পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আমাদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কাজে লাগে বাঁশ। বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলেই বাঁশ পাওয়া যায়। অতিপ্রয়োজনীয় এই বাঁশ বাড়ির আশপাশে বা পেছনের জঙ্গলে বড় অযতœ আর অবহেলায় বেড়ে ওঠে। দুর্যোগ প্রতিরোধী, জলবায়ুসহিষ্ণু, ভ‚মিক্ষয় রোধী এবং পরিবেশের বন্ধু হিসেবে পরিচিত এই বাঁশ দিন দিন অনেক কমে যাচ্ছে। এতে বাঁশ-বেত দিয়ে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্পের উৎপাদনও কমছে। অথচ এই বাঁশ শিল্পের রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। অবহেলায় বেড়ে ওঠা বাঁশের প্রতি একটু নজর দিলে এ থেকে বছরে কোটি কোটি ডলার আয় হতে পারে। মধ্য আমেরিকার ক্যারিবীয় দ্বীপরাষ্ট্র জ্যামাইকা টেকসই বাঁশ উৎপাদন ও বিপণনের মাধ্যমে করোনায় বিপর্যস্ত তাদের অর্থনীতিকে পুনর্গঠন করতে সক্ষম হয়েছে। কাঠের বিকল্প হিসাবে বাঁশের সজ্জা এবং অন্যান্য সরঞ্জাম তৈরি করে দেশটি ইতোমধ্যে বছরে ১.৫ মিলিয়ন ডলার আয় করছে। আগামী এক দুই বছরের মধ্যে এ আয় তিনগুণ থেকে চারগুণে পৌঁছবে। এ ছাড়া চীনও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাঁশ ও বাঁশজাত পণ্য রফতানি করে বিপুল অর্থ আয় করছে। বাঁশের ফার্নিচার ও আসবাবপত্র পরিবেশবান্ধব।
বাংলাদেশে বাঁশের তৈরি নিত্যব্যবহার্য বিভিন্ন হস্তশিল্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। উত্তরা ইপিজেডে তৈরি হচ্ছে বাঁশের কফিন, যা রফতানি হচ্ছে ইউরোপে। রফতানি হচ্ছে বাঁশের বাঁশি। কাগজ তৈরি হচ্ছে বাঁশ দিয়ে। বাঁশের তৈরি পণ্য পরিবেশবান্ধব হিসেবে বিশ্বজুড়ে স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই টেকসই বাঁশ উৎপাদনের মাধ্যমে কাঠের বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করে এগুলো রফতানির মাধ্য বছরে কোটি কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। টেকসই বাঁশ দিয়ে তৈরি আসবাবপত্র সহজে ঘুণে ধরে না। এটা কাঠের চেয়ে অনেক টেকসই এবং সুন্দর। এর বিকাশের জন্য প্রয়োজন টেকসই বাঁশের উদ্ভাবন এবং এর বাণিজ্যিক চাষাবাদ। দেশে বাঁশ সংরক্ষণ ও গবেষণার জন্য একটি গবেষণা ইনস্টিটিউট রয়েছে। তারপরও সম্ভাবনাময় বাঁশ শিল্পের আশানুরূপ বিকাশ ঘটছে না। এর জন্য তাদের অবহেলা ও উদাসীনতাই দায়ী বলে অনেকে মনে করেন।
বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) বাঁশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে নিয়মিত গবেষণা করছে। প্রতিষ্ঠানটি ৩৩ জাতের বাঁশও সংরক্ষণ করেছে চট্টগ্রামের ষোলশহরে ইনস্টিটিউটের বাঁশ উদ্যানে। তাদের দাবি এসব বাঁশ সারা দেশে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। তবে বাস্তবে এ চিত্র দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলেই দেখা যায় না। বিএফআরআই কিছু জাতের বাঁশ সংরক্ষণ করলেও চাষি পর্যায়ে এর উৎপাদনের বিষয়ে তাদের কোনো ভ‚মিকাই নেই। এমনকি সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরেরও এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেই।
বিএফআরআই এর পরিচালক ড. মো: মাসুদুর রহমান গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, বাঁশ নিয়ে আমাদের বিভিন্ন গবেষণা অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে আমরা নতুন নতুন প্রজাতির বাঁশ উদ্ভাবন করেছি। বাঁশ যেমন পরিবেশবান্ধব, তেমনি এটি অত্যন্ত অর্থকরীও বটে। আমরা গাছের ওপর চাপ কমানোর জন্য বাঁশের তৈরি ফার্নিচার প্রক্রিয়াজাত করছি। দীর্ঘস্থায়ী ও দৃষ্টিনন্দন এসব ফার্নিচার বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। টেকসই বাঁশ উৎপাদন ও অন্যান্য বিষয়ে আমাদের আলাদা একটি প্রকল্পও রয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রকল্প পরিচালক বলতে পারবেন।
উসাইন বোল্ট বা বব মারলেদের দেশ জ্যামাইকার অর্থনীতি মূলত পর্যটন নির্ভর। দেশটির পর্যটন সেক্টর জিডিপির প্রায় ৩৫ শতাংশ আয় করে। তবে করোনা মহামারিজনিত কারণে ২০২০ সালে সুখী এই দেশটির অর্থনীতিতে ব্যাপক বিপর্যয় নেমে আসে। তবে সরকার টেকসই বাঁশ উদ্ভাবন ও এর বাণিজ্যিক উৎপাদনের মাধ্যমে অর্থনীতিকে পনর্গঠনে সক্ষম হয়েছে। এক সময় চিনি উৎপাদনের জন্য দেশটিতে ব্যাপক আখ চাষ হতো। এখন সেব আখ ক্ষেত পরিত্যাক্ত। সরকার উদ্যোগ নিয়ে সে সব আখ ক্ষেতে টেকসই বাঁশ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেছে এবং তাতে সফল হয়েছে। জ্যামাইকার কৃষি ও মৎস্যমন্ত্রী ফ্লয়েড গ্রিন দাবি করেছেন, টেকসই বাঁশ চাষের এই প্রকল্পটি পুরো দেশজুড়ে ছড়িয়ে দেবে এবং এতে কৃষকদের জীবনের আরও ব্যাপক উন্নতি হবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এই কৃষি-শিল্পের এই বৈচিত্র্যকে কাজে লাগিয়ে আরও বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা তারা অর্জন করতে সক্ষম হবে। বাংলাদেশও টেকসই বাঁশ উদ্ভাবন করে এবং এর বাণিজ্যিক চাষাবাদের মাধ্যমে অর্থনীতিতে বিপ্লব ঘটাতে পারে।
নতুন নতুন বাঁশ উদ্ভাবন ও সংরক্ষণের জন্য নীলফামারিতে রয়েছে আঞ্চলিক বাঁশ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের কাজ আগামী ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে করোনামহামারির কারণে গত বছর থেকে এ প্রকল্পের কাজ স্থাবর হয়ে রয়েছে। এ জন্য সময় বাড়ানোর আবেদনও করা হয়েছে। এ প্রকল্পের পরিচালক ড. রফিকুল হায়দার গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের এ প্রকল্প থেকে নতুন প্রজাতির বাঁশ উদ্ভাবন করা হচ্ছে এবং সেগুলো চাষের জন্য প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। তবে করোনার কারণে এখন বন্ধ রয়েছে। কাঠের বিকল্প হিসাবে বাঁশ দিয়ে আমরাও নানান ধরনের সজ্জার আসবাবপত্র তৈরি করছি। তবে এটিকে আরও ব্যাপকভাবে করতে পারলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। তিনি আরও বলেন, আমাদের কাজ শুধু গবেষণা করা। এর বাস্তবায়ন করা আমাদের কাজ নয়।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) গেøাবাল ব্যাম্বু রিসোর্সেস এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, জীবনধারণের নানা কাজে প্রয়োজনীয় উদ্ভিদ বাঁশের প্রজাতি-বৈচিত্র্যের দিক থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীতে অষ্টম। বাংলাদেশে ৩৩ প্রজাতির বাঁশ রয়েছে। ৫০০ প্রজাতির বাঁশ নিয়ে বিশ্বে প্রথম অবস্থানে রয়েছে চীন। ২৩২ প্রজাতি নিয়ে ব্রাজিল রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে। ১৩৯ প্রজাতি নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে জাপান।
জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ মোকাবিলা ও ভ‚মিক্ষয় রোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখে বাঁশঝাড়। এটি দ্রæত বর্ধনশীল একটি উদ্ভিদ। কম বিনিয়োগে বাঁশ চাষে বেশি লাভ হয়। জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে এই গাছ। জলবায়ুসহিষ্ণু ও দেশের আবহাওয়া উপযোগী এসব বাঁশ পাহাড়ধস, ভ‚মিক্ষয় ও নদীভাঙন রোধে কাজ করে। জাপানে নদীভাঙন রোধ ও বাঁধ রক্ষায় বাঁশ ব্যবহার বাধ্যতামূলক।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলর সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল ইনকিলাবকে বলেন, বাঁশ অন্যান্য গাছপালার চেয়ে বেশি পরিমাণে অক্সিজেন উৎপন্ন করে এবং বেশি মাত্রায় কার্বন ডাই-অক্সসাইড নেয়। নদীভাঙন ও ভ‚মিক্ষয় রোধে বাঁশের রয়েছে বিশাল ক্ষমতা। পরিবেশের বন্ধু এই বাঁশ চাষে আমাদের দেশের কৃষকদের কোনো আগ্রহ নেই। বাঁশ চাষে লাভ বেশি। সরকার এ ব্যাপারে যথাযথ কোনো উদ্যোগও গ্রহণ করছে না।
বিএফআরআই বাঁশের নতুন নতুন প্রজাতি উদ্ভাবন করছে। এ প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ‘বাঁশের সংগ্রহশালা’। ৩৩ প্রজাতির বাঁশ নিয়ে গঠে ওঠা এই বিশাল সংগ্রহশালায় জলবায়ুসহিষ্ণু আরও ৬টি নতুন প্রজাতির বাঁশের জাত উদ্ভাবনে কাজ করছে বিএফআরআই। বাঁশের এই সংগ্রহশালায় গ্রামীণ ও পাহাড়ি বাঁশ মিলিয়ে মোট ৩৩ প্রজাতির বাঁশ রয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি প্রজাতি গ্রামীণ এবং ৭টি পাহাড়ি বাঁশ। এই ৩৩ প্রজাতি হলো- বরাক, কাঁটা, বিষকাঁটা, মিরতিঙ্গা, বেথুয়া, কনক কাইচ, তেঁতুয়া, চৈই, মাকলা বা মিতিঙ্গা, ফারুয়া, করজবা, মিরতিঙ্গা, বাইজ্জ্যা, স্বর্ণ, ঘটি, হেজ, ব্রান্ডিসি, ভুদুম, পেঁচা, ওরা, মেমব্রা, লাঠি, কালি, টেন্ডু, কালা, লতা, মুলী, ডলু, থাই, রেঙগুন, তল্লা প্রজাতি, ওয়াপ্পি এবং চায়না প্রজাতি। ঝোপঝাঁড়ে থাকলেও বাঁশের রয়েছে অনেক গুণ। নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় উদ্ভিদটি। এর ফলনও করা যায় যত্রতত্র।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।