুমে যে পরিমাণ ক্ষতির মুখে পড়েছে তা বর্ষায় আরও কয়েকগুণ বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। ৫ নং ওয়ার্ডের সবজি চাষি পারুল আক্তার বলেন, গত দুই বছর বড় লোকের জমিতে বর্গাচাষ করে ক্ষতির মুখে পড়ে স্বামী আবদুর রব কুমিল্লার লালমাই এলাকার একটি ইটভাটায় কাজে চলে গেছেন। চলতি বছরে আবহাওয়া ভালো থাকায় তিন একর জমি বর্গা নেন তিনি। এরপর বিভিন্ন এনজিও ও স্থানীয় কয়েকজন থেকে সুধে ২ লাখ টাকা নিয়ে তিন একর জমিতে সয়াবিন ও ঢেঁড়স চাষ করেন। গাছের বৃদ্ধি ও ফুল দেখে তার পরিচর্যায় খরচ করেন আরও কয়েক হাজার টাকা। ফলন বড় হওয়ার আগ মুহূর্তে পাশ^বর্তী ভুলুয়া নদী থেকে বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে ফসলের ক্ষেতে। গত কয়েকদিনে একাধিক বার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয় তার জমিগুলো। বর্তমানে প্রতিটি ক্ষেতের গাছ গুলো লাল হয়ে মরে যাচ্ছে। নিজের ৫ মেয়ে ও ২ ছেলেকে নিয়ে একদিকে যেমন মানবতর জীবন কাটছে অন্যদিকে এনজিওর ঋণ ও সুধের টাকা কিভাবে শোধ করবেন তার পথ খুঁজে পাচ্ছেন না এ পরিশ্রমি নারী। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মাধ্যমে সরকারি সহযোগিতার আবেদন করেছেন পারুল।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুন উর রশিদ জানান, খবর পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি ক্ষেতগুলো তিনি পরিদর্শন করেছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে সরকারি সহায়তার ব্যবস্থার আবেদন করা হবে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, ব্যা¹া গ্রামের ভুলু নদীর পাড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধটির মেরামতের জন্য সিডিএসপি আওতায় ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে ঠিকাদারকে কাজ বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে। খুব দ্রুত বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত ৩শ’ মিটার মেরামতের কাজ শুরু করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ