পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাঁশ-বেত শিল্প বাঙালি সংস্কৃতির একটি বড় অংশ। পরিকল্পিত উদ্যোগের অভাবে বিলুপ্ত হতে চলেছে পার্বত্য খাগড়াছড়ির বাঁশ শিল্প। এক সময়ে গ্রামের লোকজন বাঁশ দিয়ে ঘর ও ঘরের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করতো। আর এসব জিনিসপত্রের কদরও ছিল। একসময় গ্রামের ঘরে ঘরে বাঁশের তৈরি জিনিসের দেখা মিললেও এখন সে জায়গা নিয়েছে প্লাস্টিক পণ্য।
প্রয়োজনীয় বাঁশের অভাব ও উপকরণের মূল্য বৃদ্ধিসহ প্লাস্টিক পণ্যের সহজলভ্যতায় বাঁশ শিল্প বিলুপ্তির পথে। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রামীণ পল্লীতে বাঁশের চটা দিয়ে চাটাই, কুলা, ডালা, চাঙারি, টুকরি, ওড়া, চালুনি, মাছ রাখার খালই, ঝুড়ি ও হাঁস-মুরগির খাঁচাসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা হতো। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এ কাজে সামিল হতেন।
সাপ্তাহিক হাটবারে এমনকি বাড়ি বাড়ি ফেরি করে এসব বাঁশ-বেতের জিনিস বিক্রি করা হতো। বর্তমানে এমন দৃশ্য খুব একটা দেখা যায় না। ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্পের কারিগররা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকেই আবার এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
একসময় খাগড়াছড়ির বিভিন্ন জনপদে বড় বড় বাঁশ বাগান দেখা গেলেও এখন আর চোখে পড়ে না। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, পানছড়ি ও মাটিরাঙ্গার পাহাড়ি টিলায় একসময় বিভিন্ন জাতের বাঁশ জন্মাতো। সেই বাঁশ দিয়েই বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতো স্থানীয়রা। নির্বিচারে পাহাড় কাটায় বাঁশের বংশ বিস্তার কমে গেছে।
পাহাড়ের জুম চাষিদের প্রধান উপকরণ হিসেবে বাঁশ-বেতের তৈরি জিনিসপত্র এখনো টিকে থাকলেও বর্তমানে তা প্লাস্টিকের সহজলভ্যতার কারণে সেখানে কমে আসছে। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা আদর্শ গ্রামের বাঁশ শিল্প কারিগর মো. রহমত আলী বলেন, বাঁশের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র এখন আর আগের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে না। তিনি নিজেই বাঁশ ও বেতের তৈরি বিভিন্ন পণ্য প্রস্তুত করে হাটবাজারে বিক্রি করতে আসেন।
তিনি আরও জানান, হাটবাজারে কিছুটা বেচাকেনা হলেও তেমন ক্রেতা নেই। অধিকাংশ ক্রেতা জুমচাষি ও কৃষি জমিতে যারা কাজ করেন তারা কিনে নিয়ে যান। তবে তুলনামূলকভাবে বিক্রি হয় না। প্লাস্টিকের সহজলভ্যতার কারণে হয়তো একবারে বাঁশ-বেত শিল্প হারিয়ে যাবে।
খাগড়াছড়ি ছাড়াও রাঙামাটি জেলায় জীবিকার তাগিদে বাঁশ ও বেতের তৈরি বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র তৈরি করে কারিগররা বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে যান। তবে দাম ও ক্রেতা না পাওয়ায় অনেকে এই পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশার উপর নির্ভরশীল হয়েছেন। তবুও মাঝেমধ্যে জুমচাষি ও কৃষি কাজে ব্যবহার হয় বলে হাটবাজারগুলোতে দেখা মিলে এসব জিনিসপত্র।
বাঁশ শিল্পের কারিগর মো. দুলাল মিয়া, আয়েশা আক্তার ও রহিমা বেগম বলেন, কর্মসংস্থান সঙ্কুচিত হওয়ায় এখন অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। শত প্রতিক‚লতার মধ্যেও তারা পুরনো পেশা ধরে রাখার জন্য সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করছেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় পুঁজি আর উপকরণের অভাবে সে চেষ্টা থমকে গেছে।
একসময় প্রত্যেক বাড়িতেই বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের ব্যবহার ছিল। চাহিদাও ছিল ব্যাপক। বর্তমানে প্লাস্টিক পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়ছে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য বাঁশ-বেত শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।