বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
হিন্দু সম্প্রদায়ের এক ছাত্রীকে ধর্মান্তিরত করে বিয়ে করার অভিযোগে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার নুরনগর আশালতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীম আহমেদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সাথে তাকে কেন স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হবে না তা জানতে চেয়ে সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। শনিবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে অনুষ্ঠিত বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির জরুরী সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ওই ছাত্রীর বাবা জানান, ২০১৯ সালে তার মেয়ে নূরনগর আশালতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পাশ করে। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীম আহমেদ (৪৮) তাকে বিভিন্ন সময়ে বিজ্ঞানের ব্যবহারিক খাতার কাজে সহযোগিতা করতেন। পরে তার মেয়ে কাটুনিয়া রাজবাড়ি ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়। মেয়েটি পার্শ্ববর্তী এক গ্রামের একজন শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার সময় শিক্ষক শামীম তাকে উত্ত্যক্ত করতেন। গত ২ এপ্রিল ভোরে প্রাইভেট পড়ে কলেজে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বের হয় কলেজ ছাত্রী। দুপুর পেরিয়ে গেলেও মেয়ে বাড়িতে না ফিরলে তাকে খুঁজতে থাকে পরিবারের সদস্যরা। তাকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে পরদিন তিনি শ্যামনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
গত বুধবার (৭ এপ্রিল) ফেসবুকে তার মেয়ে ও প্রধান শিক্ষক শামীম আহমেদ খুলনার এক নোটারী পাবলিকের কার্যালয়ে বসে ধর্মান্তরিত হওয়া ও বিয়ে সংক্রান্ত এক নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করছেন এমন ছবি দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা তাকে জানান। একপর্যায়ে ওই রাতেই তিনি শামীম আহমেদ এর বিরুদ্ধে থানায় মেয়েকে অপহরণ ও ধর্মান্তরিত করার অভিযোগে একটি এজাহার দাখিল করেন।
আশালতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক আশরাফ হোসেন ও লিটন সরদারসহ কয়েকজন জানান, এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন প্রধান শিক্ষকের বড়ো ভাই নুরনগর ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য বখতিয়ার আহমেদ।
ওই শিক্ষক তিনটি বিয়ে করার পরও সম্প্রতি তার বিদ্যালয়ের এক সময়কার ছাত্রী হিন্দু নাবালিকাকে ফুসলিয়ে নিয়ে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করেছেন।
এদিকে হিন্দু ছাত্রীকে ধর্মান্তরিত করে বিয়ের বিষয়টি জানাজানি হলে শনিবার আশালতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাকক্ষে এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতি বখতিয়ার আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুস সবুর, পরিচালনা কমিটির সদস্য ও ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান হবি, ইউপি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, সদস্য আব্দুল কাদের, সদস্য শাকির আহম্মেদ, বিদ্যোৎসাহী সদস্য জিএম মঈনুদ্দিন লাভলু, অভিভাবক সদস্য ডিএম রবিউল ইসলাম মুকুল, শিক্ষক সুশান্ত ঘোষসহ কয়েকজন অভিভাবক।
সভায় প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্তসহ তাকে কেন স্থানীয়ভাবে বরখাস্ত করা হবে না তা জানতে চেয়ে নোটিশ প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে ওই শিক্ষককে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
এদিকে অবিলম্বে প্রধান শিক্ষক শামীম আহমেদকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও ভিকটিমকে উদ্ধারের দাবি জানিয়ে শনিবার বিকেল ৫ টায় নূরনগর বাজারে শিক্ষক সমাজের ব্যানারে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন -বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য জিএম মঈনুদ্দিন লাভলু, মুক্তিযোদ্ধা এমএম আব্দুল মজিদ, নূরনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম সোহেল রানা, নূরনগর নবীন সংঘের আহ্বায়ক সাইফুল্লাহ মামুন, শিক্ষক জিয়াউর রহমান প্রমুখ।
এ ব্যাপারে আশালতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীম আহমেদের সাথে কথা বলা সম্ভব না হলেও তার এক আত্মীয় আবুল হোসেন বলেন, 'এর আগে সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষক হিন্দু মেয়ে বিয়ে করেছিলেন। তার বেলায় তো সমস্যা হয়নি। কোনো হিন্দু মেয়ে বিয়ে করে যদি সীমিত পরিসরে মুসলমান হয় তাহলে দোষ কোথায়?'
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বখতিয়ার আহম্মেদ বলেন, শামীমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দেওয়ার পর প্রয়োজনে ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হুদা জানান, এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে শামীম আহমেদের নাম উল্লেখ করে শুক্রবার রাতে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নম্বর -১৬।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক দীপ্তেশ রায়কে আসামি গ্রেপ্তার ও ভিকটিম উদ্ধারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।