Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দৃশ্যপট চট্টগ্রাম-কিছু স্বস্তি কিছু ভোগান্তি

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ৬ এপ্রিল, ২০২১, ১০:২৯ এএম

লকডাউন। কঠোর বিধিনিষেধ। করোনা ঠেকাতে এ ব্যবস্থায় চট্টগ্রামের জনজীবনে নানামুখী প্রভাব ফেলছে। পাল্টে গেছে দৃশ্যপটও। কোথাও কিছুটা স্বস্তি। আবার কোথাও ভোগান্তিও আছে। তবে গেল বছরের মতো জনমনে উদ্বেগ-শঙ্কা তেমন প্রকট নয়।
ওই বছরের টানা লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের কাছে এখন যেন জীবন নয়, জীবিকাই প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভাল দিক হলো-মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে। বাড়ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতাও।
তবে লকডাউনের মতো কড়া বিধিনিষেধের কারণে ফের আর্থিক মন্দার শঙ্কায় উদ্বেগ বাড়ছে। চিন্তার ভাজ খেটে খাওয়া স্বল্প আয়ের মানুষের কপালে। বেকার হওয়ার শঙ্কায় অনেকে।
সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখি। প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। করোনার লাগাম টানতে সর্বশেষ সোমবার থেকে শুরু হয় সপ্তাহব্যাপী লকডাউন
প্রথম দিনের মতো মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনেও ঢিলেঢালা ভাব। শ্রমিকসহ কর্মজীবী মানুষ ছুটছে কর্মস্থলে। গণপরিবহন বন্ধ রেখে কলকারখানা খোলা রাখায় চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে শ্রমিকদের।
সরকারি অফিস-আদালত বন্ধ থাকলেও চালু আছে জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। কিন্তু গণপরিবহন না থাকায় রাস্তায় নেমে দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হয় এসব কর্মজীবীদের।
নগরীর আগ্রাবাদ, বারিক বিল্ডিং, লালখান বাজার, জিইসি, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, চকবাজার, বাকলিয়াসহ প্রতিটি এলাকায় দেখা গেছে অফিসমুখী মানুষের ভিড় জটলা। গণপরিবহন না থাকায় অনেকে রিকশায়, অটোরিকশায় এমনকি হেঁটে কর্মস্থলে ছুটছেন। এসব পরিবহনে আদায় করা হচ্ছে গলা কাটা ভাড়া।
কারখানার নিজস্ব ও ভাড়া করা বাসে ঠাসাঠাসি করে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। এতে বিঘিœত হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। তাতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে-এমন অভিমত ব্যক্ত করে নগর ট্রাফিক বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, ইপিজেড, কলকারখানা খোলা রাখায় এসব এলাকার গণপরিবহনও সচল রাখা দরকার ছিলো। তাহলে এমন পরিস্থিতি এড়ানো যেত।
চট্টগ্রাম বন্দর সচল। এর সাথে সচল কাস্টম হাউসসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান। আমদানি-রফতানি পণ্য ও মালামাল পরিবহন খাতও সচল রয়েছে। সীমিত আকারে খেলা ব্যাংক। সচল আছে জরুরি সেবার খাত। কিন্তু গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বিপুল সংখ্যক মানুষকে নিত্য দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কর্মী ইমতিয়াজ রাব্বি বলেন, প্রতিদিন ডকুমেন্ট নিয়ে মহানগরী এবং মহানগরীর বাইরে বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোতে যেতে হয়। কিন্তু গণপরিবহন না থাকায় আমরা বিপাকে পড়েছি। কাজের ক্ষেত্রে আর্থিক খরচ এবং সময় দুটোই বাড়ছে।
গণপরিবহনের পাশাপাশি সরকার মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন বন্ধ ঘোষণা করেছে। তবে অনেকে এই ঘোষণা মানছে না। পেটের দায়ে বাইক নিয়ে রাস্তায় নামছেন যুবকেরা। আছে পুলিশের মামলা দেওয়ার ভয় তবুও জীবিকার তাগিদে তারা সড়কে।
বাইকচালক বাবলু জানান, নিষেধাজ্ঞার পরও রাস্তায় নেমেছি। এছাড়া উপায় নেই। আমার একজনের আয়ে গোটা পরিবার চলে। বসে থাকলে সবাইকে না খেয়ে মরতে হবে।
কোন কোন রুটে গণপরিবহনও চলছে সীমিত আকারে। গাড়ি চালকেরা বলছেন, পেটের দায়ে আর যাত্রীদের দুর্ভোগ দেখেই তারা রাস্তায় নামছেন। তারা দাবি করেন স্বাস্থ্যবিধি মেনেই যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে।
সরকারি নির্দেশনা মেনেই নগরীর মার্কেট, বিপণী কেন্দ্র ও শপিং মল বন্ধ রয়েছে। তবে প্রথমদিন হাজার হাজার ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারী রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন। তাদের দাবি স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দোকান পাট খুলে দেওয়া হোক। তা না হলে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। ঈদ সামনে রেখে তারা পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন। মালামাল কিনেছেন। ব্যবসা বন্ধ থাকলে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। কর্মচারীদের ছাটাই করতে হবে।
গত বছরের যে ক্ষতি হয়েছে তা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টার শুরুতে এমন বিধিনিষেধে তারা রীতিমত দিশেহারা। মঙ্গলবারও একই দাবিতে নগরীর টেরিবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসায়ীদের সমাবেশে করার কথা রয়েছে।
নগরীর কাঁচা বাজারগুলো খোলা রয়েছে। হোটেল রেস্তরাঁ সীমিত আকারে খোলা। হোটেলে তৈরী করা খাবার বাসায় নিয়ে যাচ্ছে ভোক্তারা।
লকডাউন নিশ্চিতে মাঠে আছে প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের বিশটি টিম মাঠে সক্রিয়। তারা নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। লকডাউনের মধ্যেও মাস্ক ছাড়া লোকজনকে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে। এমন অনেককে জরিমানা করা হয়েছে। আছে অকারণ আড্ডাবাজি, ভিড়। পাড়ায় মহল্লায় ভিড় জটলা বন্ধেও সক্রিয় রয়েছে পুলিশ।
তবে লকডাউনের কারণে জনমনে কিছুটা হলেও স্বস্থি এসেছে। কারণ কঠোর বিধিনিষেধের কারণে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা যাচ্ছে। গণপরিবহন আর পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় ভিড় জটলাও নেই। এতে সংক্রমণের হার কমে আসবে এমন প্রত্যাশা অনেকের।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট প্রফেসর ডা. আবদুর রব বলেন, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা গেলে সংক্রমণের হারও কমে আসবে এটা স্বাভাবিক। সরকারের বিধিনিষেধ কতটুকু কার্যকর হচ্ছে এবং আমাদের ব্যক্তিগত আচরণ কতটুকু পরিবর্তন হচ্ছে তার উপরও অনেক কিছু নির্ভর করছে। তবে সংক্রমণ এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ মেনে চলতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ