পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পুনরায় বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গণপরিবহনে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। এই নির্দেশনার পর থেকে ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানীর বাসিন্দারা। তবে গণপরিবহন সংকট এবং সরকারের বাস ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক আটকিয়ে বিক্ষোভ করেছেন অফিসগামী সাধারণ যাত্রীরা।
জানা গেছে, গতকাল সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে রাজধানীর খিলক্ষেতে বিমানবন্দর সড়কের দুপাশে অবস্থান নেন কয়েকশত অফিসগামী যাত্রী। এ সময় সড়কের দুদিকেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বাস থেকে যাত্রীরা সড়কে নেমে এসে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। বিক্ষোভকারীদের দাবি, সকাল থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্টপেজে দাঁড়িয়ে থেকে বাসে উঠা যাচ্ছে না। বাসের দরজা বন্ধ। একদিনে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে অন্যদিকে শত চেষ্টা করেও বাসে সিট পাওয়া যাচ্ছে না। এতে দুর্ভোগের শেষ নেই। এর স্থায়ী সমাধান চাচ্ছেন যাত্রীরা।
যাত্রীরা বলেন, করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বিআরটিএ'র পক্ষ থেকে জানানো হয় বাসে অর্ধেক সিট খালি রেখে বাস চলাচল করতে হবে। সে কারণে পরিবহনগুলো উত্তরা কিংবা গাজীপুর বাস স্টপেজ থেকে যাত্রী উঠিয়ে বাসের গেট বন্ধ করে অন্য গন্তব্যের দিকে রওনা হয়। এতে করে রাস্তায় বাসের জন্য অপেক্ষমান থাকা যাত্রীরা চরম বিপাকে পড়েছে। সব বাস গেট বন্ধ করে চলাচল করছে। আমরা সকাল থেকে অপেক্ষা করেও কোনো বাসেই উঠতে পারছি না। এই কারণেই আমরা রাস্তায় অবরোধে বাধ্য হয়েছি।
এতে পুরো বিমানবন্দর সড়কে যানবাহনের দীর্ঘ জটলা তৈরি হয়। কুড়িল ফ্লাইওভার-বনানী আর অপরদিকে প্রায় উত্তরা পর্যন্ত সড়ক স্থবির হয়ে পড়ে। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধকারীরা সরে গেলেও সড়কে যানবাহনের তীব্র চাপ সৃষ্টি হয়েছে। খিলক্ষেত থানার ওসি মুন্সী ছাব্বীর আম্মদ জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে বাসগুলো অর্ধেক যাত্রীর বেশি তুলছে না। এর ফলে অফিসগামী মানুষরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও বাসে উঠতে পারছেন না। এতে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে খিলক্ষেত ওভার ব্রিজের নিচে রাস্তা বন্ধ করে অবস্থান নেন। এর মধ্যে পুলিশ বিক্ষুব্ধদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। প্রায় ২০ মিনিট পর বিক্ষুব্ধরা সরে গেলে সড়কে যান চলাচল শুরু হয় বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, গত বুধবার সকাল থেকে সারাদেশে ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়ায় অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে যাত্রী পরিবহন শুরু করেন পরিবহন মালিকরা। সরকারি নির্দেশনায় আগামী দুই সপ্তাহ এ ব্যবস্থাপনায় যানবাহন চলবে। এ দুই দিন সকাল থেকে কোনো পরিবহনে অর্ধেক যাত্রীর বেশি পরিবহন করতে তেমন একটা দেখা যায়নি। ফলে হঠাৎ করে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন শুরু হওয়ায় অফিসগামী মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন। এ সুযোগেই রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ অন্যান্য পরিবহনগুলো অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করছে।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে একটি ৫৩ আসনের পরিবহনে তারা কমপক্ষে ৭০ জন করে যাত্রী পরিবহন করতেন। প্রতিটি আসনে বসিয়ে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি দাঁড়িয়েও যাত্রী পরিবহন করা হতো। কিন্তু বুধবার থেকে সেই ৫৩ আসনের পরিবহনে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে ২৬ জন করে। পরিবহন সেবা অর্ধেকে নেমে আসলেও যাত্রী কমেনি।
রাজধানীর ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, মতিঝিল, বাংলামোটর, খিলগাঁও, বাসাবো, রাজারবাগ, ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলা, পল্টন, গুলিস্তান, কাকরাইল, শান্তিনগর, মৎস্যভবন, শাহবাগ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাসের জন্য রাস্তায় মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। বাসের থেকে যাত্রী বেশি। এ জন্য ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে অনেকেই। বিশেষ করে অফিসগামী যাত্রীরা বেশি ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। বাসে অর্ধেক যাত্রী নেয়ার কারণে ভোগান্তিতে পড়েন তারা।
বিমাননবন্দর এলাকার বাসিন্দা পলাশ মিয়া বলেন, তিনি বাংলামোটর এলাকায় একটি অফিসে চাকরি করেন। তাই প্রতিদিন বাসে করে অফিসে আসতে হয় তাকে। তিনি গতকালের অভিজ্ঞতায় সকাল সাতটায় বাস স্টপেজে এসে দাঁড়ান। কিন্তু প্রতিটি বাসই স্টপেজে আসার আগেই যাত্রীতে ভরপুর। দীর্ঘ চার ঘণ্টা অপেক্ষার পর তিনি একটি বাসে উঠতে পেরেছেন। তিনি আরো বলেন, অতীতে কখনও এমন দুর্ভোগে পড়িনি। সরকার সাধারণ মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে এভাবে গণপরিবহন পরিচালনা করার যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, তা অযৌক্তিক। সরকারের উচিত ছিল আগে প্রতিটি অফিস-আদালত এবং কর্মস্থলে অর্ধেক জনবল দিয়ে অফিস পরিচালনা নিশ্চিত করা।
এদিকে, গণপরিবহনে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ, ভাড়া নৈরাজ্য ও যাত্রী দুর্ভোগ বন্ধের দাবি জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ দাবি জানান।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, করোনা সংকটে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চালানোর জন্য বাসের ভাড়া ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হলেও দেশের অধিকাংশ গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। সিটি সার্ভিস ও শহরতলীর বাস, হিউম্যান হলার, অটোটেম্পুতে বর্ধিত ভাড়া নিয়ে সেই পুরনো কায়দায় গাদাগাদি করে যাত্রী বহন করা হচ্ছে। এতে কর্মজীবী, শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের সাধারণ লোকজন, কর্মহীন ও আয় কমে যাওয়া দেশের সাধারণ মানুষের যাতায়াত দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে।
এছাড়াও সব অফিস আদালত খোলা থাকায় অর্ধেক যাত্রী নিয়ে সিটি সার্ভিসের বাসগুলো চলাচলের ফলে রাস্তায় প্রতিটি বাস স্টপেজে শত-শত যাত্রী ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় অপেক্ষা করে গণপরিবহন পাচ্ছে না। এতে করে নারী, শিশু, অসুস্থ রোগী ও অফিসগামী যাত্রীরা অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়ছে। হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া বাড়তি ভাড়া আদায়কে কেন্দ্র করে প্রতিটি রুটে চলাচলকারী গণপরিবহনে যাত্রী-শ্রমিক বচসা, হাতাহাতি, মারামারি চলছে।
দেশের লকডাউন বা সাধারণ ছুটি ঘোষণা না করা হলে, যত সিট তত যাত্রী (বিআরটিএ নিবন্ধিত আসন অনুযায়ী) পদ্ধতিতে পূর্বের ভাড়ায় যাতায়াতের কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে যাত্রী পরিবহন, একই সাথে গণপরিবহনের বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার করে দেশের প্রতিটি রুটে বর্ধিত ভাড়া পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানায় যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।