Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পরিবহন সংকটে মহাদুর্ভোগ: সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষোভ

আবদুল মোমিন | প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০২১, ৫:৩৭ পিএম

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ও সংক্রমণ প্রতিরোধে বাসসহ সব গণপরিবহনে অর্ধেক সিট খালি রেখে যাত্রী তুলতে বলা হয়েছে। এতে ভাড়া বেড়েছে ৬০ শতাংশ। এই অবস্থায় পরিবহন সংকটে মহাদুর্ভোগে পড়া অফিসযাত্রীরা ব্যাপক ক্ষোভ জানিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

বুধবার থেকে উল্লিখিত নির্দেশনা কার্যকর করার পর থেকেই চরম ভোগান্তিতে পড়তে দেখা যায় যাত্রীদের। পথাচরীদের এই দুর্ভোগের বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয় ফেসবুকে। ৬০% শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির পর প্রথম দুদিনে নানা তীক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে পোস্ট করেছেন অনেকেই।

ভাইরাল ছবিগুলোতে দেখা যায়, সকাল থেকেই রাস্তায় ভিড় করেছেন অফিসগামী মানুষ। রাজধানীর বেশির ভাগ বাস স্টপেজগুলোতে বেশিরভাগ গণপরিবহন অর্ধেক সিটে যাত্রী নেয়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন কর্মজীবী নারীরা।

যাত্রীরা ফেসবুকে ক্ষোভ জানিয়ে অভিযোগ করেন, বাসে অর্ধেক লোক নেয়ার কথা থাকলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে দাঁড়িয়েও লোক নেয়া হচ্ছে। এদিকে, রাইড শেয়ারিংয়ে যাত্রী পরিবহনেও নিষেধজ্ঞা দেয়ায় ভোগান্তি পৌঁছেছে চরমে। অন্যদিকে, বেশিরভাগ অফিস ও প্রতিষ্ঠান এখনও অর্ধেক জনবলকে ছুটি দেয়নি।

পরিবহন সংকটে জনদুর্ভোগ নিয়ে জৈষ্ঠ্য সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক মেহেদী হাসান পলাশ এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘‘রাজধানীতে এমনিতেই প্রবল পরিবহন সংকট। তার উপরে করোনার কারণে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহনগুলো চলাচল শুরু করায় এই সংকট আরো তীব্র হয়েছে। অফিস-আদালত সব খোলা থাকায় মানুষকে ঠিকই বাইরে যেতে হচ্ছে, কিন্তু যানবাহন পাচ্ছে না। ফলে বাস স্টপেজগুলোতে ভয়াবহ ভিড় লেগে আছে। কোথাও একটি বাস এসে থামলে তাতে ওঠার জন্য মানুষের মধ্যে যে হুড়োহুড়ি, ঠেলাঠেলি শুরু হয়েছে তাতে সামাজিক দূরত্বের আসল লক্ষ্য পুরোপুরি মাঠে মারা যাচ্ছে। উল্টো জনগণের ৬০% অতিরিক্ত পকেট কাটা যাচ্ছে। এইরকম ঠেলাঠেলি, হুড়োহুড়ি, পাড়াপাড়ি করে বাসে উঠে এক সিটে বসে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার আইডিয়া মূলত ৬০% অতিরিক্ত টাকা আক্কেল সেলামি দেয়ার নামান্তর।’’

ইলিয়াস মোঃ আকাশ লিখেছেন, ‘‘এমনিতেই মানুষ দ্রব্য মূল্য নিয়ে কষ্টে আছে। সেখানে এই বাড়া বৃদ্ধি বাড়াবাড়ি। অর্ধেক যাত্রী নেয়া কখনো সম্ভব নয় শুধুমাত্র দূরপাল্লার গাড়ি ছাড়া। সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত গুলো সরকারের জন্যই মারাত্মক হচ্ছে।’’

মহসিন হক হিমেল লিখেছেন, ‘‘অফিস আদালত, দোকানপাঠ সব গণহারে খোলা রেখে এধরণের সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হয়নি। রাস্তায় দেখলাম প্রচুর মানুষ বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছে।এই সিদ্ধান্ত কতটুকু যুক্তিসংগত আমি ভেবে পাইনা। সরকারই বই মেলা চালাচ্ছে, এদিকে আবার সরকারই জনসমাগম নিষিদ্ধ করছে। আসলে সরকারই জানেনা তার করণীয় কি হবে!’’

ভোগান্তি শিকার অফিসযাত্রী সুখী আকতার লিখেছেন, ‘‘আমি একজন কর্মজীবি নারী, চল্লিশ মিনিট দাড়িয়ে থেকেও কোন বাসে উঠতে পারিনি, পরে বাধ্য হয়ে থ্রি হুইলারে করে হাইওয়ে রাস্তায় ঝুঁকি নিয়ে কোনরকম কর্মস্থলে পৌঁছেছি,
মানসিক আর আর্থিক বিড়ম্বনার শিকার তো আছেই, অথচ পাবলিক প্লেস উন্মুক্ত সবাই যে যার মতো ঘুরছে, এভাবে রোজ কিভাবে চলবো জানিনা।’’

এবিএম মারুফের মন্তব্য, ‘‘বাসের সংখ্যা বাড়েনি, কর্মমুখী মানুষের সংখ্যা কমেনি, কমে গেল বাসের যাত্রী ধারণক্ষমতা, বেড়ে গেল ভাড়া। ফলাফল- অনেক মানুষ বাসে উঠতে পারবে না আর সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে না। সরকারি নির্দেশনার অর্ধেক মানলে, বাকি অর্ধেক না মানলে জনগণের ভোগান্তিই হবে। সমন্বয়হীনতার শেষ নাই!’’

জহির রাইহান লিখেছেন, ‘‘রাস্তায় মানুষ দাঁড়ায় আছে। বাসে উঠা নিয়ে ভোগান্তি। উঠার পর সিটে বসা নিয়ে ভোগান্তি। বাসে মানুষ উঠায় নিচ্ছে কিন্তু উঠার পর 'দুই সিটে একজন' নীতিতে নতুন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তারপর বাকী যাত্রীরা বাড়তি ভাড়া দিতে আপত্তি জানাচ্ছে। ড্রাইভার বাস থামিয়ে হাঙ্গামা করতেছে ভাড়া আর যাত্রী নিয়ে। কি বাজে অবস্থা!’’

সুমন সরকার লিখেছেন, ‘‘সাভার থেকে কোন বাস না পাওয়ার পর অপেক্ষা করতে থাকলাম। একটি বাস পেলাম। ২ সিটে একজন। wife কে পিছনের সিটে দিলাম।ভাড়া দিলাম ৬০%। ভালই যাচ্ছিলাম। হেমায়েতপুর দেখি অনেক মানুষ রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে। হটাৎ সব মানুষ জোর করে গাড়ির ভিতর ওঠে গেল। সিট ত ভরেই গেল দাঁড়িয়ে থাকার মত জায়গাও ছিল না। তাহলে এই ভাড়া বাড়ানোর কোন মানে আছে?’’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ