পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের মাস হচ্ছে রমজান। তাকওয়া অর্জনের মাস হচ্ছে রমজান। রোজা মানুষকে কু-প্রবৃত্তি, পাপাচার থেকে রক্ষা করে থাকে। আজ রাজধানীসহ বিভিন্ন মসজিদে জুমার খুৎবা পূর্ব বক্তব্যে পেশ ইমামরা এসব কথা বলেন। করোনা মহামারি থেকে মুক্তি দেশ জাতি ও মুসলিম উম্মাহ’র সুখ-শান্তি সমৃদ্ধি কল্যাণ কামনা করে মসজিদে মসজিদে বিশেষ দোয়া করা হয়। পেশ ইমামরা যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে চলাচলের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ঢাকার বাংলা মটরসোনারগাঁও রোডস্থ (সি আর দত্ত রোড) বাইতুল মোবারক জামে মসজিদের খতিব ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইসলামকি স্টাডিজ বিভাগের অনারারী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ আজ জুমার বক্তব্যে বলেন, ‘মাহে রমজান’ আমদের দরজায় কড়া নাড়ছে। আরবী ‘রমজান’ শব্দটি ‘রামাজা’ শব্দ থেকে উৎকলিত। যার অর্থ ছাই, জ¦লন, ভস্মীভ‚ত হওয়া ইত্যাদি। এ মাসে যেহেতু মানুষের গুনাহকে ভস্মীভ‚ত করে দেয়া হয় তাই এ মাসের নামকরণ করা হয়েছে ‘রমজান’ । খতিব বলেন, রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের মাস হচ্ছে রমজান।
রোজা ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। প্রাপ্ত বয়স্ক, সুস্থ-স্বভাবিক সকল মুসলমানের উপরই রোজা রাখা আবশ্যক। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনি ফরজ করা হয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার।’(আল-কোরআন, ২ : ১৮৩)।
খতিব বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে রমজান মাসে ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে রাতে সালাত আদায় করবে তার অতীতের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’রমজান আসার পূর্বেই রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতেন, এ মাসের নানা ফযিলতের কথা সাহাবীদের সামনে আলোচনা করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করছেন, আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন্য রোজা পালন ফরজ করেছেন। এ মাসে আকাশের দ্বারসমূহ খুলে দেয়া হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। অভিশপ্ত শয়তানকে বন্দি করা হয়। এ মাসে রয়েছে একটি রাত যা হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে মূলত সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনলো, সালাত কায়েম করলো, যাকাত আদায় করলো, রোজা পালন করলো রমজান মাসে, আল্লাহ তা’আলার কর্তব্য হয়ে যায় তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো।’ (সহীস বুখারী, হাদীস নং-৭৪২৩ )
খতিব বলেন, কোরআনে কদর রজনীকে হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ রজনী হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘লাইলাতুল কদর সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, সে রজনী উষার আবির্ভাব পর্যন্ত।’ (আল-কোরআন, ৯৭ : ৩-৫) মহিমান্বিত কদর রজনীও এ মাসেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তিনজনের দোয়া কবুল করা হয় ; সিয়াম পালনকারীর দোয়া, অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া এবং মুসাফিরের দোয়া।’ রমজান মাসেই মানুষের গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হয়, জাহান্নাম থেকে অসংখ্য মানুষকে মুক্তি দেয়া হয়। মহান আল্লাহর অবারিত রহমত এ মাসেই বর্ষিত হয়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানব সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান দশ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন, কিন্তু রোজার বিষয়টা ভিন্ন। কেননা রোজা শুধু আমার জন্য এবং আমিই তার প্রতিদান দেব।’(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ১৫৫১)।
খতিব বলেন, রোজা মানুষকে কু-প্রবৃত্তি, পাপাচার থেকে রক্ষা করে থাকে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘রোজা হল ঢাল। সুতরাং তোমাদের মাঝে যে রোজা পালন করবে সে যেন অশ্লীল আচরণ ও শোরগোল থেকে বিরত থাকে। যদি তার সাথে কেউ ঝগড়া বিবাদ কিংবা মারামারিতে লিপ্ত হতে চায় তবে তাকে বলে দেবে, আমি রোজা পালনকারী।’ মহান আল্লাহ আমাদের রমজানের সকল কল্যাণ দান করুণ। আমীন!
বায়তুল মোকাররম জাতীয় সমজিদের পেশইমাম ও ভারপ্রাপ্ত খতীব মুফতি মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহিল বাকী আজ জুমার পূর্বে বলেন, রমজান উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বড় একটি নেয়ামত। রমজানের রোজার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন হয়। যে তাকওয়া জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ ও জান্নাত পাওয়ার ভিত্তি। কোন রোজাদার যদি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে সাওম পালন করার জন্য হালাল পানাহার থেকে দূরে থাকে অন্য দিকে যে গুলো সব সময়ের জন্য হারাম তথা মিথ্যা, গীবত , জুলুম, সুদ, ঘুষ সে গুলো বর্জন করলো না তাহলে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে সে তাকওয়ার কি অর্জন করল? এরকম রোজাদারদের ব্যাপারে রাসুলে পাক (সা.) ইরশাদ করেন, এমন কিছু রোজাদার আছে যাদের রোজা তাদের জন্য উপবাস ছাড়া আর কিছু নয়। জৈবিক চাহিদা নিয়ন্ত্রণ ও কৃচ্ছতা সাধনের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জনের জন্য রমজানের দিনে হালাল ভোগকেও হারাম করা হয়েছে। পেশ ইমাম বলেন, রমজানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হওয়া মানেই আমরা কেউ রমজান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করিনি এটাই বোঝায়। কৃচ্ছতা সাধনের মাসে রোজাদার ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের এতো বেশী চাহিদা বেড়ে গেছে যে চহিদার কারণে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধŸগতি আর নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। রোজাদার ভোক্তা ও ব্যবসায়ী উভয় পক্ষকে কৃচ্ছতা সাধনের মাধ্যমে রমজানের সাম্মানার্থে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে হবে। রমজানকে ঘিরে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রমজানের সাথে অসাধাচরণের শামিল। আল্লাহ আমাদেরকে রমজানের শিক্ষাগ্রহণ করে কৃচ্ছতা সাধনের তৌফিক দান করুন। আমীন! মাগুরা নিজনান্দুয়ালী বায়তুন-নূর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা ওসমান গণী সাঈফী আজ জুমার খুৎবা পূর্বে বলেন, আসন্ন পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হবে বাঙালী নববর্ষের উৎসব হিসেবে। আমাদের কবি সাহিত্যিক ও বুদ্ধি জীবিদের দৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখের অন্যতম মাহাত্ম্য আর বৈশিষ্ট্য হলো "সার্বজনীনতা"। বড় বিষয় হলো জাতি এক হলেও ধর্মও আদর্শ এক নয়, আমরা এ দেশের মানুষ সকলে বাঙালী হলেও আমাদের ধর্মীয় পরিচয় ভিন্ন ভিন্ন। আর সংস্কৃতির মূল বুনিয়াদ হলো মানুষের আক্বিদা ও বিশ্বাস। খতিব বলেন, মুসলিম সংস্কৃতি গড়ে ওঠে আল্ল¬াহর একত্ববাদকে কেন্দ্র করে, আর হিন্দু সংস্কৃতি গড়ে ওঠে পৌত্তলিকতাকে কেন্দ্র করে। তাই পরস্পর বিরোধী দুটি জাতির সংস্কৃতিকে এক করে বাঙালীর সংস্কৃতি বলে চালিয়ে দেয়ার কোন অবকাশ নেই। কেননা হিন্দু সংস্কৃতিতে যেটা আনন্দ দায়ক ও পূর্ণের বিষয় মনে করা হয়। মুসলিম সংস্কৃতিতে সেটা রীতিমত বেদনাদায়ক ও চরম গর্হিত কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়। মুসলমানদের উৎসব হচ্ছে পবিত্র দুই ঈদ। আর পহেলা বৈশাখ উৎসবে বিজাতীয় সাংস্কৃতিক চর্চাই বেশি হচ্ছে। সুতরাং মুসলমান ও অমুসলমানের মিলিত উৎসব হতে পারে না। পহেলা বৈশাখের নামে বিজাতীয় সংস্কৃতিতে গা-ভাসিয়ে দেয়া যাবে না। আল্লাহপাক আমাদেরকে ছহী বুঝ দান করুন।
ঢাকার উত্তরা সেক্টর-০৩ এর মসজিদ আল মাগফিরাহর খতিব মুফতি ওয়াহিদুল আলম আজ শুক্রবার জুমার খুৎবাহ পূর্ব বক্তব্যে বলেছেন, তাকওয়া অর্জনের মাস আসন্ন মাহে রমাজান। আধ্যাতিœক উন্নতি, মানবিক মমতা বোধের বিকাশ ও সততা অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ অবলম্বন হলো রোজা। খতিব বলেন, রমজান মাসে যে আমলগুলো গুরুত্বসহ করা দারকার। যথাসম্ভব শেষ রাতে সাহরি খাওয়া, রোজা রাখা, তাড়াতাড়ি ইফতার করা, অন্যকে ইফতার করানো, কোরআন মাজীদ তিলাওয়াত করা, তাসবীহ-তাহলীল ও দরূদ শরীফ পাঠ করা। গীবত ও দোষ-চর্চা হতে জবান নিয়ন্ত্রণ রাখা, ২০ রাকাআত তারাবীহ আদায় করা, তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া, যাকাত প্রদান করা। নবী (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.) এবং আউলিয়ায়ে কেরাম যেভাবে রমজানের প্রতিটি মুহূর্তকে ইবাদত-বন্দেগীর মধ্যে অতিবাহিত করছেন। আমাদেরকেও আল্লাহ তা’আলা অনুরূপ তৌফিক দান করুন। আমীন!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।