Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মাওলানা মামুনুল হককে হেনস্তাকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে- হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০২১, ১০:৩২ পিএম

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ঢাকাস্থ কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের জরুরি বৈঠকে বলেছেন, হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতা মাওলানা মামুনুল হক গত ৩ এপ্রিল তার স্ত্রীকে নিয়ে সোনারগাঁও রির্সোটে গিয়ে ছিলেন। ইসলামী শরিয়তের আলোকে তার বিবাহ পরিপূর্ণ শুদ্ধ মর্মে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। এ নিয়ে বিভ্রাতির কোনো অবকাশ নেই। দেশের যে কোনো নাগরিক তার স্ত্রী-পরিবার নিয়ে যে কোনো স্থানে যাওয়ার অধিকার রাখেন। কিন্তু মাওলানা মামুনুল হকের মত পরিচিত ও সম্মানিত ব্যক্তির উপর সন্ত্রাসীরা যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, আমরা তার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি এবং অভিযুক্তদেরকে বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি। জাতীয় সংসদে একজন নাগরিকের ব্যক্তিগত বিষয়কে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, এটা জনগণ কখনোই আশা করেনি। আমরা এ বক্তব্য প্রত্যাহার করার আহবান জানাই। আজ সোমবার দুপুরে মোহাম্মদপুরস্থ জামিয়া রাহমানিয়ায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুরের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেছেন, গত ২৬, ২৭, ২৮ মার্চ বাইতুল মোকাররম, হাটহাজারী, বি-বাড়িয়া, মুন্সিগঞ্জসহ সারাদেশে হেফাজত কর্মী ও প্রতিবাদী মানুষের উপর হামলা করা হয়েছে। এতে বি-বাড়িয়া ও হাটহাজারীতে ২০ জন শাহাদাৎ বরণ করেছে। এসব হত্যাকান্ড ও হামলার বিষয়ে বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দোষীদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে আমাদের অসংখ্য কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। হেফাজত নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় হয়রানি এবং মাদরাসা সমূহে হামলা ও হায়রানির ঘটনা ঘটছে, তা বন্ধ করতে হবে। শহিদ পরিবার ও আহতদের খোঁজ খবর নিতে হেফাজতের কেন্দ্রের পক্ষ থেকে একটি টিম শিগগিরই বি-বাড়িয়া ও হাটহাজারীতে সফর করবে এবং হতাহতের একটি প্রতিবেদন তৈরি করবেন।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেছেন, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদীখানের নিমতলীতে গত হরতালের দিনে সরকার দলীয় ক্যাডার ও পুলিশ বাহিনী যে তান্ডব চালিয়েছে তা বর্ণনাতীত। হেফজাতে ইসলামের নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল হামিদ মধুপুরীকে গুলি করে আহত করা হয়েছে। তার পরেও সেখানকার স্থানীয় জনগণকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে আগামী ৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার মুন্সিগঞ্জ কুচিয়ামারাতে হেফাজতে ইসলামের উদ্যোগে দেশব্যাপী হত্যা ও হামলা-মামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এ সমাবেশ সফল করার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানানো হয়।

উক্ত সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, হেফজাতে ইসলাম বাংলাদেশ এর মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম, উপদেষ্টা মাওলানা আবুল কালাম, নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল আউয়াল, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মাওলানা মাহফজুল হক, ড.অধ্যাপক আহমদ আব্দুল কাদের, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমী, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, সহকারী মহাসচিব, মাওলানা খুরশিদ আলম কাসেমী, মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, মাওলানা হাসান জামিল, মাওলানা জসিম উদ্দীন, মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, মাওলানা মুসা বিন ইযহার, মাওলানা মুনির হোসাইন কাসেমী, আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, ফয়সাল আহমদ, মাওলানা জাকির হোসাইন কাসেমী, মাওলানা গাজী ইয়াকুব, ঢাকা মহানগর সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুর রহমান হেলাল ও মাওলানা ফজলুর রহমান।

মধুপুরে মাওলানা মামুনুল হক : গত হরতালের দিন সিরাজদিখানের নিমতলীতে পুলিশের গুলিতে আহত মধুপুর পীর আল্লামা আব্দুল হামিদকে দেখতে যান মাওলানা মামুনুল হক। তিনি গত রোববার মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের মধুপুর মাদরাসায় গিয়ে মধুপুর পীর সাহেবের চিকিৎসার খোঁজ খবর নেই। এসময়ে মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীবসহ শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম উপস্থিত ছিলেন। মাওলানা মামুনুল হক মধুপুর পীর সাহেবের ওপর ন্যাক্কার জনক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতাদের পরামর্শ নিয়ে সিরাজদিখানে বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে কর্মসূচি দেয়া হবে। তিনি বলেন, গত শনিবার সোনারগাঁওয়ে যুব লীগ ও ছাত্র লীগের কর্মীরা আমার ও আমার স্ত্রীর সাথে দুর্ব্যবহার করেছে। কিছু মানুষ যুব লীগ ছাত্র লীগ, আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশকে কলঙ্কিত করছে। এই কুচক্রি মহলের হাত থেকে বাংলাদেশকে বাঁচাতে হবে।

এদিকে, মাওলানা মামুনুল হককে সোনারগাঁওয়ে হেনস্তা করার প্রতিবাদে বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব : হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ও তার স্ত্রীকে হেনস্তা করার প্রতিবাদ জানিয়েছেন সংগঠনটির মহাসচিব আল্লামা নুরুল ইসলাম। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সোনারগাঁও-এ হেফাজতের যুগ্মমহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ও তার স্ত্রীকে যেভাবে সন্ত্রাসীরা হেনস্তা করেছে, তা জাহেলিয়াতের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। দেশের একজন প্রসিদ্ধ আলেম ও শাইখুল হাদীস এবং তার বিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে যে ধরণের নোংরামি করেছে সন্ত্রাসীরা, তা দেশবাসীকে স্তব্দ করে দিয়েছে। মাওলানা মামুনুল হক অপরচিত অখ্যাত কেউ নন। একজন সম্মানিত আলেমকে যেভাবে অপদস্ত করা হয়েছে, তা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। আল্লামা নুরুল ইসলাম বলেন, কাউকে অপবাদ দেয়া বড় গুনাহের কাজ। আর একজন আলেমকে অপবাদ দেয়া তো অমার্জনীয় অপরাধ। কারণ আলেম-উলামারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওয়ারিস। প্রশাসনকে অবিলম্বে দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। এমন মানহানিকর ঘটনা যেনো পুনরায় কেউ ঘটাতে না পারে, তার জন্য অপরাধীদের দ্রæত ও দৃষ্টাস্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন হেফাজত মহাসচিব। তিনি বলেন, মাওলানা মামুনুল হক সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে তার স্ত্রীকে নিয়ে সেখানে অবস্থান করছিলেন। মাওলানা মামুনুল হককে হেনস্তার প্রতিবাদে আরো যেসব নেতৃবৃন্দ তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন, তারা হচ্ছেন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব শায়খুল হাদিস মাওলানা ড. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, সম্মিলিত ইসলামী এক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা জাফরুল্লাহ খান ও মহাসচিব অ্যাডভোকেট খায়রুল আহসান ও বাংলাদেশ জনসেবা আন্দোলনের চেয়ারম্যান মুফতি ফখরুল ইসলাম ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হেফাজতে ইসলাম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ