Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

রাজধানীতে গণ পরিবহন সংকট, বাড়তি ভাড়া: সংঘাত-সংঘর্ষ, চরম দুর্ভোগ

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ এপ্রিল, ২০২১, ৯:২২ এএম

এমনিতে ঢাকা শহরে গণপরিবহণের সংকট। এর মধ্যে শুরু হয়ে গেলো করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। যার পরিপ্রেক্ষিতে যাত্রী পরিবহণে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। গণপরিবহনে মোট সিটের অর্ধেক যাত্রী নেয়া শুরু হয়েছে বুধবার থেকে৷ ফলে যাত্রীরা পড়েছেন মহা সংকটে৷ সময়মত অফিসে পৌঁছাতে রীতিমত যুদ্ধ করতে হচ্ছে। তবুও ঠিক সময়ে অফিসে যেতে পারছেন না। বিশেষ করে নারীদের অবস্থা করুন।

কাজে যেতে হবে বলে করোনা নিয়ে ভাবার সময় নেই, যে করে হোক বাস পেতে হবে৷ এ নিয়ে বুধবার সকাল থেকে পর্যন্ত ঢাকা ও ঢাকার বাইরে কয়েকটি জায়গার বাসের স্টাফদের সাথে যাত্রীদের সংঘর্ষ হয়েছে৷ সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অনেক মানুষকে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। আবার কারো কারো বাসায় ফিরতে গভীর রাতও হয়ে যায়।

সকালে আজিমপুর, কুড়িল বিশ্বরোড, ভিক্টোরিয়া পার্ক, যাত্রাবাড়ি ও মাওয়াসহ আরও কয়েকটি এলাকায় যাত্রীরা বাসে উঠতে না পারায় পরিবহন শ্রমিকদের সাথে হাতাহাতি ও মারামারি হয়েছে বলে জানান পরিবহন মালিকেরা৷ এমনকি বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা তাদের না নেয়ায় বাস আটকে দেয়া হয়৷ যাত্রীরা বলছেন, অফিসে যেতে হবে৷ সিট না থাকলেও নিতে হবে৷ পুলিশ পরে ওইসব এলাকায় সব যাত্রীকে বাসে উঠতে দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়৷

দুপুরে সরেজমিন কারওয়ান বাজারে গিয়ে একই পরিস্থিতি দেখা যায়৷ যাত্রী রুবেল মিয়া ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেও বাসে উঠতে পারছেন না৷ তিনি বলেন, ‘‘এখন দুই সিটে একজন যাত্রী নেয়ায় বাসের সিট অর্ধেক হয়ে গেছে৷ ফলে বাস যেখান থেকে ছাড়ে সেখান থেকেই যাত্রী পূর্ণ হয়ে যায়৷ এখন সব বাসই সিটিং সার্ভিস হয়ে গেছে৷ আর সিট যদি খালিও থাকে তাহলে অল্প দূরত্বের যাত্রী তার নিতে চায় না৷ ভাড়াও বেড়েছে শতকরা ৬০ ভাগ৷ তারও অতিরিক্ত তারা আদায় করছে৷’’

মোহাম্মদপুর- মতিঝিল স্টাফ কোয়ার্টার রুটে এখন জন প্রতি ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৭৫ টাকা৷ আগে ছিলো ৫০ টাকা৷ আর করোনা আগে ছিলো ৪০ টাকা৷ ওই রুটের একটি বাসের হেলপার এরশাদ মিয়া বলেন, ‘‘আজ সকাল থেকে যাত্রীদের সাথে ভাড়া নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে৷ আবার সিট পূর্ণ হওয়ার পর যাত্রীরা জোর করে বাসে উঠতে চাচ্ছেন৷ আমরা গেট বন্ধ করে রাখলেও ট্রাফিক সিগন্যালে জোর করে উঠতে চায় ৷ এনিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে আমাদের তর্কাতর্কি ও ঝামেলা হচ্ছে৷’’

কারওয়ান বাজার এলাকা থেকে দুপুরে বিভিন্ন রুটের যেসব বাস আসা যাওয়া করতে দেখা গেছে তার অধিকাংশেরই গেট ছিলো বন্ধ৷ ট্রাফিক সিগন্যাল না থাকলে তারা থামেনি৷ কারওয়ান বাজারে দুই নারী দুই ঘন্টা অপেক্ষা করেও বাসে উঠতে পারেননি৷ তারা জানান, ‘‘দুই-একটি বাসে সিট থাকলেও নারীদের সিট নেই বলে তাদের উঠতে দেয়া হয়নি৷’’ কিন্তু বাস্তবে বাসে উঠে দেখা যায় বাসগুলো নারীদের জন্য অর্ধেক আসন খালি রাখার নিয়ম মানছে না৷ তারা সিটিং বলে আগেই পুরুষ যাত্রী দিয়ে আস পূর্ণ করে আসছে৷

রুবেল আহমেদ নামে একজন যাত্রী জানান, ‘‘সিট খালি থাকলেও স্বল্প দূরত্বে যাওয়ার কথা বললে তারা যাত্রী তুলছেন না৷’’ তিনি বলেন, ‘‘আমি ফার্মগেট থেকে কারওয়ান বাজার আসলেও আমরা কাছ থেকে ভাড়া নেয়া হয়েছে ১৫ টাকা৷ বাস্তবে ভাড়া পাঁচ টাকা৷ বাসের কর্মচারীরা বলেন, তাদের ভাড়া হিসাব হয় ফার্মগেট থেকে বাংলা মটর৷ আগে কারওয়ান বাজার নামলেও একই ভাড়া৷’’ আরেকজন যাত্রী রাসেল আহমেদ জানান, ‘‘এখন বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ১০টাকা৷ এক কিলোমিটার গেলেও ১০টাকা, আধা কিলোমিটারও ১০ টাকা৷’’ একজন কন্ডাকটর এটা স্বীকার করে বলেন, ‘‘বাসে উঠলেই ১০ টাকা৷’’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ খোকন বলেন, ‘‘যাত্রীদের কাছ থেকে আগেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হত৷ আর এখন তার ওপরে আরো ৬০ ভাগ বড়তি ভাড়া তাদের জন্য চাপ হয়ে গেছে৷’’ তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ঢাকার মধ্যে বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৬০ পয়সা৷ এখন করোনার কারণে যাত্রী সিটের অর্ধেক নেয়ার কারণে ভাড়া ৬০ ভাগ বাড়ালে প্রতি কিলোমিটার হয় ২ টাকা ৪৬ পয়সা৷ উত্তর বাড্ডা থেকে গোলাপশাহ মাজারের দূরত্ব আট কিলোমিটারের চেয়ে কিছু কম৷ ৬০ ভাগ বাড়িয়ে ভাড়া হওয়া উচিত সর্বোচ্চ ২০ টাকা৷ কিন্তু নেয়া হচ্ছে ৩০ টাকা৷ কারণ তারা আগেই ভাড়া বাড়িয়েছে৷ এখন সেই বাড়তি ভাড়ার ওপর আবার বাড়িয়ে নিচ্ছে৷ ঢাকার বাইরেও একই অবস্থা বলে জানান তিনি৷

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতিরি সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ বলেন, ‘‘নিয়মের বাইরে ভাড়া না নেয়ার জন্য আমাদের কড়া নির্দেশনা আছে৷’’

তবে একজন পরিবহন মালিক বলেন, ‘‘ভাড়া একটু বেশি না নিলে আমরা গাড়ি চালাতে পারব না৷ এই নতুন নিয়মে আমরা তিন ভাগের দুইভাগ যাত্রী হারাচ্ছি৷ কারণ সরকার তো সিটের হিসাব করে ৬০ ভাগ ভাড়া বাড়িয়েছে৷ কিন্তু সিটের বাইরে আরও অনেক যাত্রী দাঁড়িয়ে যাতায়াত করেন৷ সেটাও তো আমাদের লস হচ্ছে৷ সেই হিসাব তো করা হচ্ছে না৷’’ ডয়চে ভেলে



 

Show all comments
  • Mejbah Mithu ১ এপ্রিল, ২০২১, ৬:৪৩ পিএম says : 0
    অভিজ্ঞতা বেশ চমৎকার। ৬০% ভাড়া বৃদ্ধি কার্যকর হইছে কারেন্টের মত। কিন্তু, অর্ধেক যাত্রী নেয়ার খবরটা মনে হয় ইভেলি মাধ্যমে পাঠানো হইছে তাই এখন ও বাস শ্রমিক কিংবা মালিক পক্ষ জানে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Elias Md Akash ১ এপ্রিল, ২০২১, ৬:৪৩ পিএম says : 0
    এমনিতেই মানুষ দ্রব্য মূল্য নিয়ে কষ্টে আছে। সেখানে এই বাড়া বৃদ্ধি বাড়াবাড়ি। অর্ধেক যাত্রী নেয়া কখনো সম্ভব নয় শুধুমাত্র দূরপাল্লার গাড়ি ছাড়া। সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত গুলো সরকারের জন্যই মারাত্মক হচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Johir Rayhan ১ এপ্রিল, ২০২১, ৬:৪৪ পিএম says : 0
    রাস্তায় মানুষ দাঁড়ায় আছে। বাসে উঠা নিয়ে ভোগান্তি। উঠার পর সিটে বসা নিয়ে ভোগান্তি। বাসে মানুষ উঠায় নিচ্ছে কিন্তু উঠার পর 'দুই সিটে একজন' নীতিতে নতুন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তারপর বাকী যাত্রীরা বাড়তি ভাড়া দিতে আপত্তি জানাচ্ছে। ড্রাইভার বাস থামিয়ে হাঙ্গামা করতেছে ভাড়া আর যাত্রী নিয়ে। কি বাজে অবস্থা!
    Total Reply(0) Reply
  • Sarif Mahmud ১ এপ্রিল, ২০২১, ৬:৪৪ পিএম says : 0
    করোনা কি শুধু বাসেই সীমাবদ্ধ? আর কত ভোগান্তি দিবেন আমাদের মত সাধারন জনগনকে। যেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা দরকার সেগুলো না করে সাধারন জনগনের প্রতি অবিচার আর কত করবেন মাননীয় মন্ত্রী।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ